ভোটের বাইরে নয় বিএনপি!

বাছির জামাল
 | প্রকাশিত : ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:২৬

বর্তমানে বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ হচ্ছে কারাবন্দি দলীয়প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। আইনি লড়াই কিংবা আন্দোলন যদি পারা যায় তাহলে উভয়ভাবেই খালেদা জিয়াকে জেলের বাইরে নিয়ে আসাই হচ্ছে দলটির এখন প্রধান ‘প্রায়োরিটি’।

তবে একটি প্রশ্ন ইতিমধ্যে দেখা দিয়েছে যে, যদি আইনি লড়াই কিংবা আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি না হয় তাহলে কি বিএনপি আগামী একাদশ নির্বাচনে অংশ নেবে না? যেখানে ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে এক সমাবেশে দলের নেতারা বলেছেন যে, খালেদা জিয়াকে ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না, সেখানে এমন প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। ‘খালেদা জিয়াবিহীন নির্বাচন নয়’ এমন একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও আগামী একাদশ নির্বাচনে অংশ নেবে না এমন সিদ্ধান্ত এখনো তাদের নেই বলে দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপে মনে হয়। আগামী একাদশ নির্বাচনে যাবে কি যাবে না তা এখনই বিবেচনা করছে না দলটি। দলের নেতারা জানিয়েছেন, তাদের দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের সব ধরনের প্রস্তুতি ভালো করেই নিয়ে রাখছে।

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল না করায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। তখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মতো পর্যাপ্ত প্রস্তুতিও ছিল না দলটির। তবে এবার এই ভুলটি করতে চায় না দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা দলটি। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। এজন্য ৩০০ আসনে একক প্রার্থীর তালিকা করছে বিএনপি। দুটি বেসরকারি সংস্থার জরিপ, দশম সংসদ নির্বাচনের আগে চ‚ড়ান্ত করা প্রার্থীর তালিকা ও তৃণমূল সফর শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের দেওয়া তালিকা এ চার রিপোর্টের ভিত্তিতে একক প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ মোটামুটি শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

একক প্রার্থী বাছাইয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় গুলশানে চলতি বছর বেশ কয়েকটি বৈঠকও করেছেন। অত্যন্ত গোপনে এ তালিকার কাজ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এমনকি এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথা না বলারও নির্দেশনা রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি ও মার্চে দুটি বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে আলাদাভাবে জরিপ চালায় বিএনপি। তারা ২৫০ আসনে ‘জনপ্রিয় ও ক্লিন’ ইমেজের তিনজন করে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম তালিকাভুক্ত করে। বাকি ৫০টি আসনে একক প্রার্থীর নাম তালিকাভুক্ত করে বলা হয়, এসব আসনেও একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছে। তবে একক প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তারা সবচেয়ে জনপ্রিয় ও একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য। মামলার কারণে যদি এসব নেতার প্রার্থিতার ক্ষেত্রে সমস্যা হয় তাহলে স্ত্রী-সন্তানদের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিতে পরামর্শ দেওয়া হয় জরিপে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরামর্শে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রার্থী তালিকা বাছাই কাজ তদারক করছেন। একক প্রার্থীর তালিকা করার ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

এ নিয়ে আলাপকালে বিএনপির নেতারা বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেভাবে ছক করে এগোচ্ছে, বিএনপিও বসে নেই। বিএনপি এখন বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি। তারপর থাকবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি। সরকার খালেদা জিয়াকে সহসাই মুক্তি দেবে না এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিও তারা মানবে না এটা দলের সিনিয়র নেতারা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছেন। এজন্য বিএনপির সামনে আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ নেই।

তারা মনে করেন, নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে বলে দিয়েছে যে, অক্টোবরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। একাদশ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ধরা হয়েছে ডিসেম্বরের শেষ দিকে। বিএনপির হাতে বেশি সময় নেই। তাই আন্দোলনে যাওয়ার আগে ৩০০ আসনে একক প্রার্থীর নামের তালিকা হাতে রাখা হবে। যাতে আন্দোলনে সফল হলে প্রার্থী চ‚ড়ান্ত করতে সময়ক্ষেপণ না হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ তালিকা থেকে প্রার্থী চ‚ড়ান্ত করতে পারে সেজন্যই এ প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। এছাড়া তালিকাভুক্ত নেতাদের আন্দোলনের সময়ও কাজে লাগানো হবে। দাবি আদায়ের আন্দোলনে সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের লোকবল মাঠে নামানোর নির্দেশ দেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে আন্দোলন জোরদার হবে বলে মনে করছেন তারা।

তবে দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক নেতা বলেন, এ তালিকায়ই চ‚ড়ান্ত নয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে আসন ছাড়তে হবে। বিশেষ পরিস্থিতির কারণে হাইকমান্ড মনে করেছে এখনই একক প্রার্থীর একটি তালিকা প্রস্তুত করা দরকার। কারণ আগামীতে আন্দোলনের বিকল্প নেই ধরে নিয়েই এগোচ্ছে বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো প্রস্তুতি বিএনপির সব সময়ই আছে। প্রতিটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিএনপির একাধিক যোগ্য ও ত্যাগী নেতা রয়েছেন। ৩০০ আসনে প্রার্থী ঠিক করার ক্ষেত্রে বিএনপির কোনো সমস্যা নেই।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিই হচ্ছে প্রথম। এছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনেরও দাবি আমাদের। এসব আগে সমাধান করতে হবে। সরকারকে সংলাপে বসতে হবে।

বাছির জামাল: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :