মন্ত্রীর মোবাইল ফোন চুরির মামলায় কী আছে? সাজাই বা কী?

দেশের মন্ত্রিসভার একজন সদস্যের মোবাইল ফোন চুরি যাওয়ার ঘটনায় নানা জল্পনা-কল্পনা সাধারণ মানুষের মধ্যে। রাজধানীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মোড়ে গাড়িতে বসা মন্ত্রীর হাত থেকে কীভাবে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে? এটা সাধারণ কোনো ছিনতাইকারীর কাজ বা নাকি অন্য অপেশাদার কারও কাজ? এ ঘটনায় কোন ধারায় মামলা হয়েছে, ওই ধারায় সাজা কী?
মোবাইল ফোনটি চুরি বা ছিনতাই হয়েছে সাত দিন হয়ে গেছে। সেটি উদ্ধারে এত দেরি হচ্ছে কেন? অপরাধীকে শনাক্ত করতে বা কেন এত দেরি হলো?
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অপরাধের বিচার খুব একটা হয় না। ফলে চুরি-ছিনতাই অহরহ হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
আর পুলিশ বলছে, এটা কোনো মাদকসেবীর কাজ। ওই এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা নেই, যার জন্য অপরাধী শনাক্ত করতে দেরি হয় তাদের।
গত ৩০ মে একনেক সভা শেষে বাসায় ফিরছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সন্ধ্যা সাতটার দিকে পথে বিজয় সরণিতে যানজটে পড়েন তিনি। তখন মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্রাউজ করছিলেন মন্ত্রী। এ সময় গাড়ির জানালা খোলা ছিল। আচমকা কেউ একজন তার মুঠোফোন ছোঁ মেরে নিয়ে পালায়। পরদিন সাংবাদিকদের এমনটাই বলেন মন্ত্রী।
তবে মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কাফরুল থানায় চুরির অভিযোগে মামলা করেন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর।
এজাহারে বলা হয়, পরিকল্পনামন্ত্রী রবিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে অফিস থেকে সরকারি গাড়িতে করে বেইলি রোডে নিজ বাসার উদ্দেশে রওনা হন। বিজয় সরণি ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়ানো অবস্থায় সন্ধ্যা সাতটার দিকে মন্ত্রী গাড়ির জানালা খুলে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। ওই সময় অজ্ঞাতনামা এক চোর মন্ত্রীর ব্যবহৃত আইফোন এক্স হাত থেকে টান মেরে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। গাড়িতে বসা মন্ত্রীর গানম্যান অজ্ঞাতনামা ওই ছিনতাইকারীর পেছনে ধাওয়া করলেও সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিমুজ্জামান বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয়ের মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনায় একটা ধারাতেই মামলা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৩৭৯ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।’
এটি চুরির মামলা। এই সাজা সম্পর্কে দণ্ডবিধির ৩৭৯ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি চুরি করে, সে ব্যক্তি যেকোনো বর্ণনার কারাদণ্ডে, যার মেয়াদ তিন বছর হতে পারে বা জরিমানা দণ্ডে বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।
এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ছিনতাই হলো বলপূর্বক কারও কাছ থেকে কোনো জিনিস নিয়ে নেওয়া। শুধু বলপূর্বক না, কৌশলে নেয়াও ছিনতাই। মন্ত্রীর মোবাইল ফোনের ঘটনায় মামলা হয়েছে চুরির অভিযোগে। চুরির সাজা তিন বছর। মন্ত্রীর ফোন চুরির ঘটনায় ছিনতাইয়ের মামলা হলে সেটি প্রমাণ সাপেক্ষে অপরাধীর সাজা হবে।’
ফোনটি উদ্ধারে দেরি হওয়ার পেছনে তদন্তের গাফিলতি কারণ বলে মনে করছেন সুপ্রিম কোর্টের ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ শিশির মনির। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এ ঘটনার মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। মোবাইল ফোনটি কোথায় আছে সেটিও জানতে না পারা তদন্তের দুর্বলতা। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে এ মোবাইল ফোন উদ্ধার করা যেত। কিন্তু এখনো করা যায়নি। মোবাইলের আইএমই নম্বর ধরে মোবাইলটি উদ্ধার করা যেত। সংশ্লিষ্ট মোবাইল কোম্পানির কাছে এই সেটের আইএমই নম্বর সংরক্ষিত আছে।’
বিচার না হওয়ায় এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে দাবি করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মাদ ফারুক হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘চুরি-ছিনতাই ঘটনার বিচার ও সাজা হয় খুব কম। এ কারণে এসব অপরাধ বেড়ে চলছে। করোনা পরিস্থিতির কারণেও মানুষ অভাবে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।’
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, মন্ত্রীর মোবাইল ফোনটি উদ্ধার না হলেও অপরাধীকে শনাক্ত করতে পেরেছে তারা। শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি জানান পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার আ স ম মাহতাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ওই ছিনতাইকারীর নাম-ঠিকানাসহ বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। সে রাস্তার মুখে স্থাপিত উড়োজাহাজের ভাস্কর্যের নিচে ঘুমাত। তাকে ধরতে অভিযান চলছে।’
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থল বিজয় সরণির উড়োজাহাজ ক্রসিংয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। পুলিশ আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করে বিশ্লেষণ করেছে। কিন্তু কিছুই পায়নি। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিনতাইয়ের ঘটনা নয়। কোনো মাদকসেবী সুযোগ বুঝে ছোঁ মেরে মুঠোফোনটি নিয়ে চলে যায়।
ওই ঘটনার পর রাজধানীর বিজয় সরণি, তেজগাঁও, চন্দ্রিমা উদ্যান, কাফরুল এলাকার ১০-১২ জন চিহ্নিত ছিনতাইকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এ ছাড়া চন্দ্রিমা উদ্যানের ভেতরের টোকাই-ছিনতাইকারী, শেরেবাংলা নগর মাঠসংলগ্ন এলাকার টোকাই, আগারগাঁওসহ আশপাশ এলাকার স্থানীয় ও সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে জানা গেছে।
মন্ত্রীর মোবাইল ফোন উদ্ধারের সর্বশেষ তৎপরতা সম্পর্কে আজ সন্ধ্যায় কাফরুল থানার ওসি সেলিমুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, এখনো মোবাইল ফোনটি উদ্ধার হয়নি। তবে জোর প্রচেষ্টা চলছে।
(ঢাকাটাইমস/০৫জুন/মোআ)

মন্তব্য করুন