প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে বারডেম চিকিৎসকদের স্মারকলিপি
চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিসহ বেশ কিছু দাবিতে আন্দোলনরত বারডেম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসাররা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। স্মারকলিপিতে তারা তাদের দাবিগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি বারডেম জেনারেল হাসপাতালে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে সকল অনিয়ম, অবিচার ও দুর্নিতির অবসান ঘটানোর দাবি জানিয়েছেন।
বুধবার চতুর্থ দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ে গিয়ে এ স্মারকলিপি জমা দেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যখাতে নানাবিধ দূর্নীতির বিরুদ্ধে আপনি সোচ্চার হয়েছেন। অথচ বারডেম জেনারেল হাসপাতাল যেন এর উল্টো পথে চলছে। তারা এই মহামারি মোকাবেলায় ডাক্তারদের কোন প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে নাই, যথাযথ প্রস্তুতির ব্যবস্থা করে নাই । এমনকি তারা জুনিয়র ডাক্তারদের নূন্যতম জব সিকিউরিটি দিতে অগ্রাহ্য করেছে। এছাড়া বারডেম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসকদের বেতন কর্তন (৩০ হাজার টাকার মধ্যে ৭-৮ হাজার টাকা) করেছে, ঈদের বোনাস কর্তন করেছে, বৈশাখী ভাতা দেয়নি । কিন্তু চিকিৎসকগণ চরম ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছেন, একদিনের জন্যও রোগীদের সেবার বিঘ্ন ঘটাননি।’
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘করোনা মহামারির সূচনালগ্ন থেকে বারডেম জেনারেল হাসপাতালে করোনা, ডায়াবেটিস ও নানা জটিলতার রোগী আসতে থাকে। কিন্তু বারডেম জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার ফলে হাসপাতালে পিসিআর মেডিসিন থাকা স্বত্ত্বেও করোনা টেস্ট চালু করতে পারেনি। ফলে হাসপাতালে আসা রোগীদের ভোগান্তি বাড়তে থাকে এবং চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। কোভিড/ননকোভিড রোগী ভর্তির আলাদা প্রটোকল না থাকায় চিকিৎসাকার্য ক্রমে তীব্র বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। হাসপাতালে আসা রোগীদের করোনা টেস্ট করতে এবং রিপোর্টের জন্য বাহিরের ল্যাবের উপর নির্ভর করতে হয়। রিপোর্ট আসতে ২-৫ দিন দেরি হওয়ায়, এরমধ্যেই আমাদের অনেক ডাক্তার করোনা আক্রান্তরোগীদের এক্সপোজারে চলে যান। কোভিড/সাসপেক্টেড কোভিড পেশেন্টগন প্রায় সকল ফ্লোর ও ওয়ার্ডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় এবং করোনারোগীদের সেবার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রোস্টার পদ্ধতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবলম্বন না করায় চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের এক্সপোজার বাড়ছে এবং তাদের মৃত্যু ঝুঁকি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
দাবির কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ‘বিগত ৩ মাস ধরে আমরা মৌখিকভাবে আমাদের দাবি দাওয়া বারডেম কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি । পরবর্তীতে ৯ জুন বারডেম হাসপাতালের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি) বরাবর আমাদের দাবি দাওয়া সংক্রান্ত এপ্লিকেশন প্রদান করি। পরবর্তীতে আমরা বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট এর মিটিং পর্যন্ত অপেক্ষা করি এবং ২০ জুন আমরা আবারো ডিজি বরাবর স্মারকলিপি জমা দেই। তারপর, ২৫ জুন হাসপাতালের ডিরেক্টর জেনারেলের আহবানে, আমাদের প্রতিনিধিগণ উনার সাথে সাক্ষাত করেন। কিন্তু প্রতিবার ইডিজি ও বারডেম কর্তৃপক্ষ আমাদের যৌক্তিক দাবি কে অযৌক্তিক বলে আখ্যা দেন এবং তা পূরণে কালক্ষেপণের কৌশল অবলম্বন করেন। আমাদের বার বার আবেদন স্বত্ত্বেও আমাদের দাবিগুলো ২৭জুন ন্যাশনাল কাউন্সিলের মিটিংয়ে যথাযথ গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেননি। তথাপি, ন্যাশনাল কাউন্সিলের মিটিংয়ের ফলাফল আমাদের জানাতে গড়িমসি করেন এবং নির্দিষ্ট কোন তারিখে তা আমাদের জানাতে অস্বীকার করেন।‘
কর্তব্যরত চিকিৎসকদের জন্য পিপিই, মাস্ক, গ্লোবসসহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী সঠিকভাবে সরবরাহ করা হয়নি বলেও স্বারকলিপিতে জানানো হয়েছে। এছাড়া কর্মরত চিকিৎসকদের কয়েকজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলেও ‘তাদেরকে বারডেম কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করেছে। তাদের করোনা টেস্ট করার ব্যবস্থা পর্যন্ত করে নাই’ বলেও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে গত রবিবার থেকে চাকরিস্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন রাজধানীর শাহবাগের বারডেম হাসপাতালের আরএমও, সিএ, এম (অস্থায়ী) পদের চিকিৎসকরা।
ঢাকাটাইমস/০২জুলাই/কারই