গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ, ফাল্গুনী শপের সিইওসহ চারজন গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৫ নভেম্বর ২০২১, ২১:৫০
অ- অ+

অনলাইনে পণ্য বেচার নামে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে ফের গ্রেপ্তার হলেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ফাল্গুনী শপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পাভেল হোসেনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল, গুলি, মদ ও ওয়্যারহাউজ থেকে নানান পণ্য জব্দ করা হয়।

গত মে মাসে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পাভেল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছিল। জামিনে মুক্ত হয়ে ফের প্রতারণা শুরু করায় তাকে এবার গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। অভিযোগ রয়েছে, শতাধিক গ্রাহককে প্রতারণার ফাঁদে ফেলেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক।

আটক অন্যরা হলেন- মো. সাইদুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল হাসান এবং মোছা. ফারজানা আক্তার মিম।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের অধিনায়ক বলেন, কিছু ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগীর সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার বিকাল পাঁচটা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত র‌্যাব-৪ এর একটি দল রাজধানীর খিলগাঁও থানার বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।

পাভেলের উত্থান যেভাবে:

আটক পাভেলের বরাত দিয়ে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ফাল্গুনী শপ ডটকম কারসাজির মূলহোতা মো. পাভেল হোসেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির সিইও এবং আটককৃত মো. সাইদুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল হাসান, এবং মোছা. ফারজানা আক্তার মিম তার অন্যতম সহযোগী। পাভেল ২০০৯ সালে এইচএসসি পড়া অবস্থায় তিনি একটি অস্ত্রসহ র‌্যাবের কাছে আটক হন। তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে। একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পর লার্নিং অ্যান্ড আরনিং প্রজেক্টে রাজবাড়ীতে ৩০-৪০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি শুরু করেন। ২০১৯ সালের শুরুতে পাভেল, দিদারুল আলম, কানিজ ফাতেমা ও রহমতুল্লাহ শওকত মিলে ফাল্গুনী শপ ডটকম নামে একটি অনলাইন বিজনেস প্লাটফর্ম তৈরি করেন। শুরুতে তারা উত্তরা এলাকায় একটি ভাড়াকৃত স্পেসে আউটলেট খুলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেন। ব্যাবসার শুরুতেই পাভেলের অন্য অংশীদাররা তার গ্রাহক ঠকানোর বিষয়টি বুঝতে পারেন। তারা তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন এবং এফিডেভিট করে উকিল নোটিশ পাঠিয়ে যৌথ ব্যবসা থেকে সরে যান। তারা এ বিষয়টি জয়েন্ট স্টক অথোরিটিকেও অবহিত করেন। তবুও পাভেল তাদের নামে জাল সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে গ্রাহকদের প্রতারিত করতেন এমনকি তাদের নাম ব্যবহার করে যৌথনামে চেক পর্যন্ত ইস্যু করতেন।

গত মে মাসে প্রতারণার অভিযোগে কয়েকজন গ্রাহক পাভেলের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি প্রতারণার মামলা করেন। তখন পাভেল সিআইডির কাছে আটক হয়ে ২১ দিন জেলে খাটেন। পরে জামিনে আসেন এবং আগের চেয়েও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কিছু সংখ্যক গ্রাহক ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ করলে অধিদপ্তর একাধিকবার ফাল্গুনী শপ ডটকমের আউটলেট বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালের জুলাই মাসে পাভেল খিলগাঁও থানার বনশ্রী এলাকায় “অরিমপোড ডটকম” ও “টেক ফেমিলি ডটকম” নামে নতুন অফিস স্থাপন করেন। এর আড়ালেই ফাল্গুনী শপ ডটকমের কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

“অরিমপো ডটকম” ও “টেক ফেমিলি ডটকমে” তিনি নিজে এমডি এবং তার স্ত্রী রিতা আক্তার চেয়ারম্যান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

র‌্যাব জানায়, করোনা মহামারিতে লকডাউন চলাকালীন অনলাইনে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী স্বল্প মূল্যে বিক্রির চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করে ফাল্গুনী শপ ডটকম। তাদের এই বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে ক্রেতারা অর্ডার দিতে থাকেন। ক্রেতাদের অগ্রীম মূল্য পরিশোধ করতে হতো। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি কিছু কিছু ক্রেতাকে আংশিক, কিছু কিছু ক্রেতাকে নিম্নমানের পণ্য আবার কিছু কিছু ক্রেতাদের কোনো পণ্য সরবরাহ না করে সব টাকা আত্মসাৎ করে।

প্রতারণার কৌশল হিসেবে পাভেল কোনো প্রকার অবগতি ছাড়া তার অফিসের ঠিকানা পরিবর্তন করতেন বলে জানায় র‌্যাব। যাতে প্রতারিত গ্রাহক সকল তার অফিসে এসে কোনো প্রকার অভিযোগ না করতে পারে। আটক পাভেল একজন মাদকসেবী। তিনি অনলাইন ব্যবসারা আড়ালে মাদক ব্যবসাও পরিচালিত করতেন।

র‌্যাব জানায়, বর্তমানে বনশ্রী এলাকায় ভাড়াকৃত স্পেসে তাদের এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সেখানে তার দুইটি ওয়ারহাউজ চালু করা হয়। কোম্পানিতে ১০ থেকে ১২ জন কর্মচারী রয়েছেন যাদেরকে পাভেল মাসিক আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা বেতন পরিশোধ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ফাল্গুনী শপ ডটকমের নামে কোনো ব্যাংক হিসাব নেই। পাভেলের চারটি বিভিন্ন ব্যাংকে নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ টাকার বেশি রয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে তার নিজস্ব ব্যাংক হিসাব থেকে প্রায় চার কোটির অধিক টাকা লেনদেন হয়েছে। তার নামে ফাল্গুনী শপ ডটকম, ফাল্গুনী শপ এবং ফাল্গুনী শপ বিডিসহ ২৮টি নামসর্বস্ব কোম্পানির সন্ধান পাওয়া যায়। “ফাল্গুনী শপ ডটকম” ছাড়া বাকি ২৭টি কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

র‌্যাব জানায়, গ্রাহকরা পণ্য না পেয়ে অফিসে গেলে অস্ত্র দেখিয়ে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতিসহ তার নিজস্ব টর্চার সেলে লাঠি পেটা, বৈদ্যুতিক শকসহ অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে অফিস থেকে তাদের তাড়িয়ে দিতেন পাভেল।

ঢাকাটাইমস/২৫ নভেম্বর/এএ

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
তেজগাঁও থেকে ছিনিয়ে নেওয়া সৌদি রিয়াল উদ্ধার, ছয়জন আটক
দ্বিতীয় পর্বের সপ্তম দিনের বৈঠক চলছে, এজেন্ডা নির্বাচনী এলাকা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার
আদানির বকেয়া পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ সরকার
২ জুলাই: দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা চাকরি প্রত্যাশীদের
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা