ধর্ষণের পর হত্যা: তিনজনের যাবজ্জীবন
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার কাউয়ারেখা গ্রামে পনের বছর বয়সী রোকসানা আক্তারকে অপহরণ করে ধর্ষণ করা হয়। পরে তাকে হত্যার পর লাশ গুম করার মামলায় তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ পৃথক ধারায় বিভিন্ন দণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত।
বুধবার দুপুরে বরিশালের নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের হাকিম শেখ আবু তাহের এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- উজিরপুরের কাউয়ারেখা এলাকার স্বপন হাওলাদার, সমীর হালদার ও গৌরাঙ্গ বৈরাগী। তবে রায় ঘোষণার সময় শুধু স্বপন হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এই মামলার তিন আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- স্বপনের বাবা রফিকউদ্দিন হাওলাদার, রফিকের ভাই মোকসেদ হাওলাদার এবং স্থানীয় বাসিন্দা সফিজউদ্দিন।
আদালত সূত্র জানায়, নিহত রোকসানা আক্তার গৌরনদী উপজেলার কসবা এলাকায় কাদের ফকিরের মেয়ে। নানি অসুস্থ থাকায় ঘটনার কয়েক দিন আগে সে উজিরপুরের কাউয়ারেখা গ্রামে নানি বাড়িতে আসেন। অভাবের কারণে রোকসানা তার নানি বাড়ির পাশের রফিকউদ্দিনের বাড়িতে কাজে যান। সেখানে রফিক উদ্দিনের ছেলে স্বপন হাওলাদার কৌশলে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে রোকসানাকে অন্তসত্ত্বা করে ফেলে। যে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।
ঘটনার দিন ২০০০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার পর নানির বাড়িতে অন্যান্যদের সাথে ভিসিআর দেখছিল রোকসানা। ভাত খেতে ডাকার অজুহাতে নিকটাত্মীয় স্বপন তাকে ডেকে বাড়ির পাশে পুকুরপাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে স্বপন ও তার দুই সহযোগী মিলে রোকসানাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে হত্যা করে পাশের অতুল হালদারের বাড়ির টয়লেটের স্লাবের নিচের ট্যাংকিতে রোকসানার লাশ ফেলে দেয় স্বপন ও তার সহযোগীরা। অনেক খোঁজাখুঁজির করে পরদিন সকালে সেখান থেকে রোকসানার লাশ উদ্ধার করে স্বজনরা।
এ ঘটনায় একই বছরের ১৬ মার্চ রোকসানার বড় ভাই লালন ফকির ছয়জনের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা রোকসানাকে অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যা এবং তার লাশ গুমের অভিযোগে একটি মামলা করেন।
২০০৩ সালের ২৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উজিরপুর থানার এসআই আব্দুল হাকিম।
আদালত ২৫ জনের মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় দণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে দণ্ড প্রদান করে। একইসাথে লাশ গুম করার অপরাধে তিনজনের প্রত্যেককে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
পাশাপাশি প্রধান আসামি স্বপন হাওলাদারকে নারী ও শিশু নির্যাতনের ২০০৭ ধারায় ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/১৪জুন/টিটি/এলএ)
মন্তব্য করুন