লিবিয়ার উপকূলে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি আটক
ভূমধ্যসাগর উপকূল থেকে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিকে আটকের দাবি করেছে লিবিয়ার পুলিশ। শনিবার রাজধানী ত্রিপোলির পূর্ব উপকূলীয় জেলা মিসরাতা থেকে অবৈধ পথে ইউরোপে পাড়ি দেয়ার প্রস্তুতির সময় আটক করা হয় এই অবৈধ অভিবাসীদের।
লিবিয়া পুলিশের বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম।
লিবিয়ান টিভি আল-আহরারের খবরে বলা হয়, উপকূলে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে প্রায় ৬০০ অভিবাসীকে আটক করা। আটককৃতদের একাধিক ছবি ও ভিডিও রিলিজ করেছে টিভি চ্যানেলটি।
মিসরাতা মেট্রোপলিটন পুলিশের ফেসবুকেও এ বিষয়ে পোস্ট দেয়া হয়েছে। মিসরাতা সিকিউরিটি ডিরেক্টরেট পরিচয়ে প্রচারিত এক বার্তায় বলা হয়, প্রায় ৬০০ অবৈধ অভিবাসী সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাত্রার প্রস্তুতি নেয়ার সময় তাদের আটক করা হয়।
আটকদের অধিকাংশই বাংলাদেশের নাগরিক। তারা জারিখ উপকূল থেকে নৌকাযোগে ইউরোপের উদ্দেশ্যে রওয়ানার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
ইন্ডিয়া ব্লুমস এক প্রতিবেদনে লিবিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বরাত দিয়ে বলেছে, উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার ভূমধ্যসাগর উপকূল থেকে পাঁচশর বেশি বাংলাদেশিকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ।
রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল এস এম শামিম উজ জামান বলেছেন, ‘লিবিয়ার পুলিশ আমাদের বলেছে, তারা ৫০০ বাংলাদেশিকে আটক করেছে।’
‘যাইহোক, আমরা এখন পর্যন্ত ২৪০ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছি।’ বলেন রাষ্ট্রদূত।
তার্কিশ গণমাধ্যম টিআরটি এক প্রতিবেদনে ৫৪২ জন বাংলাদেশি আটক হওয়ার কথা উল্লেখ করেছে।
এদিকে ত্রিপোলীর বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, আটক অভিবাসীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে দু’জন কর্মকর্তাকে ডিটেনশন সেন্টার ফলোআপের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা আইওএম এবং স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন। আটক অভিবাসীদের একটি অংশকে ত্রিপোলী নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানিয়েছে দূতাবাস।
দূতাবাস টিম রবিবার ২৪০ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছে। আটকদের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই শুরু করা হয়েছে। রিপোর্ট আসার পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে কতজন বাংলাদেশি রয়েছেন।
বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, শনিবার আটক অভিবাসীদের প্রথমে জেলা শহর মিসরাতার একটি ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়। সেখানে গাদাগাদি হওয়ায় একটি অংশকে রাজধানী ত্রিপোলীর বিমানবন্দর সড়কের একটি কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাদের খাদ্য, পানীয় এবং অন্য জরুরি সহায়তা প্রদান করেছে পুলিশ। নাগরিকত্ব যাচাই শেষে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
এর আগে ২০১৬ সালে ছয় শতাধিক বাংলাদেশিকে সাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। ২০২০ সালে লিবীয় বন্দিশালায় ২৬ অভিবাসন প্রত্যাশীকে গুলি করে হত্যার পর ইউরোপ যাত্রার লিবিয়া রুটে দালালদের তৎপরতায় ভাটা পড়েছিল। তাছাড়া টানা দুই বছর ছিল করোনার দাপট। এজন্য এতদিন বন্ধ ছিল অবৈধ পথে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা। এখন করোনার প্রকোপ কমে আসায় এবং সাগর শান্ত থাকায় অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীর ভিড় বাড়ছে। সেই জন্য সাগরে মনিটরিংও বাড়িয়েছে লিবিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষ।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশিকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালে লিবিয়ায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপর হাইকোর্টে এই নিষেধাজ্ঞা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। কিন্তু আদালত মন্ত্রণালয়ের পক্ষে রায় দেন।
ঢাকাটাইমস/২৬এপ্রিল/এফএ