ঢাকা মহানগর বিএনপি ও যুবদলের কমিটি দিতে ধীরগতি যে কারণে

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ জুন ২০২৪, ০৯:১৯| আপডেট : ২৬ জুন ২০২৪, ১৩:২৫
অ- অ+

অনেকটা হঠাৎ করেই ১৩ জুন রাতে ঢাকাসহ তিন মহানগর এবং যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করে বিএনপি। ঈদের ঠিক আগমুহূর্তে এ সিদ্ধান্তে অনেকটা হতবাক হলেও পরবর্তীতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।

১৫ জুন পদোন্নতি দেওয়া হয় বিএনপির ৩৯ নেতাকে। দলটির জাতীয় কাউন্সিলের পর এটিই বড় ধরনের রদবদল।

এদিকে ১৩ দিন অতিবাহিত হতে চললেও এখনো অভিভাবকহীন ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি এবং আন্দোলনে ভ্যানগার্ড বলে পরিচিত যুবদল। এরই মধ্যে এসব ইউনিটের দায়িত্বে আসছেন- এমন অনেকের নাম শোনা গেলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও যুবদলের কমিটি অনেকটা চূড়ান্ত করা হলেও রহস্যজনকভাবে তা থমকে গেছে। আর এর জন্য বিএনপির কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে দায়ী করছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা।

তারা বলছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুজন প্রভাবশালী সদস্য তাদের নিজস্ব লোক সেটআপ করতে মরিয়া। যার জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে নেতৃত্ব আনা কঠিন হয়ে পড়ছে। যদিও দলটির কয়েকজন নেতা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ থাকায় কমিটি দেওয়ার প্রক্রিয়া থমকে গেছে।

দলটির একটি সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের শীর্ষপদে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, হাবিবুর রশিদ হাবিব, তানভীর আহমেদ রবিন, আ ন ম সাইফুল ইসলাম, শেখ রবিউল আলম রবি, নগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদ এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের নাম শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি দলটি। একইভাবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপিতে দলটির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাইফুল আলম নিরব, সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব আমিনুল হক, এসএম জাহাঙ্গীর, তাবিথ আউয়াল এবং যুবদলের সদ্য বিদায়ী সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নাম শোনা গেলেও তাও থমকে রয়েছে।

বিএনপির কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, “বিএনপির প্রভাবশালী দুই নেতা ঢাকা মহানগর বিএনপি এবং যুবদলকে তাদের বলয়মুক্ত করতে নারাজ। তারা দলের মধ্যে এতই প্রভাবশালী যে, পদপ্রত্যাশীরা কাঙ্ক্ষিত পদ পেতে দলটির মহাসচিব বা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ধরনা না দিয়ে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন প্রভাবশালী সেই দুই নেতার বাসায় এবং অফিসে।

সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ এবং যুবদলের কার্যালয়ে পদ প্রত্যাশীদের দেখা মিলে না। এমনকি দলটির নয়াপল্টন এবং গুলশান কার্যালয়েও নেই তাদের সরব উপস্থিতি। কিন্তু নির্দিষ্ট দুই-এক নেতার আশপাশেই তাদের দেখা মিলে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে সদ্য বিলুপ্ত যুবদলের এক সহ-সভাপতি ঢাকা টাইমসকে বলেন, “যারা পদপ্রত্যাশী তারা তো জানে কারা চাইলে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে পদ পাওয়া সম্ভব। তাই স্বাভাবিকভাবেই যথাস্থানে হাজিরা দেওয়াটাই এখন তাদের কাজ।”

তিনি বলেন, “বিএনপিতে একটি বলয়ের কাছে খোদ তারেক রহমানও অসহায়। তাই তারেক রহমান কাউকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে চাইলেও দলের বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে মাঝে মাঝে নিজের ইচ্ছাকেও জলাঞ্জলি দেন।”

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, দলের ভেতর তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত নেতারা বিএনপি নেতা আমিনুল হক, আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল এবং যুবদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্নাকে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের দায়িত্ব দিতে চাইলেও দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতার বিরোধিতার কারণে তাদের মূল নেতৃত্বে আনতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে।

এদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পরের দিন থেকেই রফিকুল আলম মজনু এবং তানভীর আহমেদ রবিন নতুন দায়িত্ব আসছেন- এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সিনিয়র নেতারা আপত্তি জানাতে থাকেন। তাদের বক্তব্য, শীর্ষ দুটি পদেই যদি অপেক্ষাকৃত জুনিয়র নেতাদের পদায়ন করা হয় সেক্ষেত্রে সিনিয়র নেতাদের রাজনীতি করার সুযোগ থাকে না।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপিতে আমিনুল হক পুনরায় দায়িত্বে ফিরছেন এমন খবরেও দলের একটি অংশ আমিনুলের বিরোধিতা করছেন।

ঢাকা মহানগর উত্তরের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির এক যুগ্ম আহ্বায়ক ঢাকা টাইমসকে বলেন, “মহানগর বিএনপি অঙ্গ সংগঠন নয়। যে কাউকে বসিয়ে দিলেও সংগঠন চলবে না। সেক্ষেত্রে অবশ্যই মহানগর রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট এমন কাউকে দায়িত্ব দিতে হবে। তবে সেক্ষেত্রে মূল নেতৃত্বে নতুন পুরাতনের সমন্বয় হতে পারে।”

যুবদলের ঢাকা মহানগরের এক ইউনিট নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, “মুন্না ভাই (মোনায়েম মুন্না) যুবদলের মূল নেতৃত্বে আসুক তা দলের প্রভাবশালী কয়েকজন চাচ্ছেন না। অথচ, এই মুন্না ভাই একসময় তাদেরই অনুসারী বলে পরিচিত ছিলেন।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “অঙ্গ সংগঠনের দায়িত্বে যারাই আসুক সেই বলয়ের আশীর্বাদপুষ্ট কাউকে দিতে হয়। অতীতের কমিটিগুলো যাচাই করলে তা প্রমাণ হবে।

এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তরে দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক দিয়ে সংগঠন চললেও দক্ষিণে আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিব সব বিষয়ে ঐক্যমত ছিলেন বলে দাবি করছেন মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতারা। সদ্য বিলুপ্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির এক সদস্য বলেন, “আমরা চাই সালাম-মজনু কমিটিই পুনর্বহাল হোক। তাদের সঙ্গে পুরো মহানগর ও থানা কমিটিগুলোর সমন্বয় ছিল।”

এ বিষয়ে বিএনপির নবনিযুক্ত প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ঢাকা টাইমসকে বলেন, “বিএনপিতে কোনো বলয় নেই। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। অচিরেই সকলের সম্মতিতেই গ্রহণযোগ্য কমিটি উপহার দেওয়া হবে।”

ঢাকা মহানগর কমিটি এবং যুবদলের কমিটি গঠন না হলে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে কোনো সমস্যা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “মহানগর কমিটি বিলুপ্ত করা হলেও নেতারা তো সক্রিয় আছেন। মহানগর বিএনপির থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোও সচল রয়েছে।”

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ঢাকা টাইমসকে বলেন, “বিএনপি একটি বড় দল। নতুন কমিটিতে অনেক পদপ্রত্যাশী আছে। এদের থেকে দক্ষ একটি নেতৃত্ব বের করা কঠিন। তাই সবার পরামর্শে যদি কমিটি হয় সেক্ষেত্রে একটু সময় লাগতেই পারে।”

(ঢাকাটাইমস/২৬জুন/এফএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়া
চাঁদপুরে সরকারি চাল উদ্ধার, গ্রাম পুলিশ আটক
আড়ম্বর আয়োজনে আরআরএফের দুই কর্মকর্তাকে বিদায় জানালেন ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি
এনসিসি গঠন ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেকট্রোরাল কলেজ গঠনে এবি পার্টি সম্মত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা