ডা. সাবরিনার চাকরির কী হবে?

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৬ জুন ২০২২, ০৯:৪৬| আপডেট : ০৬ জুন ২০২২, ১১:৩৭
অ- অ+

করোনাভাইরাস পরীক্ষার নামে প্রতারণা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে অনেকদিন ধরে কারাবাস করছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনিস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে করা দুটি মামলার বিচার কাজ চলছে। ২০২০ সালের ১২ জুলাই গ্রেপ্তার হন সাবরিনা। এরপর থেকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগারে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, একজন সরকারি চাকরিজীবী কর্মস্থলে কতদিন অনুপস্থিত থাকলে তার চাকরি বহাল থাকবে?

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাসপাতাল অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘একজন সরকারি কর্মকর্তা অনুমতি না দিয়ে দুই মাস কর্মস্থলে না আসলেই তার চাকরি চলে যাওয়ার কথা। তবে সাবরিনা তো গ্রেপ্তার হয়ে জেলে আছেন। তিনি তো চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন। এখন দেখা যাক, কী হয়? পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

২০২০ সালের ১২ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল মান্নান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ডা. সাবরিনা চৌধুরীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। তখন ওই আদেশে বলা হয়েছিল, ডা. সাবরিনা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট ও অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। সরকারি কর্মকর্তা হয়ে সরকারের অনুমতি ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত থাকা এবং অর্থ আত্মসাৎ সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল), বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সে জন্য ডা. সাবরিনাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর ১২ (১) বিধি অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। তিনি সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালীন বিধিমোতাবেক খোরপোশ ভাতা প্রাপ্ত হবেন।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সরকারি চাকরি বিধিমালা আছে। একজন সরকারি কর্মকর্তা অথবা কর্মচারী কতদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকবেন সেটা ওই বিধিমালায় সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে। সাবরিনার ক্ষেত্রেও ওই বিধিমালা প্রযোজ্য হবে।’ কী আছে সরকারি চাকরির বিধিমালায়?

বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস পার্ট-১ এর বিধি ৩৪ মোতাবেক ঘটনার বিশেষ অবস্থা বিবেচনাপূর্বক সরকার অন্যরূপ কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে, বাংলাদেশে বৈদেশিক চাকরিতে কর্মরত থাকার ক্ষেত্রে ছাড়া, অন্যত্র, ছুটিসহ অথবা ছাড়া একাধিক্রমে পাঁচ বছর থেকে চাকরিতে অনুপস্থিত থাকার পর একজন সরকারি কর্মচারীর চাকরির অবসান হবে।

ব্যাখ্যা: কোনো কর্মচারী একাধিক্রমে পাঁচ বছর কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকার পর তিনি চাকরি হারাবেন। এই পাঁচ বছর সময়ের মধ্যে অনুমোদিত ছুটি থাকলেও তিনি চাকরি হারাবেন। প্রথম অনুপস্থিতির তারিখ থেকে পাঁচ বছর আগে অথবা পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার দিনেও যদি কাজে যোগদান করেন, তবে তার ক্ষেত্রে এই বিধি প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ তার চাকরি বহাল থাকবে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বৈদেশিক চাকরিতে কর্মরত থাকার ক্ষেত্রে চাকরি চলে যাওয়ার বিধিটি প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ কোনো বিধিবদ্ধ সংস্থায় বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষে প্রেষণে পাঁচ বছরের অধিক সময় কর্মরত থাকার ক্ষেত্রেও চাকরি অবসান হবে না। তবে বহিঃবাংলাদেশে বৈদেশিক চাকরিতে কর্মরত থাকার কারণে পাঁচ বছরের বেশি সময় নিজ দায়িত্ব থেকে অনুপস্থিত থাকলে এই বিধির আওতায় চাকরি চলে যাবে। আরও পরিষ্কার করে বলা যায়, প্রেষণে বিদেশে থাকলে চাকরি যাবে না কিন্তু বহিঃবাংলাদেশ বা যে কোনো প্রকার ছুটিতে পাঁচ বছরের বেশি সময় থাকলে তার চাকরির অবসান হবে।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মীর জামাল উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সার্ভিস রুলে সব কিছু লেখা রয়েছে। সেই মোতাবেক সব কিছু জানতে হবে। এটা বলতে পারবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অথবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।’

২০২০ সালের ২৩ জুন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেকেজি হেলথ কেয়ারের নার্স তানজিনা পাটোয়ারী ও তার স্বামী হুমায়ূন কবিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা করোনার ভুয়া রিপোর্ট দিচ্ছিলেন বলে পুলিশের কাছে তথ্য ছিল। তাদের গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, জেকেজি হেলথ কেয়ারে তানজিনার বেতন ছিল ৩০ হাজার টাকা। ভুয়া করোনা পরীক্ষা করে কোটি কোটি টাকা কামাতে দেখে তানজিনা প্রতিষ্ঠানটির কাছে আরও বেশি বেতন দাবি করেন। বিষয়টি জেকেজির কর্ণধার আরিফ চৌধুরী জেনে তানজিনা ও তার স্বামীকে চাকরিচ্যুত করেন। পরে তারা দুজন বাসায় বসে নিজেরাই করোনার ভুয়া টেস্ট করে মানুষকে রিপোর্ট দেওয়া শুরু করেন। তানজিনা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতেন, আর ঘরে বসে তার স্বামী রিপোর্ট তৈরি করতেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর তানজিনা ও তার স্বামী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সব বলে দেন। এরপর ২৪ জুন জেকেজির গুলশান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে প্রতারক আরিফসহ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের দুদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জেকেজি কার্যালয় থেকে ল্যাপটপসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করে পুলিশ। এ ঘটনায় তেজগাঁও থানায় চারটি মামলা হয়েছে। ওই দিনই প্রতিষ্ঠানটির কিছু কর্মী আরিফকে ছাড়িয়ে নিতে তেজগাঁও থানায় জড়ো হন। তারা থানার বাইরে হট্টগোল করতে থাকেন। এ ঘটনায় পৃথক একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ডা. সাবরিনা চৌধুরীর বিরুদ্ধে করা করোনার জাল সনদ দেওয়ার মামলা চলছে ঢাকা মহানগর অতিরিক্ত হাকিম চার নম্বর আদালতে। মামলাটি এখন যুক্তিতর্ক পর্যায়ে রয়েছে।

আর জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়ার মামলার বিচার চলছে ঢাকা মহানগর অতিরিক্ত হাকিম পাঁচ নম্বর আদালতে।

আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর এম মনিরুজ্জামান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মামলার নথি না দেখে বলতে পারবো না।’

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আজাদ রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তার মামলাটি এখন যুক্তিতর্কের পর্যায়ে রয়েছে।’

ঢাকাটাইমস/০৬জুন/এফএ

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মাদারীপুরে উচ্চ শব্দে হর্ন বাজানো নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১০
সারা দেশে এনআইডি সেবা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ
রংপুরে বাসচাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত
নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আপিল শুনানি বুধবার পর্যন্ত মুলতবি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা