নাসিরনগর তাণ্ডব: তদন্ত শেষ হয়নি এক বছরেও

মোহাম্মদ আরজু, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:০৬

ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে ইসলাম ধর্ম অবমাননাকর ছবি পোস্ট করার এক বছরেও এই ঘটনায় দায়ীদেরকে চিহ্নিত করে তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ। এই ঘটনায় ওই এলাকায় হিন্দুদের ভাঙচুর করা বাড়ি ঘর মেরামত করা হলেও দায়ীদের বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ রয়ে গেছে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে। আবার পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেয়ায় যার নামে ফেসবুক আইডি খুলে এই ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল, সেই রসরাজ এখনও মামলা থেকে মুক্ত হতে পারছেন না।

পুলিশ এক বছরেও তদন্ত শেষ করতে না পারায় নাখোশ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাবলিক প্রসিকিউটর এস এম ইউসুফ। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কার্যক্রমের সময়সীমা আছে। তা বহু আগেই অতিক্রান্ত হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা বার বার সময় নেয়ায় বিচারকার্য বিলম্বিত হচ্ছে।’

রসরাজ নামে হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক ব্যক্তির নামে খোলা ফেসবুক আইডি থেকে মুসলমানদের পবিত্র উপাসনালয় কাবা শরিফের অবমাননাকর ছবি প্রকাশের জেরে ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরের হরিণবেড় ইউনিয়নের হরিনবেড় গ্রামে হিন্দু পল্লীতে তা-ব চালানো হয়। শতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় সেদিন। ভেঙে দেয়া হয় ১৫টি মন্দিরের প্রতীমা।

এই ঘটনাটি সে সময় দেশ জুড়ে আলোড়ন তুলে। সংঘবদ্ধ এই হামলার প্রতিবাদ উঠে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে। সরকারও দায়ীদের বিচারের আশ্বাস দেয়। করা হয় মামলা। কিন্তু সেই তা-বের বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার শুরুর অপেক্ষায় ভুক্তভোগীরা।

নাসিরনগর তা-বের পর পুলিশ মামলা করেছিল মোট আটটি। হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখিসহ গ্রেপ্তার করা হয়, ১২২ জনকে। তদন্তে দেখা যায়, যে রসরাজের নামে আইডি খুলে ধর্ম অবমাননাকর ছবি পোস্ট করা হয়েছ, সেই ব্যক্তি একজন শ্রমজীবী মানুষ, যার কম্পিউটার ও স্মার্টফোন চালান সম্পর্কে ধারণাই নেই। তার নাম ব্যবহার করে ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি করে এই হামলা চালানো হয়েছে।

সম্প্রতি রংপুরে একই ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছে। টিটু চন্দ্র রায় নামে হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক ব্যক্তির ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট দিয়েছেন অভিযোগ তুলে তার বিচার দাবিতে জড়ো হয়ে আক্রমণ চালান হয় হিন্দু পল্লীতে। সদর উপজেলার পাগলাপীর ঠাকুরবাড়ি গ্রামে অন্তত ১১টি বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় একজন।

টিটুর ভাই বিপুল চন্দ্র রায় জানিয়েছেন, তার ভাই আনুষ্ঠানিক পড়াশোনা করেননি। তাই তার পক্ষে এই ধরনের স্ট্যাটাস দেয়া সম্ভব নয়। আবার টিটু কয়েক বছর ধরে এলাকাতেই থাকেন না। হিন্দু পল্লীতে আক্রমণের ঘটনাটি উদ্দেশ্যমূলক বলেই ধারণা তার।

কয়েক বছর আগে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধদের ওপর হামলার আগেও একই ঘটনা ঘটেছিল। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এক যুবকের ফেসবুক আইডি থেকে ধর্ম অবমাননাকর পোস্ট দেয়ার অভিযোগ তুলে গোটা উপজেলায় বৌদ্ধদের ওপর বেপরোয়া আক্রমণ চালানো হয়।

নাসিরনগর হামলার তদন্ত কোন পর্যায়ে-জানতে চাইলে পুলিশ বলছে, ৮০ শতাংশ কাজই শেষ হয়েছে। শিগগির প্রতিবেদন দেয়া হবে আদালতে।

তদন্তে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সপার ইকবাল হোসেন ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলা। এ কারণে সব বিষয় বিবেচনা করে আগাতে হচ্ছে। ’

যার নামে ফেসবুক আইডি থেকে ধর্মীয় অবমাননাকর ছবি প্রচার করা হয়েছিল সেই রসরাজ কয়েক মাস বন্দী থাকার পর অবশ্য জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তবে তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলাটি এখনও চলছে।

রসরাজের আইনজীবী নাসির মিয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পুলিশ তদন্ত প্রতিবদন দাখিল না করায় নাসিরনগরের ঘটনার বিচার শুরু করা যাচ্ছে না। আর একই কারণে আমার মক্কেল মুক্ত হতে পারছে না।’

এখন এলাকায় আগের সেই উত্তেজনা না নেই। প্রশাসন চেষ্টা করছে শান্তি ফিরিয়ে আনতে।

জানতে চাইলে নাসিরনগরের বাসিন্দা সুজিত চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের মধ্যে ভ্রার্তত্ববোধ ফিরে এসেছে। ঘটনার মাস খানেকের মধ্যেই মন্দিরগুলো সংস্কার করা হয়েছে।’

রসরাজের বড় ভাই দয়াময় দাস বলেন, ‘এক বছর ধইরা হিন্দু-মুসলমান মিলে মিশে আছি। আর কোনো ঝামেলা হয় নাই।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, ‘নাসিরনগর ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সরকার, প্রশাসনসহ সকলের তৎপরতায় মানুষের আতঙ্ক কেটে গেছে।’

ঢাকাটাইমস/১৪নভেম্বর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :