বৃষ্টি-পাহাড়ি ঢলে বিপর্যস্ত রাউজান
ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল আর জোয়ারের পানির স্রোতে চট্টগ্রামের রাউজানে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার হলদিয়া ও ডাবুয়া ইউনিয়নে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। মাটির বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানিতে ডুবে মারা গেছেন দুই জন। অনাহারে, অনিদ্রায় রাত্রী যাপন করছেন দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, হলদিয়া, ডাবুয়া, চিকদাইর, নোয়াজিশপুর, গহিরা, বিনাজুরী, পশ্চিম গুজরা, নোয়াপাড়া, উরকিরচর, রাউজান, কদলপুর ও পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের বেশিরভাগ বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। ভেসে গেছে মাছ ও হাঁস-মুরগি। স্রোতের তীব্রতায় রাস্তাঘাট ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পৌর এলাকার ছিটিয়া পাড়ার বাসিন্দা আহসান হাবীব চৌধূরী ঢাকাটাইমসকে বলেন, বন্যায় আমার দুটি পুকুর ডুবে সব মাছ ভেসে গেছে। এতে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরো জানান, বন্যার পানি বসতবাড়িতে ঢুকে পড়ায় মাটির চুলা, গ্যাসের চুলা কোনোটাতে আগুন জ্বালাতে পারছে না অনেক পরিবার।
পৌর এলাকার ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্ধা তপন দে ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমার পূর্ব পুরুষেরা কখনও বানভাসী হয়নি, আমি প্রথম বানভাসী হলাম। শখে চাষ করা আমার পুকুরে কাতলা, রুই, কার্ফু, মৃগেল, কালিবাউস, নাইলোটিকা জাতীয় সব মাছ বানের জলে ভেসে গেছে।
উপজেলা মৎস কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, বন্যাদূর্গত এলাকায় প্রায় এক হাজারেরও অধিক পুকুর পানিতে ডুবে গেছে। কয়েক শ’ খামারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধ শফিকুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমার ইউনিয়ন।
এখানে সর্তা ও ডাবুয়া খালের ১৬ টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকায় পাহাড়ি ঢল নামে। এতে ৭০ টি মাটিরঘরসহ শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ১০/১২ টি রাস্তা সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে।
তার ইউনিয়নে মোট ৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
ডাবুয়া ইউনিয়ন (ইউপি) পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেন, ইউনিয়নের বড়–য়া পাড়া, লাটি ছড়ি, আমির চৌধুরী বাড়ি, গণিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ২৫/৩০ টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙে গেছে ৮/১০ টি রাস্তা। তার ইউনিয়নে কোটি টাকার ওপরে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
পরিস্থিতির ব্যাপারে জানাতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম হোসেন রেজা ঢাকাটাইমসকে বলেন, বন্যায় রাউজানের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হলদিয়া ইউনিয়ন। পানির তোড়ে ভেসে স্কুলছাত্রসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার ভোরে উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের গর্জনীয়া মাদ্রাসার কাছে আব্দুস সালাম মাস্টার বাড়ীর ধানী জমি থেকে ১০/১৫ ফুট দূরত্বে লাশ দুটি উদ্ধার করে স্থানীয় জনতা। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে পানিতে ভেসে নিখোঁজ হন তারা। নিহতরা হলেন- উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ইয়াছিন নগর গ্রামের মোহাম্মদ জাফরের ছেলে মুরগি ব্যবসায়ী সাবের (২০) ও বাগমারা টিলা গ্রামের আবু তাহের ছেলে স্কুল ছাত্র মোহাম্মদ নয়ন (১৪)। আজ বুধবার তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদান দেয়া হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এছাড়াও ডাবুয়া, চিকদাইর এবং রাউজান পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
বহু পাকা, আধা পাকা এবং মাটির সড়ক, সেতু ও কালভার্ট মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি জানান, প্রতিটি ইউনিয়নে ও পৌরসভায় দুই মেট্রিক টন হারে চাল এবং ২৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল গতকাল বুধবার সকালে পার্বত্য এলাকায় যাওয়ার আগে রাউজানের বন্যার্ত্যদের ব্যপারে খোঁজ খবর নেন বলে জানান ইউএনও।
(ঢাকাটাইমস/১৪জুন/প্রতিনিধি/ইএস)
মন্তব্য করুন