বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেলে হার্টে প্রথম পেসমেকার প্রতিস্থাপন
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জাফর উল্লাহ নামে এক রোগীর হৃৎপিণ্ডে (হার্টে) সফল ডুয়েল চেম্বার পেসমেকার প্রতিস্থাপন সম্পূর্ণ হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো এ প্রতিস্থাপনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে খরচ দিতে হয়েছে মাত্র ২ হাজার টাকা।
এ সফল প্রতিস্থাপনের অপারেশনটি করেছেন সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন, ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশনাল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম সালেহ উদ্দীন।
এর আগে এ হাসপাতালে এই মেশিনটি দিয়ে প্রথমবারের মতো হার্টে এনজিওগ্রাম পরীক্ষা ও ১টি, ২টি এবং ৩টি রিং প্রতিস্থাপন করা হয়।
বরিশাল নগরীর বগুড়া রোডস্থ এলাকার বাসিন্দা পাঁচ সন্তানের জনক ও বরিশাল জেলা জজ আদালতের উচ্চমান সহকারী জাফর উল্লাহ বেশ কিছুদিন আগে পা পিছলে পড়ে আহত হন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায় তিনি আগে থেকেই গুরুতরভাবে হৃদ রোগে আক্রান্ত। বিশেষ করে তার হৃদস্পন্দন ছিল খুবই কম। যার গতি প্রতি মিনিটে ছিল মাত্র ৩২ বার। এমনকি কখনো কখনো গতি আরো কমে স্পন্দন ব্যাহত হওয়ার উপক্রম হচ্ছিল। এ অবস্থায় গত এক সপ্তাহ আগে রোগীর হার্টে অস্থায়ী পেসমেকার প্রতিস্থাপন করা হয়। কিন্তু তাতে তেমন উন্নতি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার একটি অস্ত্রপচারের মধ্যদিয়ে ৪৫ মিনিটে জাফর উল্লাহর হৃৎপিণ্ডে ডুয়েল চেম্বার পেসমেকার প্রতিস্থাপন করা হয়।
সকাল ১০টা থেকে ৪৫ মিনিট সফল অস্ত্রপচারের পর তাকে শয্যায় পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি সুস্থ রয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ইনচার্জ শামিমা ইয়াসমিন।
আর তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে সরকারী ফি রাখা হয়েছে মাত্র ২ হাজার টাকা। তবে পেসমেকারটি রোগীর পক্ষ থেকে কিনে দেয়া হয়। যার অর্থের যোগান দেন রোগীর সহকর্মীরা।
জাফর উল্লাহর হৃৎপিণ্ডে ডুয়েল চেম্বার পেসমেকার প্রতিস্থাপনের নেতৃত্ব দেন শেবাচিম হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন, ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশনাল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম সালেহ উদ্দীন। তার সাথে অপারেশন টিমে উপস্থিত ছিলেন ডা. মাহফুজুর রহমান ও ডা. এমডি সাইদুর রহমান, সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ইনচার্জ শামিমা ইয়াসমিন, টেকনোলজিস্ট গোলাম মোস্তফা ও নজরুল আহম্মেদ।
এ ব্যাপারে ডা. এম সালেহ উদ্দীন বলেন, ছন্দময় জীবনের জন্য প্রয়োজন স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন। একজন সুস্থ মানুষের হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক স্পন্দনের গতি প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ৯০ বার। হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন রোগের কারণে এই স্বাভাবিক স্পন্দন ব্যাহত হয়। ফলে দেখা যায়- নানাবিধ সমস্যা, ছন্দপতন ঘটে জীবনযাত্রার। সুস্থভাবে জীবনযাপনের জন্য হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক স্পন্দন ভীষণ প্রয়োজন। তাই পেসমেকার একদিকে যেমন হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক স্পন্দন ফিরিয়ে দেয়, তেমনি অন্যদিকে রোগীর জীবনযাত্রার মানও উন্নত করে।
তিনি আরো বলেন, রোগী জাফর উল্লাহর হৃৎপিণ্ডে ডুয়েল চেম্বার পালস জেনারেটরের (পেসমেকার) সঙ্গে দুটি লিড লাগানো হয়, একটি ডান এট্রিয়ামের সঙ্গে ও অন্যটি ডান ভেন্ট্রিকেলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।
প্রতিনিয়ত বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমন রোগে আক্রান্ত রোগীদের হৃৎপিণ্ডে পেসমেকার প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। কিন্তু এখানে আমাকে সহযোগিতা করতে প্রয়োজন আরো চিকিৎসক ও টেকনোলজিস্ট।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৭ মে ঝালকাঠী জেলা সিভিল সার্জন অফিসের অবসরপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষক মো. আনোয়ার হোসেনের হার্টের তিনটি ব্লকে করনারি এনজিও প্লাস্টি (হার্টে রিং) করা হয়। একইভাবে ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর বিনা খরচে ভোলা জেলার লালমোহনের গরিব রোগী সিদ্দিকুর রহমানের হৃৎদপিণ্ডে সফলভাবে পরীক্ষামূলক একটি রিংটি প্রতিস্থাপন করা হয়। এরপরই ওই বছরের ১৬ এপ্রিল বাকেরগঞ্জের কৃষ্ণকাঠী গ্রামের সেলিম খানের হার্টে একটি রিং বসানো হয়। এছাড়া ২০১৪ সালের ২৪ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৯ কোটি টাকা মূল্যের ওই মেশিনটি দিয়ে দুই শতাধিক রোগীর এনজিও গ্রাম পরীক্ষা করানো হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১৫জুন/টিটি/এলএ)
মন্তব্য করুন