শেখ হাসিনা এক গৌরবোজ্জ্বল আদর্শের প্রতীক

সৈয়দ আবুল হোসেন
| আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২১, ১৫:০৮ | প্রকাশিত : ১১ অক্টোবর ২০২১, ১৪:৫০

শেখ হাসিনা আজ আমাদের প্রধানমন্ত্রী। জনগণের নেত্রী। জনমানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিভূ। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার রূপকার। শেখ হাসিনা এখন শুধু আর ব্যক্তি নন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। যাঁর অনুপ্রেরণা, প্রণোদনা এবং নেতৃত্বে বাংলার মানুষ স্বপ্ন দেখেছে। সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ায় উদ্দীপ্ত হয়েছে। শেখ হাসিনা এক গৌরবোজ্জ্বল আদর্শের প্রতীক। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির সার্থক উত্তরাধিকারী। দেশগড়ার আলোকবর্তিকা। গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আপসহীন নেত্রী। তিনি জনগণের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভাবেন। তিনি প্রগতিশীল ভাবনার অধিকারী। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে অগ্রসরমান রাজনৈতিক নেতা। তিনি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় আত্মপ্রত্যয়ী। আজ আমাদের জননেত্রী। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেত্রী। আওয়ামী লীগের নৌকা আজ তাঁর কর্মগুণে জাতীয় প্রতীক। রাজনীতির প্রতীক। দেশের উন্নয়নের প্রতীক।

শেখ হাসিনা বিশ্বনেত্রী

শেখ হাসিনা দেশপ্রেম, মানবিকতাবোধ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার জন্য আজ আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে অবদান রেখে নিজের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি আজ আন্তর্জাতিক নেত্রী। তাঁর কর্ম ও দক্ষতার মাধ্যমে তিনি বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ ক্ষমতাশীল ব্যক্তি হিসেবে আজ বিবেচিত। ‘ফোবর্স’ সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ২০২০ সালে তাঁর অবস্থান ছিল ৩৯তম। ২০১৯ সালে ছিল ২৯তম এবং ২০১৮ সালে ২৬তম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ফরেইন পলিসি’ নামক সাময়িকীর করা বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০০ বৈশ্বিক চিন্তাবিদের তালিকায় শেখ হাসিনা জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি বিশ্বনারী পরিষদের একজন সদস্য। এটি বর্তমান ও প্রাক্তন নারী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীদের একটি সংগঠন। তিনি আজ শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের মর্যাদায়ও অভিষিক্ত। কথায় বলে, “শব্দের চেয়ে কাজ উচ্চৈঃস্বরে কথা বলে।” প্রধামন্ত্রীর কাজ এবং উন্নয়নই আজ তাঁকে দেশে-বিদেশে মহান নেতায় পরিণত করেছে। অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, আত্মপ্রত্যয় ও দূরদর্শিতাই শেখ হাসিনাকে বিশ্বনেত্রীর আসনে সমাসীন করেছে।

শেখ হাসিনা সুন্দরের প্রতীক

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহীয়সী বঙ্গজননী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা। টুঙ্গিপাড়া নিভৃত পল্লীতে ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরে তাঁর জন্ম। তাঁর নামটি দিয়েছিলেন দাদা শেখ লুৎফর রহমান। আনন্দের আতিশয্যে নাতনির জন্মের পর দাদা শেখ লুৎফর রহমান বাড়ির সবাইকে ডেকে বলেছিলেনÑ “আমার নাতনি কেবল দেখতেই সুন্দর হবে না, মনের দিক থেকেও সে হবে সমান সুন্দর”।

শেখ হাসিনা- এই নামের অর্থের সাথে, শেখ হাসিনার কর্মের, দায়িত্ব পালনের, অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দৃঢ়তার মধ্যে একটি মিল রয়েছে। রয়েছে একটি অপূর্ব যোগসূত্র। ‘হাসিনা’ শব্দের অর্থ সুন্দর, যিনি সুন্দরের প্রতীক। সুন্দর মনের, সৎ চরিত্রের অধিকারী। সত্যের সন্ধানী। ন্যায়-বিচারে অটল এবং কল্যাণ ও মঙ্গলময় কাজে অগ্রগামী। সুন্দর ও সফল নেতৃত্বদানে সক্ষম। ভালো কাজে উদ্দীপ্ত করতে পারঙ্গম। যিনি মহৎ হৃদয়, দরদী-মন ও দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত। যিনি জাগতিক লোভ-লালসামুক্ত উন্নত ও সংস্কৃতিবান মানসিকতার অধিকারী। ‘হাসিনা’ শব্দের অর্থের এই ব্যাপকতা এবং পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের পদবি ও তাঁর রাজনৈতিক ঐতিহ্য শেখ হাসিনাকে কর্তব্য নির্ধারণে উদ্বুদ্ধ ও আপসহীন করেছে। দায়িত্ব পালনে নিজেকে জনগণের নেত্রী হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হয়েছে।

শেখ হাসিনা: পঙ্কিল রাজনীতির পথ অতিক্রম

আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনাকে একটি বিরূপ রাজনৈতিক পরিবেশ মোকাবেলা করে বড় হতে হয়েছে। পিতা শেখ মুজিব নির্যাতিত, শৃঙ্খলিত বাঙালি জাতির স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন। জনগণের অধিকার আদায়ে তাঁকে বিসর্জন দিতে হয়েছে জীবনের সব সুখ-আনন্দ। পাকিস্তান আমলে বছরের পর বছর, থেমে থেমে ১৩ বছর শেখ মুজিব, আজকের বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতাকে কারাগারের অন্তরালে থাকতে হয়েছে। ফলে শেখ হাসিনা পিতার আদর কাছে থেকে পাননি। পিতার স্নেহ থেকে তিনি বঞ্চিত ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর পিতা বঙ্গবন্ধুর দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের উদ্যোগ যখন সফল হতে চলেছে, তখনই এলো কুচক্রীদের চরম আঘাত। সপরিবারে হত্যা করা হলো জাতির জনককে। ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫। এক রক্তাক্ত বিশ্বাসঘাতকের ইতিহাস রচিত হলো বাংলাদেশে। গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করা হলো। আবার শুরু হলো ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, কুটিল পৈশাচিক রাজনীতি। দেশের ভাগ্যাকাশে দেখা দিলো অন্ধকারের ঘনঘটা। বাংলার মানুষের বুকে আবার চেপে বসলো মীরজাফর, জল্লাদবাহিনী তথা সামরিক শাসন। এ সময় শেখ হাসিনা ও ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধু চলে গেলেন। দুই কন্যাকে উত্তরসূরি হিসেবে রেখে গেলেন। আর মহান আল্লাহ শেখ হাসিনাকে বাবা-মা, ভাই ও নিকট আত্মীয়দের শোক সইবার জন্য, বাঙালি জাতির ভার বইবার জন্য বাঁচিয়ে রাখলেন।

শেখ হাসিনা: পিতার আরাধ্য কাজের চালিকাশক্তি

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর পিতার আরাধ্য কাজ, অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব পড়লো শেখ হাসিনার ওপর। পিতার অবয়বে, পিতার আদর্শে তিনি দায়িত্ব নেন এই বাংলার মানুষের হারানো অধিকার ফিরিয়ে আনার। প্রায় তিন দশক তিনি সংগ্রাম করেন, দায়িত্ব পালন করেন জনগণের কল্যাণে। এ সময় তাঁকে বড় দুঃখ, বড় সংকট ও বিপর্যয়ের মধ্যদিয়ে হাঁটতে হয়েছে। তাঁকে কঠোর, বক্র, সর্পিল পথ ধরে চলতে হয়েছে। লক্ষ্য নির্দিষ্ট করতে হয়েছে। লক্ষ্যস্থলে পৌঁছতে হয়েছে। এ সময় তাঁকে জনগণকে নিয়ে দুই দুইটি সামরিক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে। আন্দোলন করতে হয়েছে অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে। এজন্য একাধিকবার তাঁকে অন্তরীণ ও সেনা ছাউনিতে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। জেলে যেতে হয়েছে। কিন্তু সকল অপশক্তি তাঁর নেতৃত্বের কাছে পরাজিত হয়েছে। গণতন্ত্র ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন পিতা বঙ্গবন্ধুর ন্যায় অবিচল, অটল ও দুর্বার।

শেখ হাসিনা: দেশের রাজনীতি

১৯৮১ থেকে ২০২১। বাংলার ইতিহাসে শেখ হাসিনার বিচরণ উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো। তিনি একটি রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে উঠে এসেছেন। যে রাজনৈতিক পরিবেশ আজকের পর্যায়ে তাঁকে নিয়ে এসেছে। রাজনীতির আদর্শ পুরুষ পিতা শেখ মুজিব তাঁর কাছে রাজনীতির হাতে খড়ি। প্রথম থেকে, ছাত্রজীবন থেকে তিনি ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সেই থেকে তিনি রাজনীতির মাঠে। দেশের কাজে। সারা বাংলার মাঠে-প্রান্তরে। তিনি পথ চলেছেন, সামনে এগিয়েছেন। এই দীর্ঘ রাজনীতি জীবনে, কর্মজীবনে তাঁর দায়িত্ব পালন পর্যালোচনা করলে, শেখ হাসিনার চরিত্রের ও নেতৃত্বের দৃঢ়তা ও তাঁর মানবিক গুণাবলীর অপূর্ব সমাহার দেখা যায়। তাঁর এই মানবিক গুণাবলী এবং সরল জীবনযাপন তাঁকে দেশের মানুষের কাছে অনুকরণীয় করে তুলেছে। দেশবাসীর কাছে মহান করে তুলেছে তাঁকে, তাঁর প্রতিটি কাজকে। গ্রহণ ক্ষমতা, সাহস, ধৈর্য দিয়ে, বিপদে মুষড়ে না পড়ে তিনি জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও অগ্রগামী করেছেন। তিনি আজ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ন্যায় দেশের অবিসংবাদিত নেতা। দেশের উন্নয়ননেত্রী।

যে রাজনীতি বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যে আদর্শে বঙ্গবন্ধু বাংলার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন- সে রাজনীতি নানা পঙ্কিল আবর্তে ঘুরলেও তাকে আবার সঠিক প্রবাহে, গণতান্ত্রিক পথে, ইতিহাস নির্ধারিত স্থানে নিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব সম্পর্কে বলেছিলেন- “আমি ক্ষমতার জন্য রাজনীতিতে আসিনি। এসেছি একটি হারানো স্বপ্ন উদ্ধার এবং একটি রক্তাক্ত আদর্শের পতাকা আবার তুলে ধরার জন্য। কোনো কিছু পাওয়ার জন্য আমি জেল-জুলুম ও গুলির মুখে বুক পেতে দেইনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে যে ৩০ লাখ ভাইবোন শহীদ হয়েছিলেন, সেই বীর শহীদদের স্বপ্ন হায়েনারা ঘরে তুলতে দেয়নি। সেই বীর শহীদদের স্বপ্ন সফল করা এবং জিয়া-এরশাদ পদ্ধতির স্বৈরশাসনের কবল থেকে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে উদ্ধার করার লড়াইয়ে আমি নিজেকে উৎসর্গ করেছি।”

শেখ হাসিনা: আওয়ামী লীগকে সরকারের হর্সসিটে নিয়ে আসা

শেখ হাসিনা আদর্শে অটল এবং অনড়। কোনো ধরনের প্রবঞ্চনা, কোনো ধরনের প্রলোভন, লালসা তাঁকে আদর্শ থেকে সরাতে পারেনি। কর্তব্যবোধ থেকে এতটুকু বিচ্যুত করতে পারেনি। ১৯৮১ সালে সরাসরি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার পর শেখ হাসিনা কখনো বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জিয়ার ক্ষমতা গ্রহণÑ মেনে নেননি। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নানা কৌশল গ্রহণ করে স্বৈরাচার হটিয়েছিলেন। তিনিই ১৯৯০ সালে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা দেন। যেই রূপরেখার আলোকে পরবর্তীতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ নির্বাচনে হঠকারী ষড়যন্ত্র হলেও গণতন্ত্র রক্ষার কারণে, গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি বিএনপি সরকারকে দেশ পরিচালনায় সাহায্য করেছিলেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ষড়যন্ত্রের নির্বাচন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণে, আপসহীনতার কারণে ভণ্ডুল হয়ে যায়। গণঅভ্যুত্থানে খালেদা জিয়া সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শতকরা ৩৮ ভাগ ভোট পেয়ে সরকার গঠন করে। শেখ হাসিনা লাগাতার সংগ্রামের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগকে বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর প্রথম সরকার পরিচালনায় নিয়ে আসে। আওয়ামী লীগকে জনগণের দলে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।

শেখ হাসিনা দীর্ঘপথ হেঁটে বাংলাদেশের জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন। এজন্য তাঁকে দুটি সামরিক জান্তার এবং একটি অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়েছে। নিয়মতান্ত্রিক পথে, বিভিন্ন সময়ে, দুটি গণতান্ত্রিক স্বৈরশাসককে আন্দোলনের মাধ্যমে সরাতে হয়েছে। শেখ হাসিনা নীতির সাথে আপস করলে অনেক আগে ক্ষমতায় আসতে পারতেন। তিনি ক্ষমতার জন্য নেতিবাচক রাজনীতির পথে কখনো এগোননি। তিনি তাঁর জীবনে কোনো বাঁকা পথ, কোনো প্রলোভনকে প্রশ্রয় দেননি। যেহেতু তিনি জনগণের জন্য রাজনীতি করেন, সেজন্য তিনি জনগণকে নিয়ে, জনগণের ভালোবাসা নিয়ে, নিয়মতান্ত্রিক পথে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে সরকার পরিচালনায় এসেছেন। নিয়মের প্রতি, আইনের প্রতি, জনগণের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তাঁকে বড় মাপের নেত্রীর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। তিনি এদেশে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির অগ্রদূত। তিনি যে ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা’- এটা তাঁর প্রতিটি কাজ ও কর্মে নিরন্তর উদ্ভাসিত।

শেখ হাসিনা: সত্য কথা বলার দ্বিধাহীন চিত্ত

শেখ হাসিনা সত্যকে সত্য বলতে দ্বিধা করেন না। রক্তচক্ষুকে তোয়াক্কা না করে, আমলে না নিয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার প্রাক্কালে নয়াদিল্লিতে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতা পরিহার করার জন্য জিয়া চক্রের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “সংবিধানের চার মূলনীতি- গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রÑ দীর্ঘকাল স্থায়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মূলনীতি ভুলে যাওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। মৌলিক নীতির ব্যাপারে আপসের কোনো স্থান নেই।” মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোনো আপস না করে, ধীরে ধীরে এগিয়েছেন কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে। এভাবে তিনি জনগণের কাছে, দেশবাসীর কাছে দৃঢ় মনের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে তিনি আপস করতে জানেন না।

শেখ হাসিনা রাজনীতিতে কখনো আবেগ ও উচ্ছ্বাস ব্যবহার করেননি। দুঃখ-বেদনাকে, শোককে ধারণ করে রাজনীতি করেছেন। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর মানিক মিয়া এভিনিউতে আয়োজিত জনসভায় প্রদত্ত ভাষণে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেছিলেন- “আজকের জনসভায় লাখো চেনামুখ আমি দেখছি। শুধু নেই আমার পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইয়েরা এবং আরো অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল আর কোনো দিন ফিরবে না, আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন।” তিনি তাঁর কথা রেখেছেন। জনগণকে দেওয়া ওয়াদা পরিপূর্ণ করেছেন। আপনজন হিসেবে পাশে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে অভীষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে এসেছেন। দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করেছেন, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন।

শেখ হাসিনা ঝুঁকি নিয়ে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন

শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা, সুদৃঢ় নেতৃত্ব ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জয়ী করে। তিনি সরকার পরিচালনায় এসে আবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বন্ধুদেশের সাথে, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ দু’দশকের সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে ১৯৯৬ মেয়াদে করা ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’ বাস্তবায়নের অসমাপ্ত কাজ শুরু করেন। সে সময়কার ৩০ বছর মেয়াদি পানি চুক্তির সুফল যাতে জনগণ পায়Ñ তাঁর উদ্যোগ নেন।

প্রতিবেশী ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব দেন। সাম্প্রতিককালে এক গবেষণায় দেখা যায়, ভারত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করলে বছরে ৭ হাজার কোটি টাকা আয় হবে। প্রবৃদ্ধি শতকরা ২ ভাগ। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে দেশব্যাপী ভারত-বিদ্বেষী প্রচারণা এবং বিএনপির আজন্ম ভারত বিরোধিতা শেখ হাসিনার অজানা নয়। বিরোধীদল ভারতে শেখ হাসিনার এ সফর এবং সফরের ফলাফল ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইবেÑ এটাও তিনি ভালোভাবেই জানেন। এতদসত্ত্বেও তিনি জেনেশুনে ভারতের সাথে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যই এই ‘ঝুঁকি’ গ্রহণ করেছেন। তিনি ক্ষমতার কথা না ভেবে, তাঁর জীবনের কথা না ভেবে, দেশের মানুষের জন্য ভারতের সাথে ব্যবসার ‘ঝুঁকি’ নিয়েছেন। আজ বাংলাদেশ ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত পর্যায়ে। বিগত একদশকে উভয় দেশের মধ্যে বিভিন্ন প্রথাগত খাত যেমনÑ নিরাপত্তা, বাণিজ্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, জলবায়ু ও পরিবেশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিক্ষা সংস্কৃতি, জনযোগাযোগ বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা প্রভূত বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন নতুন ও অপ্রচলিত খাত যেমনÑ ব্লু ইকোনমি এবং মেরিটাইম, পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, মহাকাশ গবেষণা, ইন্টারনেট ব্যান্ড উইথ রপ্তানি এবং সাইবার সিকিউরিটি খাতে উভয় দেশের সহযোগিতা সম্প্রসারিত হয়েছে। এর ফলে দেশের উন্নয়নে নতুন যুগের সৃষ্টি হয়েছে। শেখ হাসিনা জনস্বার্থে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে অত্যন্ত অনড় ও সাহসী। তিনি যে জনগণের নেতাÑ এটা বারবার প্রমাণিত। তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার কার্যকর করেন। কলঙ্কমুক্ত হয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষ। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রমও শেষ করেছেন।

রাজনীতিতে শেখ হাসিনার আগমন না হলে আজকের বাংলাদেশ ভাবা যেত না

জননেত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে সরকারের হর্সসিটে। তিনি প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা যদি আওয়ামী লীগের নৌকার বৈঠা না ধরতেন, তিনি যদি বাংলাদেশের নেতৃত্বে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত না করতেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী না হতেন, তাহলে বাংলাদেশের আজকের এ উন্নতি, এ অগ্রগতি সুদূরপরাহত ছিল। আওয়ামী লীগের গণমুখী রাজনীতি থাকতো না। দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত হতো না। গণতন্ত্র আসতো না। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের চিহ্নিতকরণে কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হতো না। ১৫ আগস্ট দুঃখজনক ঘটনার পর খুনি মোশতাকের পাশে কারা ছিল তা দেশবাসী জানেন। দেখেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজের সেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে যদি প্রধানমন্ত্রী না হতেনÑ তাহলে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হতো না। যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার অসম্পন্ন থাকতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। দেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদাবান করেছেন। শেখ হাসিনা রাজনীতিতে না আসলে বঙ্গবন্ধু- বাংলাদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠা হতো না। আজকে দেশে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের মর্যাদা পেতো না। জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল না ধরলে আমাদের নেতা-কর্মীদের অস্তিত্বও বিপন্ন হতো। আমাদের ভাগ্য সুপ্রসন্নÑ আমরা শেখ হাসিনার মতো একজন যোগ্য নেতা পেয়েছি। নেতৃত্ব পেয়েছি- শুকুর আলহামদুলিল্লাহ।

শেখ হাসিনা: বঙ্গবন্ধু সেতু পদ্মা সেতুর আর্কিটেক্ট

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলেছিলেনÑ “রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যায়, যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না আসে।” সে লক্ষ্যে শেখ হাসিনা দেশের অবকাঠামো, শিক্ষা, বাণিজ্য ও শিল্প উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছেন। বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন। কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক পরিবর্তন ও কৃষকদের সহায়তা কার্যক্রম বিস্তৃত করেছেন। পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে রাজধানীর সাথে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। আজ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। ১৯৯৬-২০০০ মেয়াদে তিনি যমুনায় ‘বঙ্গবন্ধু’ সেতু নির্মাণ করে দেশের উত্তরাঞ্চলকে রাজধানীর সাথে সম্পৃক্ত করেছিলেন। আজ দেশের সার্বিক উন্নয়নে যে সেতু দুটি সেতুবদ্ধ হিসেবে কাজ করছে বা করবে- তা শেখ হাসিনার হাতে গড়া। প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট একদা উন্নয়ন সম্পর্কে বলেছিলেন, A bridge is not merely a structure of steel and cement but is also a symbol of progress and development.. দেশের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু সেতু ও পদ্মা সেতু দুটি নির্মাণের অহংকার শেখ হাসিনার অবয়বে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার। গোটা জাতির উন্নয়ন ও কল্যাণের নির্মাতা।

শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের সেতু। আমাদের মর্যাদার স্থাপনা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৯ জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের একমাত্র সেতু। এ সেতু নির্মাণ তথা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রাজধানীসহ সমগ্র দেশের যোগাযোগ নিয়ে আসা এবং মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি ২০০৯ সালে সরকারে এসেই ডে-১ থেকে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করেন। পদ্মা সেতু ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে চালু করার নির্দেশ দেন। কিন্তু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে সে সময় পদ্মা সেতু নির্মাণ বাধাগ্রস্ত হয়। আর ষড়যন্ত্রের ফলে সব এলোমেলো হয়ে যায়।

পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ ছিল বিশ্বব্যাংকের একটি অজুহাত। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে তারা ছিল একটি পক্ষ। যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে আমাকে টার্গেট করে নয়, ষড়যন্ত্রকারীরা চেয়েছিল আওয়ামী লীগের ২০০৯-২০১৪ মেয়াদে যাতে পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত না হয়। কিন্তু যখন ষড়যন্ত্রকারীরা দেখলো পদ্মা সেতু টার্গেট অনুযায়ী ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত হচ্ছে- তখন একটি অযোগ্য ঠিকাদারকে নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়ে বোর্ড সভার অনুমোদন ছাড়াই বাংলাদেশের কতিপয় লোকের যোগসাজশে একতরফাভাবে তৎকালীন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ঋণদান স্থগিত করে এবং পদ্মা সেতুকে পদ্মা নদীতেই ডুবানোর প্রক্রিয়া সমাপ্ত করে।

কিন্তু তাদের এই ষড়যন্ত্রের বাধা হয়ে দাঁড়ালেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুতে যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল তা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কারো পক্ষে মোকাবেলা করা সম্ভব ছিল না। সাহস ছিল না। বিচক্ষণতা ছিল না। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার বিপক্ষে গিয়ে, তাদের কাজের গাফিলতি ও ত্রুটি আঙুল দিয়ে নির্দেশ করে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেওয়াÑ একমাত্র শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব ছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যার পক্ষেই সম্ভব ছিল। আজকের পদ্মা সেতুর পুরো কৃতিত্ব, পুরো সাফল্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বিশ্বব্যাংক ষড়যন্ত্র করে অর্থায়ন বন্ধের পর আমরা মালয়েশিয়াকে নিয়ে পদ্মা সেতু করতে গিয়ে সময় ক্ষেপণ করেছি। এতে পদ্মা সেতুর কাজ আরো বিলম্বিত হয়েছে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব বাধা অতিক্রম করে পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। আজ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও আমাদের বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা প্রকাশ।

আজকে পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে ফেরি চলাচল ও জাহাজ চলাচলের অসুবিধার কথা শোনা যাচ্ছে। অথচ পদ্মা সেতুকে নিরাপদ, যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা এবং পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য আমি মন্ত্রী থাকাকালীন কারিগরি কমিটি প্রধান জামিলুর রেজা চৌধুরীকে ডিজাইনে, পাইলিংয়ে কিছু পরিবর্তন ও পাইলিংয়ে কংক্রিট গ্রাউটিং পদ্ধতি ব্যবহারের কথা বলেছিলাম। কিন্তু তিনি আমার কথা রাখেননি। শেষাবধি আমার কথা মতো পাইলিং পরিবর্তন ও পাইলিংয়ে কংক্রিট গ্রাউটিং পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়েছে। মাঝে ২ বছর সময় ক্ষেপণ হলো। এছাড়া আমি জামিলুর রেজা চৌধুরীকে সেতুর মধ্যখানে Cable Straight ডিজাইনের জন্য অনুরোধ করেছিলাম এবং মধ্যখানের স্পান বড় রাখার কথা বলেছিলাম। স্প্যান প্রশস্ততা ও উচ্চতা বাড়ানোর কথা বলেছিলাম। বড় বড় জাহাজ চলাচলের জন্য সেতু নির্মাণের সময় এমন ব্যবস্থা পৃথিবীর সব বড় সেতুতে আছে। কিন্তু এতে সেতু ব্যয় বাড়ার অজুহাতে তিনি আমার কথা রাখেননি এবং তৎকালীন ডিজাইন কনসালটেন্টও রাজি হয়নি। আমি চেয়েছিলাম পদ্মার এ সব পুরো বিষয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠকে বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করতে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ষড়যন্ত্রের কারণে আমার সব পদক্ষেপ এলোমোলো হয়ে যায়। আমাকে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে চলে আসতে হয়। পরে আমার পরবর্তী দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এ বিষয়ে নজর দেননি। এ ব্যাপারে কেউ আমার সাথেও আলোচনা করেননি। বঙ্গবন্ধু জাতির জনক। তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের জনক। বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি দেশ, একটি পতাকা ও একটি মানচিত্র উপহার দিয়েছেন। আমাদের স্বকীয়তাবোধের একটি জায়গা করে দিয়েছেন। তাঁর কন্যা, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন উপহার দিয়েছেন। বাংলাদেশকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু উপহার দিয়েছেন। বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উত্তরণ ঘটিয়েছেন। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের মর্যাদাকে তুলে ধরেছেন।

শেখ হাসিনা- বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ

শেখ হাসিনা দেশের অবিসংবাদিত নেতা। দেশের নেতৃত্বে তাঁর আগমন ধূমকেতুর মতো। তাঁর আগমন আল্লাহর রহমতের মতো- আশীর্বাদস্বরূপ। মহামতি লেনিন বলেছিলেন- A nation gets the Leader it deserves. সময়কালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ছাড়া বাংলাদেশের জন্ম হতো না। জনগণের স্বাধীনতা ফিরে আসতো না। দেশের জনগণ মন খুলে কথা বলতে পারতো না। আর বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ছাড়া দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন সফল হতো না। Politices is a difficult game. এই প্রবাদ মিথ্যা প্রমাণ করে শেখ হাসিনা রাজনীতিকে সহজ করেছেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে, ইতিহাসের প্রতিটি পাতায়, নিজেকে গণতন্ত্রের ‘মানস কন্যা’ হিসেবে গ্রথিত করেছেন। দেশের নেত্রী, জনগণের নেত্রী, দেশের উন্নয়নের নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন।

শেখ হাসিনা পিতা বঙ্গবন্ধুর ন্যায় রাজনীতির কলাকৌশল ভালো জানেন। তিনি জনগণের মনের কথা, মুখের ভাষা বুঝতে পারেন। সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে তিনি সে কথা ও ভাষার প্রতিফলন ঘটান। তিনি মনে করেন, প্রণীত কর্মসূচিতে জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই তিনি বিষয়ভিত্তিক প্রচারণা এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। নেলসন ম্যান্ডেলা একদা বলেছিলেনÑ “আমাদের শক্তিশালী আদর্শ ব্যাপক জনগোষ্ঠীর ধারণকে ধরে রাখতে সক্ষম। এখন আমাদের কর্তব্য হলো এ আদর্শ তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।” শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং আদর্শের আলোকে প্রণীত ‘ভিশন-২০২১’ এর কার্যক্রম জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণকে এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে নানামুখী প্রচার কার্যক্রম চালাচ্ছেন। সরকার ও দল- এ দুই পর্যায়ে এই প্রচার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।

সরলতা যাঁর মণিহার

পিতা বঙ্গবন্ধুর মতো টুঙ্গিপাড়ায় শেখ হাসিনার জন্ম। এই গ্রামে তিনি বড় হয়েছেন। লেখাপড়ায় হাতেখড়ি হয়েছে। এখানকার মানুষের সাথে তিনি অন্তরঙ্গভাবে মিশেছেন। সমবয়সীদের সাথে খেলা করেছেন। খাল-নদীতে সাঁতার কেটেছেন। এই টুঙ্গিপাড়া গ্রাম শেখ হাসিনার জীবনে গভীর ছায়া ফেলেছে, গভীর মমত্ববোধের জন্ম দিয়েছে। তাই এখনো সময় পেলে তিনি গ্রামে ছুটে যান। সবার খোঁজখবর নেন। টুঙ্গিপাড়া এই গ্রামের পরিবেশ তাঁকে দেশের সাধারণ মানুষের দুঃখ-বেদনা বুঝতে সাহায্য করেছে। দুঃখী মানুষের কল্যাণে নতুন নতুন কর্মসূচি গ্রহণে সহায়ক হচ্ছে।

শেখ হাসিনা মনেপ্রাণে একজন আদর্শ বাঙালি নারী । অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, বিনয়ী, নম্র ও ভদ্র। অসীম ধৈর্য ও সাহস নিয়ে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারেন। তিনি অত্যন্ত দানশীল ও স্নেহবৎসল। তিনি মহানুভবতা এবং অতিথিবৎসল্যের মূর্ত প্রতীক। পিতা-মাতা, ভাই ও নিকট আত্মীয়স্বজনের শোক তিনি নীরবে সহ্য করেছেন, বহন করছেন। বাংলার জনগণকে আপন ভেবে কাজ করেছেন। ‘Simple living and high thinking’- সহজ সরল জীবনযাপন উচ্চ চিন্তাধারারই বহিঃপ্রকাশ। জাতীয় নেত্রীর এই বৈশিষ্ট্য, মায়ের মতো এই অনুপম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী শেখ হাসিনা। তিনি অত্যন্ত সহজ, অনাড়ম্বর আটপৌরে মধ্যবিত্তের জীবনযাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি সাধারণ জীবনযাপন করেন। শেখ হাসিনার বাঙালি খাবার খুব প্রিয়। তাঁর খাবার মেন্যু মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের ন্যায়। তিনি আলু-ভর্তা, ডাল-ভাত, কালিজিরা ভর্তা বেশি পছন্দ করেন। তিনি টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি ও রাজশাহী সিল্ক পরতে বেশি পছন্দ করেন। তিনি খাঁটি বাঙালি চরিত্রের প্রতিভূ।

উদার ধর্মভীরু মানুষ

ব্যক্তিগত জীবনে শেখ হাসিনা অত্যন্ত ধর্মভীরু এবং উদার। হযরত ইমাম হোসেন (রা.) বলেছেন, “ব্যক্তিত্ব গঠন ও মর্যাদা পাওয়ার সর্বোত্তম পন্থা হলো উদারতা।” আল্লাহর প্রতি তিন আনুগত্যশীল। নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। কোরআন তেলাওয়াত করেন। নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েন। তিনি সদালাপী ও মিষ্টভাষী। তিনি বই পড়তে ভালোবাসেন। গুণী মনীষীদের জীবনী পড়েন। গান শুনেন অবসর সময়ে। শিশুদের তিনি অত্যন্ত স্নেহ করেন। সময়, সুযোগ পেলে, পরিবেশের কথা চিন্তা না করে শিশুদের কোলে তুলেন, আদর করেন, চুমো খান। বয়োজ্যেষ্ঠদের তিনি শ্রদ্ধা করেন। ফুল ও ফলের বাগান করা তাঁর অন্যতম শখ। ফটোগ্রাফিতে তাঁর বেশ আগ্রহ আছে।

আতিথেয়তা যাঁর রক্তে

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর মাননীয় নেত্রী কানের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর সফর করেন। এ সময় ছোট বোন শেখ রেহানা এবং আমরা কয়েকজন তাঁর সফরসঙ্গী ছিলাম। সিঙ্গাপুর সরকারের আমন্ত্রণে এ সফর অনুষ্ঠিত হয়। নেত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ছিল সিঙ্গাপুর সরকার। প্রটোকল ও কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও একদিন তিনি এপার্টমেন্টে ফেরার সময় হঠাৎ এক শপিংমলে ঢুকলেন। চাল-ডাল, আলু, পেঁয়াজ, বেগুন ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী নিলেন। রুমে এসে নিজ হাতে রান্না করলেন। খেলেন। আমাদের খাওয়ালেন। খাবার নিজ হাতে পরিবেশন করলেন। বঙ্গজননী ফজিলাতুন্নেসা, তাঁর মা, যেভাবে অতিথি আপ্যায়ন করতেন, ঠিক সেভাবে তিনি সবাইকে খাওয়ালেন। এ গুণ তিনি তাঁর মহীয়সী মার কাছ থেকে পেয়েছেন।

২০০৩ সালে বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকাকালীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির দাওয়াতে মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা গণচীন সফর করেন। সফরে আমি তাঁর সফরসঙ্গী ছিলাম। একদিন আমরা বেইজিং থেকে হুবেই গেলাম ‘তিনগিরি’ প্রকল্প পরিদর্শনে। এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভ্রমণের বাহন বড় জাহাজ। ইয়াংসিড়ি রিভারের ভেতর দিয়ে আমরা প্রকল্প পরিদর্শনে যাওয়ার সময় নদীর দুই তীরের প্রাকৃতিক দৃশ্য, সৌন্দর্য নেত্রীকে মুগ্ধ করে। এ প্রাকৃতিক দৃশ্য অতুলনীয়, অবর্ণনীয়। জাহাজে মাননীয় নেত্রী প্রটোকল ভুলে গিয়ে সবার সাথে খোশগল্পে মেতে ওঠেন। খোলামেলা, মন খুলে কথা বললেন। সবাইকে ভ্রমণে আনন্দদান ও আমাদেরকে হাসিখুশি রাখার জন্য নিজেও গান গাইলেন। আমাদেরও গান গাইতে বাধ্য করলেন। একই পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি সবার সাথে মিশেন। কোনো ভেদাভেদ, পার্থক্য করতে জানেন না। সব মানুষকে তিনি ভালোবাসেন, সমান চোখে দেখেনÑ এটাই তাঁর মহৎ গুণ।

তিনি স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে পারেন। ঘটনা অনেকদিন মনে রাখতে পারেন। তিনি সহজেই অতীতের কথা মনে রাখতে পারেন। তিনি তাৎক্ষণিক জবাবদানে সক্ষম। তিনি একজন সুবক্তাও। দেশের যেকোনো প্রান্তরের দলের সদস্যদের, নেতাদের নাম বলতে পারেন। যেমনি বঙ্গবন্ধু পারতেন। এজন্য সফরে গেলে তিনি নাম ধরে সবার খোঁজখবর নেন। কুশল জানতে চান। এটা একজন নেতার বড় গুণ। অমায়িক ও দুর্লভ আচরণ। এ গুণ আছে বলেই তিনি আজ মহান নেত্রী। বিদেশ সফরে বিমান ভ্রমণের সময় তাঁর সফরসঙ্গী কর্মকর্তারা ঘুমাতেন আর তিনি বিমানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অনর্গল মন খুলে কথা বলতেন। সুখ-দুঃখের খবর নিতেন। দেশের খবর নিতেন। তাদের মতামত জানতে চাইতেন। চাকরিগত কোনো সমস্যা থাকলে ভ্রমণ শেষে দেশে এসে সে সমস্যার সমাধান দিতেন।

জনগণের উন্নয়ন মুক্তির দূত

২৯টি দেশ নিয়ে Boao Forum for Asia (BFA) গঠিত। এ ফোরামে ২৯টি দেশের সরকার/রাষ্ট্রপ্রধান সদস্য। বিভিন্ন সময়ে এ ফোরামে আমার বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করার সুযোগ হয়েছে। এসব দেশের প্রধান/সরকারপ্রধান সবার সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। দেখার সুযোগ হয়েছে। শেখ হাসিনার মতো এ রকম নেতা আমি কখনো দেখিনি। আমার সৌভাগ্য শেখ হাসিনার মতো নেতার সাথে আমি কাজ করতে পেরেছি, পারছি। তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকেও আমি কাছ থেকে দেখেছি। আলাপচারিতার সুযোগ হয়েছে আমার, তার সাথেও। দেখেছি তার মধ্যেও সরলতা আছে, সহজে সবাইকে আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা আছে। দেশপ্রেম ও দেশের মানুষের জন্য অগাধ মমতা রয়েছে। তাঁরা যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সন্তান, বেঁচে যাওয়া সার্থক উত্তরসূরি, এটা দু’বোনই নিজেদের জীবনে রূপায়ণ করেছেন। তাঁরা বাংলার জনগণের আপন মানুষ। বাংলার জনগণের মুক্তির দূত।

শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পারিবারিক ঐতিহ্যের সার্থক উত্তরসূরি। তাঁরা দু’বোন একত্রে, একমনে, একে অপরের সহায়ক হিসেবে, এক হয়ে দেশ সেবা করছেন। নিজেদেরকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতীক হিসেবে গড়ে তুলে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছেন। পাশাপাশি তাঁরা নিজেদের সন্তানদেরও নানা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়ে তুলতে প্রয়াসী হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর নাতি-নাতনিরা, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সন্তানরা, সবাই শিক্ষিত। সবাইকে ইসলামি আদব-কায়দা, আকিদা, নিষ্ঠার সমন্বয়ে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। তারা সবাই দেশ ও জাতির কথা ভাবেন। দেশপ্রেম ও দেশের প্রতি ভালোবাসা রয়েছে তাদের। বিদেশ কর্মস্থলে যোগ্য নেতৃত্বে তাঁরা প্রতিষ্ঠিত। এই নেতৃত্ব, এই নেতৃত্বের ক্রমবিকাশ তাদের মধ্যে প্রবাহমান। একদিন তারা দেশের বড় নেতৃত্ব নিতে সক্ষম হবে। নানা বঙ্গবন্ধুর ন্যায়, মা শেখ হাসিনার মতো, জাতিকে আলোর পথ দেখাবে।

তিনি যে জনগণের নেত্রী

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তি জীবন, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবন বলে কোনো বিষয় নেই। তিনি দেশের মানুষের মাঝে বিলীন হয়ে আছেন। নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে দেখা যায় কৃষকের আঙ্গিনায়। শ্রমিকের শিল্প কারখানায়। দেখা যায় দুঃখী মানুষের দুয়ারে। তাঁকে পাওয়া যায় সংস্কৃতি জগতে। তাঁকে পাওয়া যায় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায়। বাংলার মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার মধ্যে তাঁর ছোঁয়া পাওয়া যায়। সর্বত্র তাঁর অবস্থান দৃশ্যমান। তাঁর মধ্যে আমি দেখেছি সাহস, সব কাজে স্বচ্ছতা। দেখেছি একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকার। তিনি গণতন্ত্রের নেত্রী। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির নেত্রী। উন্নয়নের নেত্রী। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার নেত্রী। আমাদের নেত্রী। তিনি জনগণের নেত্রী। শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছিলেন “আমার হারানোর কিছুই নেই। আমি বাঙালি জাতির হারানো অধিকার পুনরুদ্ধার করতে চাই।” তিনি যোগ্য নেতৃত্ব, দূরদর্শী চিন্তা-ভিশন ও রাজনৈতিক নৈপুণ্য প্রয়োগের মাধ্যমে সেই আরাধ্য কাজে আজও ব্যাপ্ত রয়েছেন। জাতিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কোনো পিছুটান নেই। আছে শুধু কাজ। কাজ আর কাজ।

শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা। জয় ও পুতুলের মা। নাতি-নাতনির দাদি। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী। এসব পরিচয়ে, পারিবারিক গণ্ডির পরিচয়ে শেখ হাসিনা আজ আর পরিচিত নন। বাংলা মাটির সন্তান, দেশের জনগণের নেত্রীÑ এ পরিচয়েই তিনি বেঁচে থাকতে চান। মানুষের নেত্রী, জনগণের নেত্রীÑ এ পরিচয়ে তিনি সরকার পরিচালনা করছেন। জনগণের ভালোবাসায় অভিষিক্ত হয়েছেন। জর্জ হার্বাট একদা বলেছিলেন, “কিছু কাজ পৃথিবীতে রেখে যেতে চাই এবং সে কাজ পৃথিবীতে আমার আসার সার্থকতা।” মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর কাজের মাধ্যমে আনন্দ পেয়েছেন। সার্থকতা পেয়েছেন কি না জানি না। তবে সার্থকতা লাভ করেছেন দেশের জনগণ। উপকৃত হয়েছেন দেশের জনগণ। দেশের জনগণ তাদের ইচ্ছার প্রতিফলনে একটি গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমুখী সরকার পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের সেবা দিয়ে নিজের জীবনেরও সার্থকতা খুঁজে পেয়েছেন। তিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজের অবস্থান, দেশের অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছেন।

বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মাথাপিছু ২০০০ ডলার ছাড়িয়ে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য ও বিদ্যুৎ যোগাযোগসহ সর্বক্ষেত্রে দ্রুত উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্বব্যাপী ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ উপাধি পেয়েছেন। বিভিন্ন ইতিবাচক কাজের জন্য পেয়েছেন প্রচুর প্রশংসা ও উপাধি। তিনি বাংলাদেশের ভূমিকন্যা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাজের কোনো ক্লান্তি নেই। অনীহা নেই। আছে সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার গতি। শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন, বাংলাদেশও এগিয়ে যাচ্ছে আগামীর পথে। এই মহান নেত্রীর জন্মদিনে তাঁকে আমি জানাই গভীর শ্রদ্ধা, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

লেখক: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিককর্মী, সমাজসেবক, শিক্ষা-উদ্যোক্তা ও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :