জন্মের পর নাড়ি দ্রুত না কাটলে বুদ্ধি বাড়ে

যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন দেশেই প্রসবের সময়ে যে পদ্ধতি মেনে চলা হয়, হাতেকলমে প্রমাণ দেখিয়ে তার বিপরীত পথে হাঁটার কথা প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হলেন এক বাঙালি চিকিৎসক। ভারতের গুজরাত ও কলকাতার দুইটি হাসপাতালে সমান্তরালভাবে গবেষণা চালিয়েছিলেন তিনি।

গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুর জন্মের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আম্বিলিকাল কর্ড (নাড়ি) কেটে না দিয়ে যদি ওই অবস্থাতেই শিশুকে মায়ের বুকের উপরে রাখা হয় এবং প্লাসেন্টা স্বাভাবিকভাবে বেরিয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়, তা হলে শিশুর মস্তিষ্কে বেশি অক্সিজেন পৌঁছায়। যা পরবর্তী সময়ে তার বুদ্ধির যথাযথ বিকাশে সাহায্য করে। পাশাপাশি জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার সুযোগ থাকায় তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।

আমেরিকান জার্নাল অব পেরিনেটোলজি-তে এই গবেষণাপত্রটি সদ্য গৃহীত হয়েছে।

গুজরাতের একটি সরকারি হাসপাতাল এবং কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে এই বিষয় গবেষণা চালিয়েছেন তিনি। শিশুদের জন্মের পরে কর্ড কাটা হয়েছে, তাদের শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ এবং যাদের প্লাসেন্টা বেরিয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়েছে, তাদের অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করা দেখা গিয়েছে দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অক্সিজেন বেশি পৌঁছেছে।

চিকিৎসক অরুণ বলেন, ‘প্লাসেন্টা এবং বাচ্চার নাভির মাঝখানে ২০ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা টিউব থাকে, সেখানে রক্ত চলাচল করে। প্রসবের সময়ে কর্ডটি চার বা পাঁচ সেন্টিমিটার বের হওয়ার পরেই কাঁচি চালিয়ে দেওয়া হয়। বাকিটা মায়ের সঙ্গে থাকে। অথচ প্লাসেন্টা নিজে থেকে বেরিয়ে আসতে মিনিট পাঁচেক সময় লাগে।’

তিনি জানান, মায়ের গর্ভে অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইডের মধ্যে থাকে শিশু। প্রয়োজনীয় অক্সিজেন মায়ের কাছ থেকে প্লাসেন্টার মাধ্যমে পায় সে। জন্মের সঙ্গে সঙ্গে কর্ড কেটে দিলে সেই অক্সিজেন তার কাছে পৌঁছায় না। বাইরের বাতাস থেকে তাকে অক্সিজেন সংগ্রহ করে নিতে হয়। শুরুতেই সেই কাজে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। সেই জন্য জন্মের পরে বাইরের পৃথিবীতে মানিয়ে নেওয়ার সময়ে কয়েক মিনিট কর্ডটি মায়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা জরুরি। কর্ডটা না কাটলে কিছুটা অক্সিজেন সেখান থেকেই পাওয়া সম্ভব।

অরুণের ভাষ্য, ‘ওই পাঁচ মিনিট সময়টাকেও কিন্তু ব্যবহার করা হচ্ছে। জন্মের পরেই শিশুকে সরাসরি মায়ের বুকের উপরে দেওয়া হচ্ছে। গোটা পৃথিবী বলছে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে স্তন্যপান শুরু করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে একেবারে গোড়াতেই তা শুরু হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্লাসেন্টা থেকে যে রক্তক্ষয় হয়, সেটাও কমানো যাচ্ছে। ডাক্তাররা যে দিন থেকে প্রসব করাতে শুরু করলেন, তখন থেকেই কর্ড কাটার শুরু। কারণ দেখা গেল, এতে সময় কম লাগবে। প্রসবের সংখ্যা বাড়বে। সিজারিয়ান সেকশনে শিশু অক্সিজেন আরও কম পায়। অথচ পাঁচ মিনিট অক্সিজেন কম পেলে বুদ্ধির উপরে প্রভাব পড়ে।’

এই গবেষণাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন শিশু চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এসএনসিইউ-এর ইনচার্জ অসীম মল্লিক বলেন, ‘রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে এখন কর্ড দেরিতে কাটা হচ্ছে। এতে মস্তিষ্কে অক্সিজেন বেশি পৌঁছানোর পাশাপাশি রক্তাল্পতার সমস্যাও ঠেকানো যায়।’’

তবে অন্য মতও রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের কর্মকর্তা অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘ডিলেড কর্ড ক্ল্যাম্পিং বিষয়ে এখনও ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। আমার মনে হয় কর্ডটা বেশি সময় আটকে রেখে লাভ নেই। জন্মের পরে দ্রুত শিশুকে উষ্ণ করতে হবে। সেটাও জরুরি।’

কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজের আর এক শিশু চিকিৎসক বলেন, ‘যদি বাচ্চা জন্মে না কাঁদে, তা হলে রিসাসিটেশন করতে হয়। তখন কর্ড কেটে তড়িঘড়ি সেই ব্যবস্থা করা দরকার।’

(ঢাকাটাইমস/১৫এপ্রিল/এজেড)