ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ আর নেই

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা অ্যাডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।)
শনিবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব নাজমুল হক সৈকত ঢাকা টাইমসকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসাইন জানান, বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিএমএইচে নেয়া হয়। পরে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে তাকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তিনি আগে থেকেই ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন।’
আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করলে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান শেখ আবদুল্লাহ। গোপালগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। ওই এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তিনিই তত্ত্বাবধান করতেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে একাধিকবার ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এর আগে শনিবার সকালে মারা যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। একদিনে দুই কেন্দ্রীয় নেতার মৃত্যুতে দলের নেতাকর্মীরা শোকে মুহ্যমান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন। তিনি মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহর দাফনের বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, উনার করোনাভাইরাসের নমুনা নেয়া হয়েছে। রবিবার বেলা ১১টায় রিপোর্ট আসবে। এরপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
শেখ আবদুল্লাহর বর্ণাঢ্য জীবন
শেখ আবদুল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের কেকানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ মো. মতিউর রহমান এবং মাতা মোসাম্মৎ রাবেয়া খাতুন। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তিনি গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায় শিক্ষা জীবন শুরু করেন। এরপর সুলতানশাহী কেকানিয়া প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন।
১৯৬১ সালে একই বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। আযম খান সরকারি কমার্স কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৬৬ সালে বিকম (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এম.কম. এবং ১৯৭৪ সালে অর্থনীতি বিষয়ে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে ঢাকার সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
আবদুল্লাহ কর্মজীবনের শুরুতে সুলতানশাহী কেকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে গোপালগঞ্জ ও ঢাকা জজকোর্টে ওকালতি পেশায় জড়িত হন। প্রথমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের বোর্ড অব গভর্নরস-এর সদস্য ও পরবর্তী সময়ে ওই বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক ছিলেন।
আবদুল্লাহ ছাত্রজীবনে রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। আযম খান সরকারি কমার্স কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং সে সময় যুবলীগে যোগদান করে গোপালগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ১৯৭০ সালের সাধরণ নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুজিব বাহিনীতে যোগদান করে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর তিনি গোপালগঞ্জ জেলা শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। গোপালগঞ্জ-৩ আসনে শেখ হাসিনার সবকটি সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা ও কার্যক্রমে ভূমিকা পালন করেন।
আবদুল্লাহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আবদুল্লাহ এ আসনে শেখ হাসিনার পক্ষে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি ৭ জানুয়ারি ২০১৯ সালে শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
(ঢাকাটাইমস/১৩জুন/টিএ/জেবি)

মন্তব্য করুন