অসহায় পরিবারের ‘জমি দখল’ করে উল্টো মামলা

ইকরামুল আলম, ভোলা
 | প্রকাশিত : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৮:২৭

ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের অসহায় তিন পরিবারের জমি জবর দখলের অভিযোগ উঠেছে ভূমিদস্যু নাজিমউদ্দিন গ্যংয়ের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় নাজিমউদ্দিন ওই পরিবারগুলোকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

অভিযোগ রয়েছে, নাজিম ও তার মামা ইউনুছ দরবেশ মিলে গত ১০ বছর ধরে টাকা ও ক্ষমতার জোরে এ অসহায় পরিারের জমিতে বাড়িঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। একাধিকবার স্থানীয়ভাবে সালিশে বসলেও নাজিমউদ্দিন সালিশে উপস্থিত না হওয়ায় এসব জমি উদ্ধার করা যায়নি।

ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আব্দুল মান্নানের মেয়ে রহিমা খাতুন জানান, তার বাবার চর রমেশ মৌজার ৭৬ নম্বর খতিয়ানের ১৭৩৮ ও ১৭৩৯ দাগের ডোবা ও বাড়ির ৩৫ শতাংশ জমির ওয়ারিশসূত্রে মালিক তারা চার বোন রিজিয়া খাতুন, মাহমুদা খাতুন, রহিমা খাতুন ও জাহানারা খাতুন। বাবা মারা যাওয়ার পর একেক বোন পৌনে নয় শতাংশ করে জমির মালিক হয়। এর মধ্যে জাহানারা বেগম নাজিমউদ্দিনের কাছে সোয়া পাঁচ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। এ সোয়া পাঁচ শতাংশ জমির দলিল নিয়ে ক্ষমতা ও টাকার জোরে নাজিমউদ্দিন ও তার মামা ইউনুছ দরবেশ তাদের আরো প্রায় ২০ শতাংশ জমি দখল করে নেয়। একই অভিযোগ করেন রিজিয়া ও মাহমুদা খাতুনও।

রহিমা খাতুনের ছেলে জামাল বলেন, গত দুই বছর ধরে আমার মা-খালাদের জমি নাজিমউদ্দিন ও ইউনুছ দরবেশের কাছে ফেরত চাইলে তারা নানা টালবাহানা শুরু করে। এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ভেদুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে মামলা দেই। মামলার এক মাসের মাথায় নাজিমউদ্দিন কাগজপত্র নিয়ে হাজির না হওয়ায় পরিষদ থেকে মামলাটি খারিজ করে দেয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে নাজিমউদ্দিন গ্যংরা ওই জমির গাছ কাটতে গেলে আমরা বাধা দেই। ওইসময় ফাঁড়ির পুলিশ এসে গাছকাটা বন্ধ করে দেয়। এবং উভয়পক্ষকে জমির কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলে। পরে ফাঁড়ির পুলিশ ও স্থানীয় গণ্যমান্যদের উপস্থিতিতে কাগজপত্র নিয়ে বসলে নাজিউদ্দিন গ্যং আমার খালা জাহানারা খাতুন থেকে ক্রয় করা সোয়া পাঁচ শতাংশ জমির কাগজ দেখাতে পারে। বাকি কাগজ দেখানোর জন্য তিন বারে প্রায় দুই মাসের সময় নিয়েও আজ পর্যন্ত কোনো কাগজ দেখাতে না পেরে গত ২৫ জানুয়ারি আদালতে আমাদের বিরুদ্ধ একটি মিথ্যা মামলা করে। আদালত আগামী ৭ এপ্রিল তারিখে উভয় পক্ষকে হাজিরে হয়ে নিজেদের বক্তব্য পেশ করার আদেশ দেন। একইসঙ্গে ওই জমিতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আদেশ দেন।

জামাল আরো জানায়, ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম মাস্টার আমাদের জমি মেপে দেয়ার কথা বলেও তা দেয়নি। নাজিউদ্দিন গ্যং স্থানীয় কোনো শালিস মানে না। তারিখ দিয়েও তারা আসে না। আমরা গরিব হওয়ায় তারা টাকার জোরে আমাদের জমি জোর করে দখল করে আছে। একইঙ্গে তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে আমাকে ও আমার বাবা আব্দুল অদুদকে আসামি করছে। ভবিষ্যতে তারা নিজেদের মধ্যে মার্ডার করেও আমাদের আসামি করবে। আমরা এ ভূমিদস্যু নাজিমদের কবল থেকে বাঁচতে চাই।

তবে নাজিমউদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা ২০১৮ সালে আবু তাহের গ্যংয়ের কাছ থেকে এ জমি ক্রয় করেছি। তারা আমদের বাড়ির মধ্যে কোনো জমি পাবে না। বরং আমাদের ক্রয়কৃত জমিও সবটুকু বুঝে পাইনি।’

এ বিষয়ে ভেদুরিয়া ইউনিয়নে পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম মাস্টার বলেন, ‘আমি উভয়পক্ষের মধ্যে মিমাংসার জন্য চেষ্টা করেছি। আমার আদালতে একটি মামলা ছিল। কিন্তু ভিএস জরিপ গেজেট না হওয়ায় আমি মামলাটি খারিজ করে দিয়েছি। এছাড়াও একটি পক্ষ খুব অসহায়। সেদিকে লক্ষ রেখে জমিটি মাপার জন্য চেষ্টা করি। কিন্তু এর আগেই নাজিমউদ্দিন গ্যং মামলা করার কারণে সেটি করা যায়নি। তারপরও আমি চেষ্টা করছি যাতে বিষয়টি নিয়ে কোনো ঝামেলা না হয়।’

(ঢাকাটাইমস/১২ফেব্রুয়ারি/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :