১০ বছর তালাবদ্ধ ইউপি ভবন, অস্থায়ী কার্যালয়ে চলে দাপ্তরিক কাজ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১০ মে ২০২৪, ১৭:৪৬

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ৬নং ফলসী ইউপি ভবনের নির্মাণ কাজ শেষে ভবন হস্তান্তরের ১০ বছর পার হলেও পরিষদের দাপ্তরিক কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। গত ১০ বছর ধরেই তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে ভবনটি। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলছে উপজেলা শহরের একটি অস্থায়ী কার্যালয়ে। প্রায় কোটি টাকার ব্যয়ে নির্মিত এ ভবন অব্যবহৃত থাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে পুরো উপজেলায়। সরজমিনে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে গৃহপালিত পশুর বিচরণ। পরিষদের প্রতিটা কক্ষের দরজায় ঝুলছে তালা। বারান্দায় পশুপাখির মলমূত্র। দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরকারের নবনির্মিত কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি ভবন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ইউপি চেয়ারম্যান হরিণাকুণ্ডু পৌর এলাকায় পরিত্যক্ত একটি ভবনে বসেই চালাচ্ছেন পরিষদের দাপ্তরিক কার্যক্রম। ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয় হওয়ায় নাগরিক সেবা নিতে আসা জনসাধারণের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

অথচ ওই ইউনিয়নের বিগত ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের দাবি, ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম থেকে নতুন ভবন দূরবর্তী হওয়ায় সেখানে লোকজন যেতে চায় না। ফলে ভবন নির্মাণের ১০ বছর পার হলেও সেখানে নতুনভাবে অফিস স্থানান্তর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। মাঝে মাঝে বড় পরিসরে নাগরিক সেবা কার্যক্রম হলে ওই নতুন ভবনে যাওয়া হয়। তাছাড়া সব সময় অস্থায়ী কার্যালয়েই চলে কার্যক্রম।

ফলসী ইউপি ভবন নির্মাণকারী সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে ফলসী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তিন তলা ভবনের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৬৭ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের ৫ জুলাই ‘শহর এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ সম্পন্ন করে পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে ভবন হস্তান্তর করে।

অথচ নতুন ভবনটি ব্যবহার না করে হরিণাকুণ্ডু পৌর বাজার সংলগ্ন এলাকায় একটি ভবনের ২য় তলায় চালানো হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম।

স্থানীয়রা জানান, আমাদের নতুন ইউনিয়ন পরিষদ ভবন দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সমস্ত কার্যক্রম শহরের অস্থায়ী একটি ভবনে করে থাকেন। বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বজলুর রহমান। তিনিও শহরের পরিত্যক্ত ওই ভবনে ইউনিয়নের কার্যক্রম চালান। তাছাড়া যে চেয়ারম্যানই নির্বাচিত হয়ে আসে তাদের নিজস্ব সুবিধার জন্য ওই পরিত্যক্ত ভবনকে পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। যেখানে পরিষদের সব ধরনের সেবামূলক কাজকর্ম হওয়ার কথা ছিল নতুন এই ইউপি ভবনে। কিন্তু সেটা না হওয়ার কারণে ইউনিয়নবাসীকে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন আলম বলেন, ১০ বছর ধরে তালাবদ্ধ নতুন এ ইউপি ভবন। যে চেয়ারম্যানই নির্বাচিত হয় তাদের সুবিধার্থে উপজেলা শহরের অস্থায়ী পরিত্যক্ত ভবনে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম করে থাকেন। প্রয়োজনের তাগিদে পায়ে হেঁটে দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার রাস্তা যেতে হয়।

এলাকার তারেক, বেল্টু, মিলুসহ কয়েক জন বলেন, পরিষদে আমাদের অনেক কাজ থাকে। আমরা কাজের জন্য আসি, কিন্তু এখানে কখনও চেয়ারম্যান বা কোনো মেম্বার আসেন না। মূল পরিষদ রেখে তাদের পছন্দমতো জায়গায় তারা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় স্থাপন করেছেন। সেখানে কোনোমতে কাজ করেন। যার ফলে আমরা সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছি পরিষদের সেবা থেকে।

ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বজলুর রহমান বলেন, ইউনিয়নের শড়াতালা,কুলবাড়িয়া বোয়ালিয়াসহ কয়েকটি গ্রাম থেকে নতুন ভবন দূরবর্তী হওয়ায় সেখানে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে ভবন নির্মাণ হলেও ১০ বছরে সেখানে নতুনভাবে অফিস স্থানান্তর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাছাড়া নতুন ইউপি ভবন এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না। তেমন কোনো হাট-বাজারও নেই। তাই উপজেলা শহরের একটি ভবনে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চালানো হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন বলেন, আমি কিছুদিন পূর্বে যোগদান করেছি। উদ্বোধনের ১০ বছরেও কার্যক্রম চালু হয়নি এটা দুঃখজনক। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১০মে/প্রতিনিধি/পিএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :