‘জিয়ার সবুজ সংকেতেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা’
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তারানা হালিম বলেছেন, সংবিধধানের ষোড়শ সংশোধনীর যে রায় দেয়া হয়েছে- সে রায়ে জাতির জনককে ছোট করে দেখা হয়েছে। এ রায় মেনে নেয়া হবে না। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সংসদ অপরিপক্ক। তাহলে তার নিয়মও অপরিপক্ক। তার যদি এতই কথা বলার থাকে, তাহলে সংসদে যে তার বেতন বাড়ানো হয়েছে সে বেতন ফেরত দিতে পারতেন। কিন্তু তা তিনি করেননি। ষড়যন্ত্র করে কোন লাভ হবে না। ষড়যন্ত্র মোকাবেলার জন্য যথেষ্ট মানসিক শক্তি রয়েছে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের।
‘বাঙ্গালী জাতীয়তা ও বাঙ্গালী সংস্কৃতি আমাদের ধমনীতে’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নারকীয় হত্যাকাণ্ড-আগস্ট ট্রাজেডির ৪২ বছর এবং জাতীয় শোক দিবসের শ্রদ্ধা ও স্মরণে বরিশাল বঙ্গবন্ধু পরিষদের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিনে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নগরীর অশ্বিনী কুমার হল প্রাঙ্গণে আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব কথা বলেন তিনি।
তারানা হালিম বলেন, এক সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলেন আপনার দুর্বলতা কি? তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- আমার দুর্বলতা আমি এদেশের মানুষকে ভালবাসি, আমার গুণ আমি এদেশের মানুষকে ভালবাসি, আর আমার দোষ এদেশের মানুষকে আমি একটু বেশিই ভালোবাসি। কিন্তু আমরা বঙ্গবন্ধুকে মৃত্যু দিয়েছি। তার হত্যাকারীরা এখনো ঘুরে বেরায়, যেটা আমাদের জন্য কষ্টদায়ক।
তিনি বলেন, ৪ হাজার ৬৮৪ দিন জেলে কাটাতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। প্রত্যেকটি আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। বীরঙ্গাদের যখন তাদের পরিবার নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ওদের পিতার নামের স্থানে আমার নাম দিয়ে দাও, আর ঠিকারা দাও ধানমন্ডি ৩২। বঙ্গবন্ধু ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৩২৩টি পরিবারকে পুনর্বাসন করেছিলেন, ২৯৫টি ব্রিজ এবং ২৭৪টি সেতু পুননির্মান করেছিলেন, ১৯৪৭ সালে ভারতের সাথে স্থল চুক্তি, যুদ্ধের পর মিত্র বাহিনীকে ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থা এবং স্বাধীনের ১১ মাসের মাথায় দিয়েছিলেন এদেশের সংবিধান। যারা বলেন বঙ্গবন্ধু দক্ষ রাষ্ট্র নায়ক ছিলেন না, তারা বঙ্গবন্ধুকে চেনে না-জানে না। ফিডেল কাস্ট্রো বলেছিলেন, আমি হিমালয় দেখিনি, দেখেছি বঙ্গবন্ধুকে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু একটি পরিবারের স্বজন হারানোর বেদনা নয়, এ মৃত্যু দেশের অভিভাবক হারানোর বেদনা। ওই রাতে একসাথে তিনটি বাড়িতে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে পশুর দল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এদেশের নাগরিক হিসেবেও এ হত্যাকাণ্ডের বিচার পাননি। সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার করা যাবে না বলে জানানো হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতে দেয়নি জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান সবুজ সংকেত দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যেতে বলেছিল হত্যকারীদের। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিভিন্ন দেশে সচিব পদে পুরস্কৃত করেছিল। এছাড়া হত্যাকারীদের সংসদে স্থান এবং রাজনৈতিক দলও করে দিয়েছিল।
তারানা হালিম বলেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা মৃত্যুকে ভয় পান না। যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের মনে রাখতে হবে, ২১ আগস্ট নেত্রীকে আমাদের নেতাকর্মীরা বাঁচিয়েছিল। ভবিষ্যতে আমাদের নেত্রীর উপর যদি ফুলের টোকা দেয়ার চেষ্টা করা হয়, তাহলে তাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে না। আমাদের নেতাকর্মীরা ভয়ে বিদেশে পালায় না। সময় এসেছে আমরাও যেন বঙ্গবন্ধুর রক্তের মূল্যে আমাদের রক্ত দিয়ে দিতে পারি।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট বরিশালের সভাপতি সৈয়দ দুলালের সভাপতিত্বে ১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করেন আগস্ট ট্রাজেডির শহীদ জননী শাহানার আব্দুল্লাহ।
বক্তব্য রাখেন, প্রবীন সাংবাদিক মানবেন্দ্র বটব্যাল।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সংসদ সদস্য তালুকদার মো: ইউনুস, জেবুন্নেছা আফরোজ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সদস্য চিত্র নায়িকা রোজীনা, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, মঞ্চ অভিনেত্রী তমালিকা কর্মকার, মনিরা বেগম মিমি প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/টিটি/এলএ)