উঠানে-উঠানে শিশুদের শহীদ মিনার

রেজাউল করিম,টাঙ্গাইল
 | প্রকাশিত : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:২৭

করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রতিবছরের মতো এবার উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে শহীদ মিনারে ভীড় দেখা যায়নি। প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি উদ্যোগে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেও তা নিতান্তই ছিল স্বল্প পরিসরে। বিশেষ করে শিশুদের তেমনটা দেখা মেলেনি শহীদ মিনারের সামনে।

এমন পরিস্থিতিতে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে নিজ-নিজ উদ্যোগে উঠানে উঠানে শহীদ মিনার তৈরি করেছে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার শিশুরা। তিনটি কলাগাছ আর কিছু রঙিন কাগজ। তাই দিয়ে তৈরি ভালোবাসার শহীদ মিনার।

রবিবার সকালে দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের মঙ্গলহোড় গ্রামে গিয়ে এমন কিছু শিশুকে নজরে পড়লো। উৎস, স্নেহা, স্নিগ্ধা, স্বাধীন,খাদিজা। ওদের বয়স ৭ থেকে ১০। প্লে থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ওরা। প্রতিবছর নিজ নিজ স্কুলে যায় ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে। করোনাভাইরাসের আক্রমণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে স্কুল বন্ধ রয়েছে। এবার স্কুল বন্ধ থাকায় ওরা স্কুলের শহীদ মিনারে যেতে পারেনি। পারেনি ফুল দিতে। পারেনি প্রভাতফেরিতে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি গাইতে। তাই ওরা বাড়ির উঠানেই তৈরি করেছে শহীদ মিনার। যথাসময়ে শ্রদ্ধার সঙ্গে ভাষা শহীদদের স্মরণ করেছে। শহীদ মিনার তৈরিতে যে টাকা লেগেছে সেটাও বাবা-মায়ের কাছ থেকে ওরা নেয়নি। দোকান থেকে কিছু কিনে খাওয়ার জন্য মা-বাবার থেকে নেওয়া টাকা জমিয়ে ওরা শহীদ মিনার তৈরি করেছে। পাশের বাড়ি থেকে প্রত্যেকেই একটি করে গোলাপও সংগ্রহ করেছে। ওদের একজন একটি ফুলের স্টিকও কিনে এনেছে। ওদের ভাবনা নজর কাড়ার মতো।

স্নেহা বলেন, ‘১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন রফিক, সালাম, বরকত, শফিউর, জব্বারসহ অনেকে। তাদের রক্তে মায়ের ভাষা ফিরে পেয়েছে বাঙালি জাতি। একুশের এই দিনে ভাষা শহীদদের স্মরণ করে আসছে দেশবাসী। স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা শহীদ মিনারে যেতে পারিনি। তাই বাড়িতে শহীদ মিনার তৈরি করে শহীদদের স্মরণ করেছি।’

ভাষার জন্য শহীদদের আত্মত্যাগের ইতিহাসও জানে এসব শিশু-কিশোররা।

তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া উৎস বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি জড়িত একটি দিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন করেত গিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন অনেকে।’

ওদের পাশেই আরেক মহল্লায় দেখা মিলল ইনছান নামের আরেক স্কুল পড়ুয়া শিশু তার সহপাঠী নিয়ে তৈরি করেছে আরেকটি শহীদ মিনার। কিছু দূরে দেখা গেল শিমুল নামে আরেকজন স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী তাদের উঠানে তৈরি করেছে শহীদ মিনার। ওর সহপাঠীরা ওই শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

শুধু উৎস, ইনছান বা শিমুল শহীদ মিনার তৈরি করেনি। স্কুল বন্ধ থাকায় পুরো জেলায় শিশুরা এবার উঠানে-উঠানে শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছে। এসব শহীদ মিনারের বেশির ভাগ বানিয়েছে শিশুরা। জেলার বিভিন্ন এলাকায় উঠানে বানানো অস্থায়ী শহীদ মিনারগুলোকে ঘিরে শিশুদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো।

পাথরাইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ চাঁন খা বলেন, ‘শিশুদের এমন উদ্যোগ নজর কাড়ার মতো। শিশুদের এমন আগ্রহ দেশ ও জাতির প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।’

(ঢাকাটাইমস/২১ফেব্রুয়ারি/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :