রেল স্টেশনে নারী যাত্রীকে কক্ষে আটকে লাঞ্ছনার অভিযোগ বুকিং সহকারীর বিরুদ্ধে

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:০৪ | প্রকাশিত : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:৫৮

নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের একটি কক্ষে আটকে এক নারী যাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার অভিযোগ উঠেছে স্টেশনের বুকিং সহকারীসহ চার কর্মচারীর বিরুদ্ধে।

বুধবার রাত ৮টার দিকে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে এ ঘটনা ঘটে।

লাঞ্ছনার শিকার ওই নারী সৈয়দপুর শহরেরই বাসিন্দা। তার নাম রাবেয়া সুলতানা। তিনি কানাডিয়ান দম্পতির দোভাষী হিসেবে কর্মরত। ঘটনার পর থানায় করা লিখিত অভিযোগ তুলে নিতে স্টেশন কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় ওই নারী আগামী ১ অক্টোবর ঢাকাগামী আন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের জন্য স্টেশনে যান। কিন্তু কাউন্টারের বুকিং সহকারী জানান উক্ত তারিখের কোনো টিকিট নেই। তবে তিনি ওই নারী যাত্রীকে কালোবাজারে টিকিট পেতে সৈয়দপুর প্লাজার গ্লোবাল কম্পিউটারের দোকানে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

সেখানে ছয়টি টিকিটের মূল্য হিসেবে গ্লোবাল কম্পিউটারের মালিক সারোয়ার হোসেন ওই নারী ট্রেনযাত্রীর কাছে ৩ হাজার ২০০ টাকা গ্রহণ করে একটি স্লিপ দিয়ে পুনরায় স্টেশনের বুকিং সহকারীর কাছে পাঠান।

রাবেয়া জানান, বুকিং সহকারী জাহেদুল ইসলাম রনিকে ওই স্লিপ দেওয়ার পর তাকে আক্কেলপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত চারটি টিকিট ১৫০০ টাকা (আসন ছ কোচের ৮৬, ৯০, ৯১ ও ৯২) এবং পার্বতীপুর থেকে জয়পুরহাট পর্যন্ত দুইটি টিকিট ৩০০ টাকা (আসন ছ কোচের ৫২ ও ৫৬) মূল্যের টিকিট প্রদান করেন।

এ সময় সৈয়দপুর স্টেশন থেকে ঢাকা পর্যন্ত টিকিট প্রদান না করায় এবং দেওয়া টিকিটের মূল্য ১৮০০ টাকার স্থলে ৩২০০ টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইল তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

পরে আরও দুজন রেল কর্মচারী মিলে নারী যাত্রীকে টেনে হিঁচড়ে বুকিং সহকারীর কক্ষে আটকে মহিলা রেল কর্মচারীসহ চারজন মিলে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। দেওয়ালের সঙ্গে মাথা চেপে ধরে চর-থাপ্পড় মারতে থাকে তারা। একপর্যায়ে টিকিট ও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়।

খবর পেয়ে সাংবাদিকরা রেল স্টেশনে গেলে বুকিং সহকারী রনিসহ অন্যরা অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। এতে চরম হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। পরে সাংবাদিক নেতারা বিষয়টি সামাল দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং আটকে রাখা নারী যাত্রী সেখান থেকে ছাড়া পায়।

সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী মাহবুব হোসেন বলেন, নারী ট্রেনযাত্রীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা সত্য নয়। তিনি শহরের কোন স্থান থেকে কত টাকায় টিকিট সংগ্রহ করেছেন তা আমাদের জানা নেই। বুকিং থেকে তার টিকিট প্রিন্ট করে দেওয়া হয়েছে।

গ্লোবাল কম্পিউটার দোকান মালিক সারোয়ার বলেন, ওই নারীকে আমি চিনি না। তিনি অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে চাওয়ায় তা করে দিয়েছি। স্টেশন থেকে কেউ পাঠিয়েছে কি না তা আমার জানা নাই। ওই নারীও তখন বলেনি। অথচ এখন মিথ্যে অভিযোগ করছেন। রেলওয়ের কারও সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততাও নাই। টিকিটের অতিরিক্ত দাম নেওয়া হয়েছে কেন? এই প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়েই তিনি মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিউল ইসলাম বলেন, স্টেশনে টিকিট সংগ্রহের বিষয়ে লাঞ্ছিতের ঘটনায় বুকিং সহকারী জাহেদুল ইসলাম রনির বিরুদ্ধে এক নারী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ অভিযোগে অজ্ঞাত রেলওয়ের আরও কয়েকজন কর্মচারীর কথা উল্লেখ করা রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে নারী যাত্রী রাবেয়া বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্ন পর্যায় থেকে মোবাইলে চাপ দেয়া হচ্ছে। সমঝোতা না করলে পাল্টা মামলা দেওয়ার ভয় দেখানোসহ ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদে পড়ার আশঙ্কা আছে বলেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২৯সেপ্টেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :