‘শ্লীলতাহানি’র বিচার না পেয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা

নাটোর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট ২০১৮, ২০:০১

অপমানের বিচার না পেয়ে লজ্জা আর অভিমানে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন শিপ্রা কস্তা নামে এক গৃহবধূ।

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল ইউনিয়নের সরাবাড়িয়া গ্রামে মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।

শিপ্রা কস্তা ওই গ্রামের ডমিনিক রোজারিওর স্ত্রী।

বড়াইগ্রাম থানা ও প্রতিবেশী হাবিবুর রহমান জানান, শিপ্রা কস্তা তার স্বামীর বাড়ি সরাবাড়িয়া গ্রামে দুই কন্যাকে নিয়ে বসবাস করতেন। তার স্বামী ডমিনিক রোজারিও চাকরি সূত্রে ফরিদপুরে থাকতেন। এসময় পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়ের জন্য বাড়ির অদূরে মোড়ের উপর শাহআলমের মুদি দোকান ঠিক করে দিয়ে যান ডমিনিক। সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় সদায় কেনাকাটা করতেন শিপ্রা।

এদিকে প্রতিবেশী আলম ফকির, সবুজ সরকার ও আবু হানিফ নানাভাবে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ জুলাই রাত ৯টার দিকে দোকানদার শাহআলম শিপ্রার ফোন পেয়ে কিছু সদায় দিতে তার বাড়িতে যায়। এসময় আলম ফকির ও সবুজ সরকার সেখানে গিয়ে শিপ্রা ও শাহআলমের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক আছে মর্মে অভিযোগ তুলে তাদেরকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে শিপ্রার শয়ন ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে দুজনকে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে, এরপর উভয়কে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে মোবাইলে ছবি তুলে। এরপর তারা শিপ্রার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন, উভয়ের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। বিষয়টি কাউকে জানালে জানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যায় তারা।

রাতেই বিষয়টি শিপ্রা তার স্বামী ডমিনিককে মোবাইল ফোনে জানান। তার পরামর্শে পরদিন সকালে বিষয়টি স্থানীয় মাতুব্বর হাবিবুর রহমান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামকে মৌখিকভাবে জানালে তারা এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দেন।

প্রতিবেশী এবং বোর্ণী ধর্ম পল্লীর পালকীয় সদস্য যোসেফ পালমা জানান, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে মীমাংশা করে দেয়ার জন্য বলেছিলেন শিপ্রার মা শান্তি পালমা। কিন্তু অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।

ডমিনিক রোজারিও বলেন, আমার অসুস্থতার কারণে সময়মত আসতে পরিনি। এখনো আমার শরীরে ১০৩ ডিগ্রি জ্বর। তাই কোন মন্তব্য করতে পারব না। সন্ধ্যায় মেয়েদের সাথে নিয়ে মোড়ের ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম ওষুধ নিতে ফিরে এসে দেখি শিপ্রা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

শ্রিপ্রার মা শান্তি পালমা বলেন, ১২ বছর আগে বিয়ে দিয়েছি মেয়ের। জামাই ডমিনিক বাইরে থাকে। শিপ্রা তার দুই মেয়ে দিয়া রোজারিও (১০) আর দিঘি রোজারিওকে (৫) নিয়ে বাড়িতে থাকে। তাই ভেবেছিলাম, স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসা করলে তারা ভবিষ্যতে বাড়িতে নিরাপদে ভাল থাকতে পারবে। মামলা করলে জামিনে এসে আরও অত্যাচার করবে। কিন্তু মীমাংসায় বিলম্ব হওয়ায় সবাইকে কাঁদিয়ে অভিমানে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করল শিপ্রা। যাদের জন্য আমার মেয়ে আত্মহত্যা করল, তাদের কঠিন শাস্তি চাই।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলিপ কুমার দাস বলেন, শিপ্রা ও তার মা বিষয়টি জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরক্ষণেই তারা মামলা না করে স্থানীয়ভাবে মীমাংসার কথা বলেন। তবু তাদের নিকট থেকে শুনে পুলিশ পাঠিয়ে অভিযুক্তদ্বয়কে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হয়েছে। তারা পলাতক রয়েছে তাই ধরা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরো বলেন, শিপ্রার লাশ উদ্ধার করে বুধবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে অভিযুক্ত আলম ও সবুজ পলাতক এবং তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

(ঢাকাটাইমস/৮আগস্ট/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :