টাঙ্গাইল-১: রাজ্জাক-স্বপনের হ্যাটট্রিক লড়াইয়ের সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল
| আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০১৭, ১২:৫১ | প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর ২০১৭, ১০:০২

১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৩ আসন পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও টাঙ্গাইল-১ আসনটি হাতছাড়া হয়ে যায় তাদের। সেবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহেন্দ্র লাল বর্মণকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন জাসদের প্রার্থী আবদুস সাত্তার। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ যতগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, একবার ছাড়া প্রতিবারই জয়ী হয়েছে মধুপুর-ধনবাড়ী নিয়ে গঠিত এই আসনে।

বর্তমানে টাঙ্গাইল সদরের মতো জেলার রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ টাঙ্গাইল-১ আসনটি। কেননা সিদ্দিকী ও খান পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে যাওয়ায় টাঙ্গাইলে দলের অভিভাবক ড. আবদুর রাজ্জাক এই আসনের এমপি।

তিনবারের এমপি ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন তাতে নিঃসংশয় দলের নেতাকর্মীরা। তারা মনে করেন আবদুর রাজ্জাকের বারবার বিজয়ের মধ্য দিয়ে আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গে পরিণত হয়েছে।

তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এই দুর্গ ভাঙতে মরিয়া অন্যতম প্রধান দল বিএনপি। আর তাতে এই আসনে একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিএনপির পক্ষে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ফকির মাহবুব আনাম স্বপর নাম শোনা যাচ্ছে বেশি।

এই দুই নেতা এর আগে দুবার পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিলেন। এবার দুজনই যদি নিজ নিজ দল থেকে মনোনয়ন পান, তাহলে তাদের মধ্যে হ্যাটট্রিক লড়াই দেখা যাবে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, আবদুর রাজ্জাক এবারও নৌকার টিকেট পাচ্ছেন এবং তিনিই বিজয়ী হবেন নির্বাচনে। সিদ্দিকী ও খান পরিবার কোণঠাসা হয়ে পড়ায় আবদুর রাজ্জাকই বর্তমানে কেন্দ্রীয় সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে টাঙ্গাইলের আওয়ামী রাজনীতির অভিভাবক। এ আসনে তার বিকল্প প্রার্থী নেই বলে জানান বেশির ভাগ দলীয় নেতাকর্মী।

ফকির মাহবুব আনাম স্বপনকে নিয়েও বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর একই রকম প্রত্যাশা। তারা জানান, দলে একাধিক মনোনয়ন-প্রত্যাশী থাকলেও শেষমেশ ফকির মাহবুব আনাম স্বপন দলীয় মনোনয়ন পাবেন। তাদের ধারণা, খালেদা জিয়া দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করবেন। আর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ফকির মাহবুব আনাম স্বপন জয়লাভ করবেন বলে তারা আশাবাদী।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আবদুর রাজ্জাক ও ফকির মাহবুব আনাম স্বপনের পাশাপাশি দুই দলেই আরো কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে সক্রিয়। তারা অংশগ্রহণ করছেন বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও সামাজিক কর্মকা-ে। পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড দিয়ে মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলাবাসীকে শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে আলোচনায় আসার চেষ্টা করছেন মনোনয়ন-প্রত্যাশীরা।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে আরো যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন দলের শিক্ষা ও মানবসম্পদ-বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবু, স্কয়ার হাসপাতালের পরিচালক ডা. সানোয়ার হোসেন, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মিজানুর রহমান।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্যান্য নেতাদের মধ্যে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, মধুপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তিনবারের সাবেক পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম সরকার শহীদ ও কানাডা প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার ভূঁইয়া মাহবুব লতিফ।

অন্যান্য দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি জেপির (মঞ্জু) প্রেসিডিয়াম সদস্য আবু সাইদ খান, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে চলচ্চিত্রকার নূরুল ইসলাম রাজ ও মধুপুর উপজেলা শাখার সভাপতি এস এম এ হান্নান ইস্পাহানি নিজ দল থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মধুপুর উপজেলা শাখার সহসভাপতি মাওলানা জহিরুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ও সাবেক এমপি খন্দকার আনোয়ারুল হক নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা ভাবছেন।

এই আসনের ১০ সাংসদ

১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহেন্দ্র লাল বর্মণকে পরাজিত করে প্রথম সাংসদ হন জাসদের আবদুস সাত্তার। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী আসাদুজ্জামান ছানাকে পরাজিত করেন বিএনপির প্রার্থী ধনবাড়ীর নওয়াব হাসান আলী চৌধুরী। ১৯৮৬ সালের বিএনপিবিহীন তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডা. নিজামুল ইসলাম এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী খন্দকার আনোয়ারুল হক (স্বতন্ত্র) নির্বাচিত হন।

১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির আশিক আকবরকে পরাজিত করেন আওয়ামী লীগের আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে নির্বাচিত হন বিএনপির সাবেক মহাসচিব ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার। একই বছর ১২ জুনের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবুল হাসান চৌধুরী কায়সার বিএনপির ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারকে পরাজিত করেন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ফকির মাহবুব আনাম স্বপনকে হারিয়ে ড. আবদুর রাজ্জাক প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফকির মাহবুব আনাম স্বপনকে আবার পরাজিত করে সাংসদ হন আবদুর রাজ্জাক। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

টাঙ্গাইল-১ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬০৮ জন। এর মধ্যে মধুপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়নে ২ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৩ জন এবং ধনবাড়ী উপজেলার একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে ভোটার ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৬৫ জন।

(ঢাকাটাইমস/৩০অক্টোবর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

জাপার একাংশের শনিবারের সভা স্থগিত, বিতরণ করবে পানি ও স্যালাইন

পাকিস্তান প্রশংসা করে অথচ বিএনপি উন্নয়ন দেখতে পায় না: ওবায়দুল কাদের 

নতজানু সরকারকে ক্ষমতায় রেখে মানুষের সমস্যার সমাধান হবে না: সালাম 

খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক

ঝিনাইদহ-১ উপনির্বাচন: আ.লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের আহ্বান

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ১২ দলীয় জোটের

বিএনপি নেতারা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে: ওবায়দুল কাদের

প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় ‘এমপিরাজ’ তৈরি হয়েছে: রিজভী

উপজেলা ভোটের মাঠে বিএনপির তৃণমূল নেতারা

উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ: বিএনপির ৬৪ নেতাকে শোকজ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :