ওজন প্রতারণা ডিজিটাল স্কেলেও
চট্টগ্রাম মহানগরের সবকটি বাজারে ডিজিটাল ওজন স্কেলের ফাঁদে ঠকছেন ক্রেতারা। প্রতিটি স্কেলে কেজি প্রতি ১৫০-২০০ গ্রাম কম। বিশেষ করে মাছ, মুরগি, মাংস ও ফলের দোকানগুলোতেই চলছে ওজনে ঠকানোর কারবার।
পণ্য ক্রয়ের পর বিশ্বস্ত কোনো দোকানে তা পুনরায় ওজন করার পর বিষয়টি ধরা পড়ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করলেও বিক্রেতাদের কাছে অসহায় ক্রেতারা। আর বিশেষ কৌশলে ডিজিটাল স্কেলে চুরির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, মুরগি ও মাছের দোকানগুলোতে ডিজিটাল স্কেলে ওজনে কম দেওয়ার সুযোগের মূল কারণ হচ্ছে, এসব ভোগ্যপণ্য ওজনের পর বিক্রেতা নিজেই তা জবাই করে কেটে-কুটে পরিষ্কার-করে দিচ্ছে। ফলে ওজনে কম দেওয়ার বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রে যাচাই করার সুযোগ পাচ্ছেন না ক্রেতা।
একই অবস্থা গরু ও খাসীর মাংসের ক্ষেত্রেও। ওজন করার পর বিনে পয়সায় মাংস কুটে দিচ্ছে বিক্রেতারা। এ সুবাদে পঁচা-বাসী মাংসও মিশিয়ে দিচ্ছে। ফলের দোকান, তরিতরকারির দোকানের প্রতিটি স্কেলেও ওজনে চলছে কৌশলী কারচুপি।
সম্প্রতি নগরীর বহদ্দারহাট মাছের বাজার থেকে তাবাস্সুম নামে এক নারী মাছ কিনে তা একটি মুদির দোকানে যাচাই করেন। এতে ১৮০ গ্রাম কম দেখে পুনরায় মাছ বিক্রেতার কাছে যান। তিনি ভুল স্বীকার করে আরও একটি মাছ দিয়ে ওই নারীকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু নাছোরবান্দা নারী স্কেলে মাছ মাপতে বলেন। এ সময় ওজনের হের ফেরের বিষয়টি ধরা পড়ে। যা দেখে উপস্থিত অনেকে কারচুপির কথা বলেন। ততক্ষণে পাশের মাছ বিক্রেতাদের কয়েকজন জোট হয়ে ক্রেতাদের ধমকাতে থাকেন। নিরুপায় ক্রেতারা ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল চুরি বলে ক্ষোভ ঝরতে থাকেন।
গতকাল শনিবার নগরীর কাজীর দেউরি এলাকা থেকে চারটি ফার্মের মুরগি কিনেন শাহ আলম। যার ওজন হয় সাত কেজি ৮০০ গ্রাম। ওই সময় ক্রেতা বলেন, জবাই করার দরকার নেই। আমি বাসায় নিয়ে যাব। কিন্তু বিক্রেতা তা জবাই ও পরিষ্কার করে দেয়ার জন্য জোর করতে লাগলেন। বললেন পয়সা দিতে হবে না। শেষ পর্যন্ত ক্রেতা মুরগি নিয়ে তা অন্যত্র মেপে এসে বললেন, এতে সাত কেজিরও কম আছে। শুরু হল বাকবিত-া।
বিক্রেতার যুক্তি ওজনের পর একবার পায়খানা করলেও ১০০ গ্রাম কমে যায়। সে হিসেবে ওজন কমতেই পারে। তাৎক্ষণিকভাবে মুদির দোকান থেকে কেনা এক কেজি ডাল তার স্কেলে মাপতে দেন ক্রেতা। যা এক কেজি ১৭০ গ্রাম হয়। ক্রেতার প্রশ্ন কারচুপি না াকলে এক কেজির ডাল এক কেজি ১৭০ গ্রাম হল কি করে। কথা কাটাকাটি তখন রুপ নেয় ঝগড়ায়। মুরগি বিক্রেতার সাফ জবাব, ‘যেন আছে হেন নিতে হইব। ভালা লাইগলে আইয়েন, না লাইগলে ন আইয়েন।’
মুরগি বিক্রেতা এ সময় বলেন, ‘বাজারের সব মাল বিক্রেতার ডিজিটাল স্কেলে একই মাপ। এর বাইরে আমরা যামু কেমনে। ’
এ ব্যাপারে কাজীর দেউরি বিছমিল্লাহ স্টোরের মুদির দোকানি কাজী আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের মিটারে কোনো কারচুপি নেই। আমরা কম দিলেও তা বাইরে দেখার সুযোগ আছে। কিন্তু মাছের দোকান, মুরগির দোকান, তরকারির দোকান, ফলের দোকানের মতো ভাসমান দোকানগুলোতে তা যাচাই করার সুযোগ নেই। ফলে এসব দোকানীরা ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে।
এ ব্যাপারে নগরীর বহদ্দারহাটের এক ফল বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যবসা করি লাভের আশায়। কিন্তু ফল তো পচনশীল জিনিষ। সবমিলিয়ে টিকে থাকতে হলে ওজনে কম দিতেই হবে। তা নাহলে কেউ ফলের ব্যবসা করতে পারবে না।
ডিজিটাল স্কেলে কম দেওয়ার পদ্ধতি কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন স্কেলের ভেতরে ওজনের স্প্রিংয়ের সাথে ১০০-১৫০ গ্রাম ওজনের কোনো কিছু লাগিয়ে দিলে তো হয়।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাব্বির রহমান সানি বলেন, ওজনে কারচুপি করা মারাত্মক অপরাধ। আগে কম ওজনের বাটখারা চোরাই বাজার থেকে কিনে ওজনে ঠকানো হতো। এখন ডিজিটাল স্কেলেও কারচুপি করছে ব্যবসায়ীরা। এটা ক্রেতাদের বিশ্বাসের ওপর চরম আঘাত। তাও আবার এই রমজান মাসে। এ ব্যাপারে শিগগির ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে।
(ঢাকাটইমস/২৯মে/প্রতিনিধি/ইএস)
মন্তব্য করুন