টঙ্গীতে কিশোরী উত্ত্যক্ত: ধরা পড়েনি প্রধান আসামিরা
গাজীপুরের টঙ্গীর শিলমুন আব্দুল হাকিম মাস্টার উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রীকে উক্ত্যক্ত ও মারধরের পর সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এই ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ বিরুদ্ধে প্রধান আসামিদেরকে গ্রেপ্তার করতে চাইছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার টঙ্গী মডেল থানায় সাত বখাটের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করেন ওই ছাত্রীর বাবা। এ ঘটনায় ইমন, সুজন ও সাগর নামের তিন জনকে গ্রেপ্তার করলেও মামলার প্রধান আসামিদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। অথচ আসামি অনিক, শিহাব ও ফাহাদ প্রকাশ্যেই আছে এলাকায়।
মামলার পর থেকেই স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ওই ছাত্রীর বাবাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্কুলের অভিভাবক ও স্থানীয় এলাকাবাসী।
এর আগে ছাত্রীকে উক্ত্যক্তের দৃশ্য মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে আপলোড দিলে ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে গেলে নড়েচড়ে বসে স্কুল কমিটি ও প্রশাসন। এ ঘটনায় পরদিন স্কুলে সংশ্লিষ্ট ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক ও স্কুল কমিটির সভাপতি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিনের উপস্থিতিতে ওই বখাটেদের বেত্রাঘাতের শাস্তি দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন হেলাল প্রশাসনকে পাশ কাটিয়ে নিজেই বিভিন্ন স্বার্থে আপস-মীমাংসা করে থাকেন। ছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের ঘটনাটিও তিনি সেভাবেই মীমাংসা করতে চেয়েছিলেন। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশ হলে সেটি আর করে উঠতে পারেননি।
স্কুলের বেশ কয়েকজন অভিভাবক ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, ববে ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তরা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সন্তান হওয়ায় এ ঘটনায় সুষ্ঠ বিচার হয়নি।
এই ঘটনায় প্রধান আসামি অনিক স্কুলের অভিভাবক সদস্য রুবি আক্তারের ছেলে এবং উক্ত্যক্তের দৃশ্য মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান মনিরের ছেলে দশম শ্রেণির ছাত্র শিহাব। পরে তাদের মধ্যে একজন এই ভিডিও ফেসবুকে আপলোড দিয়ে কয়েক ঘণ্টা পর তুলে নেয়। এই মামলার অপর আসামি ফাহাদও স্থানীয় এক প্রভাবশালীর ছেলে। ফাহাদের মা কানিজ ফাতেমা ময়না স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার মেয়ে এবং ওই স্কুল কমিটির একজন সদস্য।
এই তিন জনকে মামলার এজাহারভুক্ত করায় বিপাকে পড়েছেন মামলার বাদী আল ইমরান শেখ। বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে মামলা তুলে নিতে ইমরান শেখবে হুমকি দিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক নিতাই চন্দ্র দাস বলেন, ‘মামলা করার সাথে সাথেই আমরা অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। মামলার প্রধান আসামি অনিক, শিহাব ও ফাহাদকে গ্রেপ্তারেও নিয়মিত অভিযান চলছে। এটি একটি আলোচিত ঘটনা তাই আমরা কোন প্রভাবশালীর চাপে আসামীদের ছাড় দেব না।
টঙ্গী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ তালুকদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা এই মামলাটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। মামলার প্রধান আসামিরা যতই প্রভাবশালী হোক তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৬ এপ্রিল টঙ্গীর শিলমুন আব্দুল হাকিম মাস্টার উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির তিন ছাত্রী পরীক্ষা শেষে স্কুল থেকে বাসায় ফিরছিল। এসময় স্কুল গেটের বাইরে চার বখাটে এক ছাত্রীকে উক্ত্যক্ত করে এবং অপর এক বখাটে দৌড়ে গিয়ে ওই ছাত্রীকে চড়থাপ্পড় দেয়। একপর্যায়ে ওই ছাত্রীর হাত ধরে টানাহেচড়া করে এবং শ্লীনতাহানীর চেষ্টা চালায়।
এসব দৃশ্য মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে আপলোড দিলে ভিডিওটি ভাইরাল হয়। এর পর সাত কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই ছাত্রীর বাবা।
ঢাকাটাইমস/১৫মে/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি
মন্তব্য করুন