লন্ডন টু কার্ডিফ, ঐতিহ্যের নগর থেকে স্বর্গীয় শহরে
ব্রিটেনই হয়তো বিশ্বের একমাত্র দেশ, যারা চাষবাস না করে লক্ষ কোটি একর জমি ফেলে রেখে দিয়েছে এবং তা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। আমরা চিন্তা করি বর্তমান নিয়ে, সিদ্ধান্ত নেই হুটহাট। কিন্তু ব্রিটিশদের মাথায় সামনে একশ দেড়শ বছরের চিন্তা। জমি পতিত রেখে দেওয়ারও একটা সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা আছে ব্রিটিশ সরকারের। এখন তো কৃষিপণ্য সস্তা। আমদানি করতে এ আর এমন খরচ কী? তাই দামি ভারি যন্ত্রপাতি রপ্তানি করে সস্তা কৃষিপণ্য আমদানি করার নীতি ব্রিটেনের।
এমন একটা সময় আসবে যখন এই কৃষিই খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। কারণ বছরের পর বছর চাষাবাদের কারণে উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলবে অনেক দেশের ভূমি। কৃষিপণ্যের দামও বেড়ে যাবে। আর তখন এ রেখে দেওয়া জমি কাজে লাগাবে ব্রিটিশরা। এটা ছিল আমার শোনা কথা। এবার চোখে দেখে সেটা বিশ্বাস করলাম।
বাংলাদেশের ওভাল পর্ব আপাতত শেষ। শুক্রবার কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামবে মাশরাফিরা। লন্ডন থেকে মঙ্গলবার কার্ডিফে এসেছে দল। কিন্তু আমি এসেছি বুধবার দুপুরে।
লন্ডনের ভিক্টোরিয়া থেকে বাসে রওনা করি সকাল সাড়ে দশটায়। লন্ডন থেকে কার্ডিফের দূরত্ব ২৪৪ কিলোমিটার। বাসে তিন ঘণ্টার পথ। লন্ডন সিটির ঐতিহ্য ও আভিজাত্য যেমন মুগ্ধ করার মতো, তারচেয়েও মুগ্ধ করার মতো ব্রিটেনের প্রত্যন্ত অঞ্চল। এ কারণেই ব্রিটেনকে বলা হয় সমুদ্রের বধূ।
সুপ্রশস্ত হাইওয়ে। মসৃণ এ রাস্তাগুলোকে দেখে মনে হয় এই তো এক সপ্তাহ আগেই তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশে গ্রিন লাইনের যে এসি বাসগুলো ঢাকা চট্টগ্রাম বা ঢাকা কলকাতা রুটে চলাচল করে, এখানকার বাসগুলো তার চেয়েও চমৎকার। ভাড়াও কম। ২৪৪ কিলোমিটার, অথচ ভাড়া বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ৬০০ টাকা!
বাস ছুটছে প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগে। ঝাঁকি-ঝুঁকির তো প্রশ্নই নেই। বাসে না প্লেনে বসে যাচ্ছি, খুব একটা পার্থক্য বুঝতে পারলাম না। যাচ্ছি আর মুগ্ধ হচ্ছি। এমন সবুজ কোনো দেশ হতে পারে? হাইওয়ের পাশে নাম না জানা গাছের সারি। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। নানা রকম গাছ। আর ঘাসে ভর্তি সবুজ পতিত জমি। এই জমিকে বেশ উর্বর মনে হলো। কারণ যে জমি এতো সবুজ ঘাস এবং বাহারি গাছের জন্ম দিতে পারে, সে জমি সুফলা না হয়ে পারেই না। মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে গবাদি পশুর খামার। মনের আনন্দ ঘাস খেয়ে যাচ্ছে। এখানে খামার করা সহজ। কারণ বিনা পয়সায় পাওয়া যাচ্ছে পর্যাপ্ত খাবার। ভেড়া এবং গাভী বহরের জন্য কোনো রকম বাড়তি টাকা খরচের দরকার পড়ে না খামার মালিকদের। চারিদিকে শুধু ঘাসে ভরা জমি। যে খাবার শেষ হবার নয়। অফুরন্ত।
লন্ডন সিটির এক ঐতিহ্য। কার্ডিফের আবার আরেক আবেদন। ওয়েলসের রাজধানী শহরটা দেখার মতো। ছিমছাম। পরিচ্ছন্ন। আলাদা ঐতিহ্যের বাড়িঘর। এ এক আলাদা দুনিয়া। মায়াবী শহর। শহরের কোল ঘেঁষে সমুদ্র। আমাদের বঙ্গোপসাগরের মতো উত্তাল নয়। শান্ত । সমুদ্রের কোল শেষে বাড়ি ঘর। এখানে এসে মনে হলো পৃথিবীর শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আর এটা যেন স্বর্গীয় কোনো নগরী।
কার্ডিফ ক্রিকেট স্টেডিয়ামটাও বেশ মায়াবী। অন্য যে কোনো স্টেডিয়াম থেকে আলাদা। একদম নিরিবিলি। চারপাশে শত শত বড় বড় গাছ। একেবারে পার্কের মধ্যে অবস্থিত এ স্টেডিয়ামটি পুরানো হলেও টেস্ট ভেন্যু হিসেবে নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে কয়েক বছর আগে। এখানে অ্যাশেজ সিরিজের টেস্ট ম্যাচও হয়েছে কয়েকটা। স্টেডিয়ামের সিট গ্যালারি, সিট প্ল্যান- সব কিছুই অন্যরকম। প্রেসবক্সটাও বেশ বড়। এখানেই ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
(ঢাকাটাইমস/৮জুন/ডিএইচ)
মন্তব্য করুন