ওমরার জন্য জমানো টাকায় দুস্থদের পাশে এসআই জহির

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৭ মে ২০২০, ২২:৩২
অ- অ+

২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় পুলিশের চাকরিতে প্রবেশ করেন নোয়াখালীর কবিরহাটের জহির উদ্দিন। ১৯ বছরের পেশাগত জীবনে যেখানেই ছিলেন মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছেন। দুই দফা পদোন্নতি পেয়ে এসআই (উপ-পরিদর্শক) হয়েছেন। তাই মনে করেন দায়িত্বও বেড়ে গেছে। যে কারণে করোনা দিনে পরিবারের তিন সদস্যসহ ওমরা করার জন্য জমানো টাকা ব্যাংক থেকে তুলে অসহায় মানুষের সহায়তা করলেন জহির উদ্দিন।

পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) এসআই হিসেবে রাঙামাটিতে কর্মরত থাকলেও জহির উদ্দিন পূর্বের কর্মস্থল লক্ষীপুরের রামগঞ্জ, নিজ এলাকার মানুষের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন। কাউকে নগদ টাকা, কারো জন্য খাদ্য সামগ্রী, কাউকে আবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী দিয়েছেন পুলিশের এই এসআই।

নিজের জমানো টাকাই নয়, পরিচিতজনদের কাছ থেকেও সহায়তা সংগ্রহ করে তাও তুলে দিয়েছেন বিপদগ্রস্ত দুস্থ মানুষের হাতে। লোকলজ্জায় সহায়তা চাইতে পারেন না এমন মধ্যবিত্ত পরিবারও পেয়েছে তার সহায়তা।

ওমরার জন্য তিন বছর ধরে প্রত্যেক মাসের বেতন থেকে ব্যাংকে টাকা রাখছিলেন এসআই জহির উদ্দিন। তাতে প্রায় দুই লাখ টাকার মতো জমা হয়েছিল। দুই সন্তান ও স্ত্রীসহ সবার পাসপোর্টও তৈরি করে রেখেছিলেন। সহসাই ওমরা করার ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু সবকিছু উল্টে গেছে ক্ষুদ্র ভাইরাসের আক্রমণের তোড়ে।

জহির উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ওমরার জন্য জমানো টাকা অসহায় মানুষদের জন্য ব্যয় করেছি। আল্লাহ খুশি থাকলে তিনিই আমার ও আমার পরিবারের ওমরা করার ব্যবস্থা করে দেবেন এটা বিশ্বাস করি। কিন্তু এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তো সুযোগ পাবো না হয়তো।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাদিনেই নয়, জহির উদ্দিন রামগঞ্জে খুঁজে খুঁজে অসহায়, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কারো জন্য ঘরের ব্যবস্থা, কাউকে অন্যান্যদের সহায়তা নিয়ে দোকান করে জীবন চলার ব্যবস্থা করে দেয়া, কারো জন্য ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনে দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। অনেক প্রতিবন্ধী পেয়েছেন তার কাছ থেকে হুইল চেয়ার। যে কারণে রাঙামাটি যাওয়ার আগে রামগঞ্জে বদলি ঠেকাতে মানববন্ধন করারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তবে বদলি হয়ে গেলেও এখানকার মানুষকে ভুলেননি জহির উদ্দিন। করোনা শুরুর পর রামগঞ্জের যেসব মানুষকে আগে সহায়তা করেছিলেন তারা বিপদে আছেন শুনে সবাইকে সাধ্যমত নগদ অর্থ সহায়তা করেন।

জহির উদ্দিন বলেন, রামগঞ্জ ও নোয়াখালীর কবিরহাট রাঙামাটির দুই শতাধিক পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। শুভেচ্ছা হিসেবে খাদ্যসামগ্রী ও নগদ টাকা দিয়েছি। রাঙামাটিতে করোনা আক্রান্তদেরও বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। আত্মীয়দের মধ্যেও যারা সমস্যাগ্রস্ত ছিলেন তাদের সহায়তা করার চেষ্টা করেছি। কারণ এখন সবাই অসহায়।

হঠাৎ কী মনে করে ওমরার টাকা দিয়ে সহায়তা করার ইচ্ছা হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে জহির উদ্দিন বলেন, ‘করোনা শুরুর পর যখন দেখলাম মক্কা-মদিনাও লকডাউন, তখন ভাবলাম ওমরা হয়তো পরে করা যাবে। যেহেতু ভালো কাজের নিয়ত করেছি আল্লাহ অবশ্যই সুযোগ দেবেন। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম টাকাগুলো দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াই। মানুষের যদি একটু হলেও উপকার হয়।’

(ঢাকাটাইমস/২৭মে/বিইউ/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
প্রথম প্রেমের স্পর্শ: পর্ব ১২- স্মৃতির দংশনে হঠাৎ ঢাকায় ফেরা
বাংলাদেশিদের গোল্ডেন ভিসা দেবে দুবাই, দূর থেকে আবেদন করার সুযোগ
ফেনী পরিস্থিতির অবনতি, গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত, অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ বন্ধ
গাজায় মানবিক সংকটে ক্ষুব্ধ যুক্তরাজ্য, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেবে
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা