‘বিচারক অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাত থেকে নেন বঙ্গবন্ধুই’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেছেন, ‘তার অনুসারী হিসেবে আমাদেরও তা সমর্থন করা দরকার।’
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানিতে বুধবার এ কথা বলেন তিনি। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি চলছে।
বুধবার ষষ্ঠ দিনের মতো শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ নিজেদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম তার বক্তব্যের আংশিক উপস্থাপন করেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার আবার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
রিটকারী আইনজীবী হিসেবে মনজিল মোরসেদ তার যুক্তিতর্কে বলেন, ‘লার্নেড অ্যাটর্নি জেনারেল সব সময় বলার চেষ্টা করেন যে, ১৬তম সংশোধনীর মাধ্যমে ৭২-এর সংবিধানে ফিরে গেছেন। এ বিষয়ে আমরা বলছি, ৭২-এর সংবিধানের মূল স্পিরিট এবং যার নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ হয়েছে, সংবিধান প্রণয়ন হয়েছে, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতীয় নেতা। ওনার নেতৃত্বেই জাতীয় সংসদ থেকে এ ক্ষমতাটা নিয়ে আসার একটা আইন পাস হয়েছিল চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে। আমরা মনে করি, তারই অনুসারী হিসেবে সেটা সমর্থন করা দরকার। যদি কেউ এর বিরোধিতা করে তাহলে আমি মনে করি সেটা সঠিক হবে না।’
রিটকারী আইনজীবী বলেন, ‘আমরা যুক্তিতে প্রথমেই ষোড়শ সংশোধনীর প্রেক্ষাপটটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আদালতের কাছে। হঠাৎ করেই ষোড়শ সংশোধনী কেন এল। আরেকটি গ্রাউন্ড আমরা বলেছি, লার্নেড অ্যাটর্নি জেনারেল আপিল বিভাগে বক্তব্য দিয়েছিলেন যে, ১৫তম সংশোধনীটা কাট অ্যান্ড পেস্ট হয়েছে। কোনো আলোচনা হয়নি।’
মনজিল মোরসেদ বলেন, কতিপয় সংসদ সদস্য সংসদে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন। বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদে নিয়ে আসব। শুধু এই গ্রাউন্ডের ওপর ভিত্তি করেই এই ষোড়শ সংশোধনী করা হয়েছে।
এ সংশোধনী জনগণের মতামতে করা হয়নি উল্লেখ করে মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘এখানে আর্টিকেল ৭ অনুসারে জনগণের মতামত প্রতিফলিত হয়নি। এমনকি আপিল বিভাগের রায়ের পরিপন্থী করা হয়েছে। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু যে ক্ষমতা পার্লামেন্ট থেকে নিয়ে এসেছেন, তার পরিপন্থী করা হয়েছে। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জন্য এটা প্রটেক্ট করার কথা আগে বলেছিলেন তারও পরিপন্থী হয়েছে।’
১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা পুনরায় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়।
বিলটি পাসের পর গত ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ পায়। দেশের শীর্ষ আইনজীবীরা এবং সংসদের বাইরের বিরোধী দলগুলো এ সংশোধনী প্রত্যাখ্যান করে। পরে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, এই সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অন্যতম অংশ বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে। এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী। আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের ডিভিশন বেঞ্চ ওই সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে রুল জারি করেন। পরে এই রুল শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে দেন। হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজা-উল হককে এই বিশেষ বেঞ্চে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এ মামলার রুল শুনানিতে দেশের শীর্ষ ৫ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসি অ্যামিকাসকিউরি হিসেবে অভিমত নেন আদালত।
(ঢাকাটাইমস/২৪মে/এমএবি/মোআ)