কুড়িগ্রামে আকস্মিক বন্যায় পেঁয়াজ ও বোরো আবাদের ব্যাপক ক্ষতি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১২ এপ্রিল ২০২২, ১৪:৪৯

উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বৃষ্টিতে গত এক সপ্তাহে ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদসহ কুড়িগ্রামের ১৬টি নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এতে করে জেলা সদর, উলিপুর, রাজারহাট, ভুরুঙ্গামারীসহ চিলমারী উপজেলার নদ-নদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় এসব এলাকার পেঁয়াজ ক্ষেত ও বোরো আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। এক সপ্তাহ ধরে সৃষ্ট এ আকস্মিক বন্যার কবলে পড়া অপরিপক্ক শত শত একর জমির পেঁয়াজ ক্ষেত ও বোরো আবাদ নিয়ে নিরুপায় হয়ে পড়া এসব অঞ্চলের অনেক কৃষকগণ তাড়াহুড়ো করে জমি থেকে তুলতে বাধ্য হয়েছেন। অপরিপক্ব পেঁয়াজ ও বোরো আবাদ পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে জমি থেকে তুলে বিপাকে পড়েছেন অনেক কৃষক। অপরিপক্ক পেঁয়াজ রোদে শুকোতে দিয়েছেন ও বোরো আবাদ বাড়িতে স্তূপ করে রেখেছেন তারা। ধারদেনা করে চাষ করা কৃষকরা পানিতে তলিয়ে ও ক্ষতিগ্রস্ত পেয়াজ ও বোরো আবাদ নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পরেছেন।

রবিবার (১০ এপ্রিল) সরেজমিনে জেলার নদ-নদী সমুহের বিভিন্ন চর ও দ্বীপচর ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

এ সময় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বৃষ্টির পানিতে গত এক সপ্তাহ ধরে নদ-নদী সমুহের পানি বৃদ্ধি পেয়ে এসব এলাকার চর ও দ্বীপ চরের নিম্নাঞ্চলে চাষ করা শত শত একর পেঁয়াজ ক্ষেত ও বোরো আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আকস্মিক বন্যার কবল থেকে ফসল রক্ষার জন্য অনেকেই অপরিপক্ক পেঁয়াজ ও বোরো আবাদ তাড়াহুড়ো করে তুলে এনেছেন। এসব অপরিপক্ক ফসল নিয়ে হতাশায় ভুগছেন কৃষকরা।

কুড়িগ্রাম সদরের শিপেরপাচি এলাকার কৃষক হাসেম মোল্লার স্ত্রী জরিনা বেগম বলেন, 'ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে আকস্মিক বন্যায় আমাদের দুই বিঘা জমির পেয়াজ পানির কবলে পরে নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো তুলে এনে রোদে শুকাচ্ছি। এছাড়াও দেড় বিঘা জমির বোরো আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। লাভের আশায় দুটো গরু বিক্রির টাকায় ফসল ফলিয়ে বন্যার পানিতে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলাম আমরা'।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরপার্বতীপুর এলাকার পেয়াজ চাষি হাফিজুর রহমান বলেন, 'ধারদেনা করে দুই বিঘা জমিতে পেয়াজ চাষ করেছি। আর কিছুদিন গেলেই পেঁয়াজ গুলো বাজারে বিক্রির উপযোগী হতো। কিন্তু অসময়ের বন্যায় অধিকাংশ পেঁয়াজ ক্ষেত পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে আমাদের এক থেকে দেড় লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।'

রাজারহাটের বিদ্যানন্দ এলাকার তিস্তার অববাহিকায় পেয়াজ চাষ করা চাষি আজিজুল হক বলেন, 'আড়াই বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছি। নদীর পানি প্লাবিত হয়ে প্রায় দেড় বিঘা জমির পেঁয়াজ ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এতো বড় ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে নেব তা আল্লায় ভালো জানেন!'

কুড়িগ্রামের কদমতলা এলাকার বোরো চাষী আইনুল মিয়া বলেন, 'ধরলা নদীর অববাহিকায় প্রায় ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছিলাম। কিন্তু নদীর পানি প্লাবিত হয়ে প্রায় দুই বিঘা বোরো আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। অসময়ে এমন বন্যা পূর্বে কখনও দেখিনি'।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, অসময়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে তার ওয়ার্ডের গোয়াইলপুরী ও পোড়ার চর এলাকার অন্তত ৬০-৭০ জন কৃষকের বোরো আবাদ ও পেয়াজ ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে গোয়াইলপুরী এলাকার কৃষক করিম মিয়ার ১ একর জমির পেয়াজ ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এবং একই এলাকার কৃষক পাশান অালীর দেড় একর জমির বোরো আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় প্রায় ১৬২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ ও ১ লাখ ১৬ হাজার ১শ ২০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে আকস্মিক বন্যায় প্রায় ৮০ হেক্টর জমির পেঁয়াজ ও ২৭৫ হেক্টর জমির বোরো আবাদ নষ্ট হয়েছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ বলেন, ‘নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৫৯৩ হেক্টর জমির পেঁয়াজ, চিনাবাদাম, তরমুজ, বোরো, পাট,

ভুট্টাসহ সবজি ক্ষেত আক্রান্ত হয়েছে। আমরা এই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনায় অন্তর্ভুক্ত করবো।’

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ মিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ মিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ মিটার এবং তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানসহ কুড়িগ্রামে আরও ১০দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামের নদ-নদীগুলোর পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সবুর হোসেন জানান, কুড়িগ্রামে গত ১ এপ্রিল থেকে আজ ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিনে ২৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার কারনে আবহাওয়ার এমন বিরুপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে রংপুর বিভাগের কিছু কিছু এলাকায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে যা আবহাওয়ার পূর্বাভাসে রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১২এপ্রিল/এআর/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :