অল্প তেলে সুস্বাদু রান্না করার কৌশল

তেল বা চর্বি খাদ্যের ছয়টি উপাদানের একটি উপাদান। অতিরিক্ত তেল বা চর্বি আমাদের দেহের জন্য যেমন খারাপ তেমনি আমাদের দেহে তেলের প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে অনেক। বর্তমানে করোনা মহামারি আর যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে তেলের বাজার। এমন অবস্থায় রান্না করা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। আবার অনেকে মেদ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডায়েট থেকে নিজেরাই বাদ দিয়ে দেন তেল-ঘি-মাখন। তেল-ঘি একেবারে বর্জন করলে ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তেল ছাড়া খাবার আপনাকে সুস্থ রাখার পরিবর্তে অসুস্থ করে তুলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে পরিমিত পরিমাণে তেল গ্রহণ করা প্রয়োজন।
পুষ্টিবিদদের মতে, মেদ বাড়ার ভয়ে ডায়েট থেকে সহজেই আমরা বাদ দিয়ে দিই তেল বা ঘি। কিন্তু পরিমিত ঘি কোষের ফ্যাট সলিউবল টক্সিন বের করে দেয়। এগুলো ফ্যাট পরিপাকে বিশেষ সাহায্য করে। ফলে শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট সহজেই শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে দ্রুত ওজন কমিয়ে দেয়।
কম তেলে রান্না করতে গেলে অনেকেই ঝোঁকেন বিদেশি রান্নার দিকে। কিন্তু বাঙালি রান্না কম তেলে রাঁধার উপায়ও আছে। চলুন জেনে নেই কিভাবে একেবারে অল্প তেলে সুস্বাদু খাবার রান্না করা যাবে,,,,
প্রথমেই রান্নার পাত্র নির্বাচন করুন। ননস্টিক পাত্রে যেমন অল্প তেলে রান্না করা যায়, তেমনি তেল ছাড়াও করা যায়। আর এতে পোড়া লেগে যাওয়ার ভয় নেই। কিন্তু ননস্টিকি পাত্রে ক্ষতিকারক টেফলন থাকায় অনেকেই এটি এড়াতে চান। সেক্ষেত্রে ভালো মান ও ভারী স্টেইনলেস স্টিলের পাত্র ব্যবহার করতে পারেন। লোহা কিংবা সিরামিক টাইটেনিয়ামের প্যান হতে পারে ভালো অপশন।
শুকনা খাবার কিংবা ঝোল ছাড়া যেকোনো চচ্চড়ি তৈরির জন্য ব্যবহার করতে পারেন ফ্লেম ডিফিউজার (এক ধরনের আগুন নিয়ন্ত্রক)। এতে চুলার আঁচ সরাসরি হাঁড়িতে লাগে না। ফলে আচমকা খাবার পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই।
এবার আসা যাক রান্নার প্রক্রিয়ায়। বেশিরভাগ রাঁধুনীর অভ্যাস হলো রান্নার সময় বোতল দিয়েই সরাসরি তেল ঢেলে দেওয়া। এতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি তেল ব্যবহার করাই বেশি হয়। এক্ষেত্রে চামচ দিয়ে পরিমাণমত তেল নিলে কমবে তেলের ব্যবহার।
একদম কম তেলে রান্না করতে চাইলে খানিকটা অলিভ অয়েল ব্রাশ করে সব্জি বা মাছ-মাংস সহজেই বেক বা রোস্ট করে নিতে পারেন।
রান্নায় তেলের ব্যাবহার কমানোর জন্য, তেল স্প্রেয়ের বোতলে ঢেলে নিয়ে, তারপর রান্নার সময় তেল স্প্রে করে নিন। এতে অল্প তেলেই রান্না করতে পারবেন।
অল্প তেলে পেঁয়াজ ভাজতে চাইলে, তেলের সঙ্গে ২ চামচ করে পানি দিয়ে ভাজতে থাকুন। অল্প অল্প পানির ছিটা দিয়ে পেয়াজ ভাজতে হবে। । তবে বেশি পানি দিবেন না, এতে পেঁয়াজ সিদ্ধ হয়ে যাবে। মসলা কষাতে অল্প তেলের সঙ্গে পানি ব্যবহার করুন।
মাছ-মাংস টক দই দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখুন। যদি ৭-৮ ঘণ্টা মাংস ম্যারিনেট করতে পারেন, তা হলে মাংসও নরম হবে এবং রান্নার সময় অনেকটাই তেল ছা়ড়বে। তাতে তেল কম লাগবে। মাছ বা কোনও সব্জিও একই ভাবে রান্না করতে পারেন।
ফ্যাটের পরিমাণ কম মাছ মাংস কিনতে পারেন। চর্বিওয়ালা মাংস বা তেলওয়ালা কাতলা মাছের পরিবর্তে লিন মিট ও ছোট মাছ কিনতে পারেন। পাবদা, ট্যাংরা, ভেটকি, পার্শে, কই... এ ধরনের মাছে মোটা তেল থাকে না। কেনার সময়েই ফ্যাট বর্জন সম্ভব।
কুমড়া, বেগুন, ওল, শিম... সব সবজিই সিদ্ধ করে তেল, লবণ ছড়িয়ে খাওয়া যায়। এতে তেলের গুণ বজায় থাকে। তাই যেটুকু ফ্যাট গ্রহণ করছেন, তার উপকার থেকে বঞ্চিত হবেন না। বেশি আঁচে তেলে ভাজা হলে ফ্যাটের গুণ নষ্ট হয়।
সিদ্ধ সবজি খেতে না চাইলে রেঁধেও খেতে পারেন। তবে সবজি ভেজে মশলা দিয়ে কষিয়ে রান্না নয়। সব সবজি একসঙ্গে সিদ্ধ করে ফোড়ন দিতে পারেন।
মাছ খেলে স্টিমড বা স্মোকড ফিশ খেতে পারেন। বাঙালি রান্নায় তো ভাপা আছেই। ইলিশ ভাপা, ভেটকি ভাপাও বেশ সুস্বাদু। ঢিমে আঁচে ঢাকা দিয়ে ভাপিয়ে রাঁধলে তেলের ব্যবহার কম হয়।
যে কোনও খাবার ভাপিয়ে রান্না করলে তেল লাগবে না। এতে পুষ্টিগুণ বজায় থাকবে এবং খাবার অনেক বেশি স্বাস্থ্যকরও হবে। এখন বাজারে নানা রকম স্টিমার পাওয়া যায়। বাড়িতে রাইস কুকার থাকলেও স্টিম করতে পারেন। না থাকলে একটি কড়াইয়ে পানি ফুটিয়ে তাতে একটি স্ট্যান্ডে বাটি বসিয়ে দিন। সেই বাটিতে রান্না করুন।
তবে মাংস রান্নায় ম্যারিনেশনে সময় দিতে হবে। টক দই আর মশলা দিয়ে চিকেনও ভাপিয়ে রাঁধা যায়। বিদেশি হার্বসও ব্যবহার করতে পারেন। এতে মাংসের স্বাদও খুলবে।
ডুবো তেলে না ভেজে, ওভেনে বেক করে নিতে পারেন, কিংবা গ্রিল বা বারবিকিউ করেও খেতে পারেন।
কিন্তু বেগুন ভাজা, আলু ভাজা, কচুরি, পরোটা তেল ছাড়া স্বাদ হয় না। এগুলো ডুবো তেলে ভেজে নিয়ে টিসুতে তেল ঝরিয়ে খান। অনেকেই তেল কম খাবেন বলে অল্প তেল দিয়ে ভাজেন। এতে হিতে বিপরীত হয়। তেল কম দিয়ে ভাজতে গেলে পুরো তেলটাই সেই খাবার (পরোটা, বেগুন) টেনে নেয়। তাই তেলে ভাজা খেতে হলে এক-দু’দিন খেতেই পারেন ঠিক পদ্ধতিতে। বাকি দিনগুলোতে বরং কম তেলের রান্নায় সেই অতিরিক্ত ফ্যাট ঝরিয়ে নিতে হবে। তবেই ব্যালান্স বজায় থাকবে।
বেকিং করা খাবার স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভাল। প্রায় সবার বাড়িতেই এখন ওভেন রয়েছে। যাতে সবজি, মাছ, মাংসসহ প্রায় সব ধরনের খাবারই খুব সামান্য তেলের ব্যবহারে বেক করে তৈরি করা যায়। আর ভাপে তৈরি করা খাবার অনেক সুস্বাদু। চিংড়ি ভাপা, ইলিশ ভাপা কিংবা ভাপা ডিমের তরকারি বেশ জনপ্রিয়।
(ঢাকাটাইমস/১৪ মার্চ/আরজেড)

মন্তব্য করুন