দারিদ্র্যে পরাধীন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার

সুজন সেন, শেরপুর
 | প্রকাশিত : ০৩ জুন ২০২০, ১৩:২১

ঊনিশ-কুড়ি বছরের টগবগে যে তরুণ অস্ত্র হাতে যুদ্ধে নেমেছেন, পাক-সেনাদের সঙ্গে লড়েছেন সম্মুখ সমরে, জিতে এনেছেন স্বাধীনতা। সেই তরুণের বয়স বেড়ে এখন ৭০। যক্ষা-হাপানিসহ নানা রোগে বিপর্যস্ত শরীর শয্যাগত। কয়েক বছর আগে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে হারিয়েছেন বাকশক্তিও। টাকার অভাবে চিকিৎসাও হচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধের পরে নানা পেশায় নিজেকে জড়ালেও কোনোটিতেই স্থায়ী হতে পারেননি। এখন পর্যন্ত সরকারি যে ভাতা পান তা দিয়েই জোড়াতালি দিয়ে চলছে শেরপুর জেলা শহরের নয়ানীবাজারের মাছ বাজার এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলীর সংসার।

এই মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, চলাচল ও বাকশক্তি হারিয়ে শুয়ে আছেন। বাড়ি জুড়ে চরম অর্থকষ্টের ছাপ। আশরাফ আলী দম্পতির আশা ছিল ছেলেরা বড় হয়ে সংসারের হাল ধরলে সুদিন আসবে। কিন্তু ছেলেদের একজন স্নাতকোত্তর করে এখনো বেকার। আরেক ছেলেও পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে।ভাতার টাকায় অসুস্থ আশরাফ আলীর চিকিৎসাই হয় না পুরোপুরি। এই অবস্থায় তার চিকিৎসা এবং তার সন্তানদের চাকরির জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়েছেন রণাঙ্গনের সহযোদ্ধারা।

তার সহযোদ্ধা ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শেরপুরের সাবেক জেলা ইউনিট কমান্ডার আবু সালেহ নূরুল ইসলাম জানান, আগে যেভাবেই হোক আশরাফ আলী জোড়াতালি দিয়ে সংসারটা টেনে নিচ্ছিলেন কোনো মতে। কিন্তু স্ট্রোকের পরে তার পরিবার পড়েছে অথৈ সাগরে।

নূরুল ইসলাম জানান, জেলার ১৫৬ জন গেজেটভুক্ত সুক্তিযোদ্ধার মধ্যে নাম আছে আশরাফ আলীরও।

তিনি বলেন, ৭১’এ শেরপুরে প্রথম অস্ত্র নিয়ে যে ১২ জন তরুণ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে আশরাফ আলী অন্যতম। ১১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের তত্ত্বাবধানে এবং কোম্পানি কমান্ডার জাফর ইকবালের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন আশরাফ আলী।

তিনি জানান, দেশ স্বাধীনের পর জীবিকার তাগিদে নয়ানী বাজারের নিজ বাড়ির পাশে ধান ভাঙানোর ব্যবসা শুরু করলেও তেমন আয় রোজগার না হওয়ায় ১৯৭৮ সালে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে। সেখানেও সুবিধা না হওয়ায় নি:স্ব হয়ে দেড় বছরের মাথায় দেশে ফিরে আসেন। এরপর সেভাবে আর কিছুই করা হয়ে ওঠেনি। এর মধে| যক্ষা ধরা পড়ে তার শরীরে। কিছুদিন পরে হাপানি বাসা বাধে শরীরে।

সাবেক কমান্ডার নূরুল ইসলাম জানান, ভারত সরকার প্রতিবছর বাংলাদেশের ১০০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। এক আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ২০১৯ সালে আশরাফ আলীকে ভারতে চিকিৎসার জন্য মনোনীত করে। কিন্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে সেই প্রক্রিয়া এখন বন্ধ রয়েছে। এখন প্রতিনিয়ত শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে আশরাফের।

তার সুচিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে নূরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে একটি লিখিত আবেদন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো হবে।

আশরাফ আলীর স্ত্রী হোসনে আরা বেগম জানান, তার স্বামী শারীরিকভাবে খুব বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছেন।পুরোপুরি শয্যা নিয়েছেন। তার প্রতিদিন প্রায় ৫০০ টাকার ওষুধ লাগে। ধার-দেনা করে চিকিৎসার খরচ জোগাড় হচ্ছে।

তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার স্বামীর উন্নত চিকিৎসার আবেদন জানিয়েছেন। পাশাপাশি তার যেকোনো একটি ছেলের জন্য চাকরি পাওয়ার ব্যাপারে সহযোগীতা কামনা করছেন।

ঢাকাটাইমস/৩জুন/পিএল

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :