মা হারা সোহানা ফিরে পেল বাবাকে
মায়ের মৃত্যুর তিন দিন পর চার বছরের শিশু সোহানা ফিরে পেল বাবাকে। গত শনিবার অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি শিশুটির মা তানজিলা সৌখিনকে অসুস্থ অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে চার বছরের ওই শিশুকেও রেখে যান তারা। ওই দিন রাতে তানজিলা সৌখিন মারা যান। এরপর শিশু সোহানাকে নিয়ে বিপাকে পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়ার সহায়তায় শিশুটির বাবাকে খুঁজে বের করা হয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসন সোহানাকে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করে।
আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শনিবার বিকালে শহরের দুধ বাজার এলাকায় শিশুসন্তানকে নিয়ে রাস্তায় অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন তানজিলা। স্থানীয়রা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে ওইদিন রাতেই তিনি মারা যান।
শিশুটির কোনো পরিচয় বা সঠিক ঠিকানা না পেয়ে ওই হাসপাতালের সেবিকা সাজেদা বেগমের কাছে রাখা হয় সোহানাকে। গত দুই দিন ধরে জেলা প্রশাসন বিভিন্ন স্থানে খোঁজ খবর করে শিশুটির বাবা ও আত্মীয়দের সন্ধান পায়।
মঙ্গলবার বিকালে শিশুটির বাবা নারায়গঞ্জের বন্দর থানা এলাকার বাসিন্দা এসএম সোহাগ ফরিদপুরে আসেন। এর আগেই সোহানা ও তার ভাই সোয়াতকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া ও শহর সমাজ সেবা কর্মকর্তা নুরুল হুদা দীর্ঘ সময় এসএম সোহাগ ও তার আত্মীয়দের সাথে কথা বলে পরিচয় নিশ্চিত হন। পরে শিশুটিকে বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এরাদুল হক, এনডিসি পারভেজ মল্লিক, সাংবাদিক পান্না বালা, নির্মলেন্দু চক্রবর্তী, হাসানউজ্জামন, মফিজুর রহমান শিপন, সাজ্জাদ বাবু, খায়রুজ্জামান সোহাগ, আলীমুজ্জামান রনিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় শিশু সোহানা ও সোয়াতের জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নতুন পোশাক এবং বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।
শিশুটির বাবা এসএম সোহাগ জানান, হয়রানিমূলক একটি মামলায় গত দেড় বছর কারাগারে থাকায় আমি স্ত্রী ও সন্তানদের কোনো খোঁজ নিতে পারিনি।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের ভাড়া করা বাসার সব মালামাল বিক্রি করে এক বছর সংসারের খরচ চালিয়েছেন। এরপর আমার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে তার বাবার বাড়ি ফরিদপুরে শিবরামপুরে চলে আসে। সেখান আশ্রয় না পেয়ে শহরে আসে কাজের সন্ধানে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সে মানবেতর জীবন কাটাতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার ছেলে সোয়াতকে মোটরসাইকেল গ্যারেজে কাজ দেয় মো. আজাদ নামের এক ব্যক্তি।
ব্লাস্ট ফরিদপুরের সমন্বয়কারী শিপ্রা গোস্বামী জানান, তানজিলা সৌখিন মৃত্যুর চার মাস আগে আমার কাছে এসেছিল তার চিকিৎসার টাকার সংস্থানের জন্য পরামর্শ চাইতে। তার বাবার বাড়ির প্রাপ্য সম্পদের হিস্যা চেয়ে আমরা নোটিশও করেছিলাম। একপর্যায়ে অসুস্থ তানজিলা সৌখিনকে আমরা ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে সে ফরিদপুরের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করতো।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, অসহায় শিশু সোহানার ঠিকানা পেতে আমরা বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার বাবার কাছে লিখিতভাবে মা হারা এই শিশুটিকে তুলে দেওয়া হয়।
(ঢাকাটাইমস/২৫এপ্রিল/প্রতিনিধি/ইএস/জেডএ)
মন্তব্য করুন