যেখানে অনন্য পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার

পুলিশ বাহিনীতে বরাবরই ঈদের ছুটি বিরল। মানুষ যখন উৎসব-আনন্দে মেতে ওঠে পুলিশ সদস্যরা ব্যস্ত থাকেন দায়িত্বে। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে। এবারের ঈদে এই দায়িত্ব আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জীবনের ঝুঁকি। তবুও দায়িত্বে অবহেলার সুযোগ নেই বিন্দুমাত্র।
কেউ আছেন ব্যারাকে, কেউ কর্মক্ষেত্রে। স্বজন-পরিজন রেখে দায়িত্বকেই বড় আপন করে নিয়েছেন তারা। তাই বলে নিরানন্দে কাটবে সহকর্মীদের ঈদ? তা কেন? সেই ভাবনা থেকেই ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে নামাজ শেষে পুলিশ লাইনসে সহকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার। কুশল বিনিময় আর তাদের পরিবারের খোঁজ নিয়েছেন আপন মানুষের মতো। ঈদের বড় আনন্দ সালামিও দিয়েছেন অনুজদের। মধ্যাহ্নভোজে পুলিশ লাইনস মেসের ডাইনিংয়ে উপস্থিত হয়ে তদারকি করেছেন সবকিছু। নিজের বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নের চেয়ে তা কম ছিল না কোনো অংশে। সবমিলে অনন্য এক দৃষ্টান্ত রেখেছেন তিনি।
সোমবার ঈদের দিনটি এভাবেই সহকর্মীদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন গাজীপুর জেলার পুলিশ প্রধান। তার ব্যতিক্রমী আন্তরিকতায় খুশি সহকর্মীরাও। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার এমন সৌজন্যবোধ তাদের আপ্লুত করেছে। খানিকের জন্য হলেও ভুলিয়ে দিয়েছে স্বজনের জন্য দুঃখবোধ। দায়িত্ব পালনের মাঝেও যে প্রাপ্তি আছে, তৃপ্তি আছে-হৃদয় দিয়ে তা অনুধাবন করেছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে গাজীপুরকে সুরক্ষিত রাখতে কাজ করছে জেলা পুলিশ। মানুষকে সরকারের নির্দেশনা মেনে ঘরে থাকতে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। করোনা নিয়ে গান বেঁধে তা গাওয়া হয়েছে জেলার বিভিন্ন আবাসিক এলাকা ও ব্যস্ত পথে। সংস্কৃতি ও শিল্পমনা পুলিশ কর্মকর্তা শামসুন্নাহারের তত্ত্বাবধায়নে পুরো কাজটিই করেছেন গাজীপুর পুলিশের সদস্যরা।
লকডাউন চলাকালে তা যেন সবাই মেনে চলেন, সেদিকেও সচেষ্ট দৃষ্টি রেখেছে জেলা পুলিশ। সাধারণ ছুটিতে হঠাৎ কর্মহীন দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের দুয়ারে পুলিশ সুপার নিজে ছুটে গেছেন খাদ্য সামগ্রী নিয়ে। ঈদের আগেও দীর্ঘদিন কর্মহীন গাজীপুরের পরিবহণ শ্রমিক ও দুস্থ মাঝে বিতরণ করা হয়েছে ঈদের উপহার, প্রয়োজনীয় খাবার। এসব কাজে পুলিশ সুপারের উপস্থিতি সহকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেছে। সাহস জুড়িয়েছে ভালো কাজের।
এছাড়া করোনা আক্রান্ত গাজীপুরের পুলিশ সদস্যদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতেও ভূমিকা রেখেছেন বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ২০ ব্যাচের কর্মকর্তা শামসুন্নাহার। যারা সুস্থ হয়ে ফিরেছেন তাদের ফুল ও উপহার দিয়ে বরণ করে নিয়ে সেখানেও রেখেছেন ব্যতিক্রমী নজির।
ঢাকা লাগোয়া অঞ্চল হিসেবে গাজীপুরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বরাবরই বেশি ছিল। তার ওপর হঠাৎ পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া এবং ঘর ছেড়ে মানুষ বেরিয়ে আসায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখায় ছিল বরাবরই চ্যালেঞ্জের। সেই কাজটিই সহকর্মীদের নিয়ে নিরলস করে যাচ্ছেন পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার। সম্প্রতি সময়ে তার নেওয়া নানা উদ্যোগ পুলিশ বাহিনীতে কেবল প্রশংসিতই হয়নি, সাধারণ মানুষের মধ্যেও বাহিনীর ভাবর্মূতিকে উজ্জ্বল করেছে। আস্থার জায়গা হয়েছে আরও মজবুত।
২০১৮ সালের ২৬ আগস্ট তিনি গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন শামসুন্নাহার। তিনি ২০০১ সালে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন। পরে মানিকগঞ্জ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, পুলিশ সদর দপ্তর, ট্যুরিস্ট পুলিশসহ বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯-২০১০ পর্যন্ত জাতিসংঘ মিশনের মাধ্যমে পূর্ব তিমুর জাতীয় পুলিশের মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্মকান্ডের দায়িত্বেও ছিলেন। এ ছাড়া ২০১১-২০১৪ পর্যন্ত জাতিসংঘের শাখা অফিস ইতালিতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। কর্মতৎপরতার গুণে তিনি ৭ বার জাতিসংঘ শান্তি পদক লাভ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ পুলিশে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম), ৩ বার আইজি ব্যাজ পান।
এছাড়াও তিনি ২০১৬ সালে উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। শিক্ষাজীবনেও মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০০৫ সালে এমফিল করেন। পরে স্কলারশিপ পেয়ে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন।
(ঢাকাটাইমস/২৫মে/এইচএফ)

মন্তব্য করুন