ইবনে সিনা হাসপাতালে রুশ কিশোরীকে যৌন হয়রানি: অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৭ মে ২০২৪, ১২:১৫| আপডেট : ০৭ মে ২০২৪, ১৪:৩৪
অ- অ+

রাজধানীর কল্যাণপুরে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রুশ কিশোরীকে যৌন হয়রানির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় হাসপাতালটির ওয়ার্ড বয় আবুল কাশেমকে অভিযুক্ত করে চলতি মাসেই আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

মিরপুর মডেল থানা পুলিশ ঢাকা টাইমসকে এ তথ্য জানিয়েছে।

এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়ার অভিযোগ এনে মিরপুর থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী কিশোরীর মা, যিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে হাসপাতালের ১৪ তলায় সার্জারি ওয়ার্ডের একটি কেবিন কক্ষে রুশ কিশোরী ও তার মা অবস্থানকালে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। হাসপাতালের একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের অভিযুক্ত ওয়ার্ডবয় আবুল কাশেমকে তাৎক্ষণিকভাবে চাকরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ। ঘটনার পাঁচ দিন পর মামলা হলে ফরিদপুরের মধুখালী থেকে অভিযুক্ত আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন, হাসপাতালটির ওয়ার্ডবয় দ্বারা রুশ কিশোরীকে শ্লীলতাহানির যে অভিযোগ উঠেছে সেটা সত্য। মামলার তদন্তে গিয়ে তার অপকর্মের সত্যতা মিলেছে। পাশাপাশি হাসপাতালটিতে এর আগে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, সেসব নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জিজ্ঞাসাবাদ সম্পন্ন করে চলতি মাসে আদালতে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সী সাব্বির আহম্মেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, “আসামি আগেই আটক হয়েছে। সে কারাগারে আছে। আমরা তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। এ মাসেই তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়ে দেব।”

প্রথম পর্যায়ে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান মিরপুর মডেল থানার সাবেক এসআই নাসির আহমেদ। এর কয়েকদিন পর তাকে ধানমন্ডি থানায় বদলি করা হলে তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই মো. ফয়সাল রাব্বী ঈশান। এই তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, “মামলার আসামি আবুল কাশেম কারাগারে আছে। আমরা তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। এ মাসেই আদালতে অভিযোগপত্র দিয়ে দেব। তদন্তের কাজ আগের এসআই নাসির শুরু করেছেন। এরপর তার বদলি হলে আমার কাছে মামলাটি আসে।”

তিনি আরও বলেন, “গত মাসে তদন্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু খুঁটিনাটি কিছু জিজ্ঞাসাবাদ বাকি আছে। যার কারণে দিতে পারিনি।”

মামলার এজাহারে বলা হয়, রুশ কিশোরীর ডান হাতের বগলের নিচে একটি ফোঁড়ার অস্ত্রোপচারের জন্য গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টায় মেয়েকে নিয়ে কল্যাণপুরে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নারী রুশ কর্মকর্তা।

এজাহারে ভুক্তভোগী কিশোরীর মা বলেন, “সেখানে ডাক্তারের পরামর্শ মতে আমার মেয়েকে ভর্তি করা হয়। ঘটনার দিন রাত ২টার দিকে কর্তব্যরত ডাক্তার আনোয়ার হোসেন আমাদের কাছে এলেন এবং তার সঙ্গে নীল ইউনিফর্ম পরা আবুল কাশেম ছিলেন। ডাক্তার আমার মেয়ে পলিনাকে ফোঁড়া দেখাতে বললেন। ফোঁড়াটি যেহেতু সংবেদনশীল জায়গার কাছাকাছি ছিল তাই আমার মেয়ে বিব্রতবোধ করছিল জায়গাটি উন্মুক্ত করতে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কর্তব্যরত ডাক্তার বাংলায় তারপাশে থাকা নীল গাউন পরা ব্যক্তিকে (আবুল কাশেম) একজন নার্সকে ডাকতে নির্দেশ দিলেন। নার্স আসার পর ক্ষতস্থান দেখায়। সেই সময় নীল গাউন পরা ব্যক্তিটি (কাশেম) ঘর থেকে বের না হয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।”

এজাহারে আরও বলা হয়, “তখন কর্তব্যরত ডাক্তার কিংবা নার্স কেউই তাকে (কাশেম) রুম থেকে বের হতে নির্দেশ দেননি। এরপর ডাক্তার আমাকে বললেন যে তিনি অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে যাচ্ছেন এবং তখন উপস্থিত সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। প্রায় ১০ মিনিট পর ওই নীল গাউন পরিহিত ব্যক্তিটি (কাশেম) একা ফিরে আসেন এবং আমাকে বলেন, ডাক্তার জিজ্ঞাসা করেছেন পলিনার আগে ফোঁড়া ছিল কি না। আমি উত্তর দিলাম যে ‘হ্যাঁ’। তখন তিনি ‘সেটা ঠিক কোথায়’ দেখাতে বললেন। পলিনাকে আবার তখন কাপড় খুলতে হয়েছিল এবং স্বভাবতই তার ‘প্রাইভেট পার্ট’ সামান্য উন্মুক্ত ছিল।”

এজাহারে বলা হয়, পরে আবারও কাশেম ফিরে আসেন এবং ফোঁড়ার স্থানে মলম লাগানোর কথা বলেন। পরে রাত প্রায় ৩টায় তিনি আবারও ফিরে আসেন। তিনি ফোঁড়ার স্থান মুছে দেন। এ সময় কাশেম কিশোরীর শরীরের স্পর্শকাতর অংশে স্পর্শ করেন বলেও অভিযোগ করা হয় এজাহারে। সেই সময় চলে গেলেও আবারও ভোরে ফিরে আসেন কাশেম।

এজাহারে রুশ কর্মকর্তা বলেন, “যেহেতু তিনি অস্ত্রোপচারের অনুরূপ ইউনিফর্মে ছিলেন, একজন ডাক্তারের সঙ্গে এসেছিলেন এবং পরে রোগ নির্ণয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমরা সেই মুহূর্তে অনুমান করতে পারিনি যে তিনি আসলে একজন চিকিৎসা কর্মী নন। এরপর রাত সাড়ে তিনটার দিকে তিনি আবার মশার স্প্রে নিয়ে আসেন এবং তিনি আমাদের পানি লাগবে কি না জিজ্ঞেস করেন। তাকে আমার সন্দেহ হচ্ছিল। কারণ মেডিকেল স্টাফরা এই জাতীয় কাজ করে না। আমি তাকে চলে যেতে বললাম, আমরা তার ক্রমাগত উপস্থিতিতে অত্যন্ত ক্লান্ত এবং বিরক্ত ছিলাম।”

রুশ নারী কর্মকর্তা এজাহারে আরও বলেন, “সকাল সাড়ে ৬টায় ঐ ব্যক্তি (কাশেম) আমাদের ঘুম থেকে তুলে বললেন যে ফোঁড়ার চিকিৎসা করা দরকার। তার হাতে শুধু অ্যালকোহল প্যাড ছিল। গুগল ট্রান্সলেট ব্যবহার করে তিনি আমাকে বারান্দায় যেতে বললেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, আমি থাকলে তার চিকিৎসা কাজে ব্যাঘাত ঘটবে। তাকে অদ্ভুত ও নার্ভাস লাগছিল এবং তারপর আমি সবকিছু বুঝতে পেরেছিলাম। তখন আমি জোরে জোরে বললাম তাকে বের হয়ে যেতে এবং এখানে যাতে সে না আসে। আমি তাকে জোরে চিৎকার করে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিতে চাইলে তিনি আমার হাত ধরতে শুরু করলেন, ‘দুঃখিত’ এবং ‘না, না, না’ বলে চিৎকার করলেন। তিনি আমার হাত এত জোরে চেপে ধরলেন যে এটি একটি ক্ষত রেখে গেছে। আমি তাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে জোরে জোরে ইংরেজিতে বলেছিলাম আর কখনো এখানে আসবেন না।”

এ ঘটনার পরে ইবনে সিনা মেডিকেলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা রুশ নারী কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন বলে জানানো হয়েছে এজাহারে। পরে তিনি তার মেয়েকে নিয়ে অন্য হাসপাতালে চলে যান।

এ বিষয়ে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এডমিন ইনচার্জ নূরে আলম সবুজ ঢাকা টাইমসকে বলেন, “এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। বাকি আপডেট পুলিশ দেবে।”

(ঢাকাটাইমস/৭মে/এলএম/এফএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় দুই পুলিশকে সন্দেহভাজন আসামির হাতুড়িপেটা
ভেষজ দেশি গাব ক্যানসার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর
পাটগ্রাম সীমান্ত: দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ 
রেললাইনে ভিডিও করতে গিয়ে ফটোগ্রাফারের মর্মান্তিক মৃত্যু
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা