তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসবে না

ড. ফরিদ আহমেদ
 | প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর ২০২২, ১১:৪৭

রাজনীতি সচেতন উৎসুক সকলেই ভাবছেন এবং তাদের মনে একটি প্রশ্ন- নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসছে কি? গতকাল সকাল বেলায় আমার এক প্রিয় অধ্যাপক বলে ফেললেন- তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো হচ্ছে! আমি কঠোরভাবেই সেই সম্ভাবণা নাকচ করে দিলাম। আমি তাকে আমার যুক্তিগুলো দিলাম। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বিএনপির তেমন কোনো শক্তি ছিল না তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ফিরিয়ে আনার। ২০১৮ সালে বিএনপি নানা কৌশলে নির্বাচনে এসেছিল। আগামী ২০২৪ সালের নির্বাচনেও বিএনপি নির্বাচনে আসবে। যদিও তারা বলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না।

সারা বিশ্ব যেভাবে নির্বাচন করে সেই ভাবেই এবারকার নির্বাচন হবে। বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দিয়ে একটু শোরগোল পাকিয়ে, কিছু জনসভা করে নির্বাচনী হাওয়া তৈরি না করলে কেউই মনোনয়ন নিতে চাইবে না। মনোনয়ন পেতে হলে দলের নেতাদের পেছনে ঘুরতে হয়। কিছু খরচ করতে হয়। সেই সালামী দলের নেতারা একটি আয়ের মাধ্যম হিসেবে নিয়ে থাকেন। বিগত বছরগুলোতে পার্টি অফিস চালাতে যে খরচ হয়েছে সেগুলো উঠাতে হলে নির্বাচনী হাওয়া তৈরি করতে হবে। সুতরাং এখন যেটা আমরা দেখছি সেটি একটি কৌশল। বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল, প্রশাসন জানে আগামীতে কী হতে যাচ্ছে। অনেকেই উচ্চাভিলাষী। কিংবা স্বপ্ন বিলাসী। তারা এই কদিন আগে মুজিব কোট পরতেন। এখন তারা একটু নিরপেক্ষ সাজবার চেষ্টা করছেন। এখন উভয় পক্ষকে একটু তেল দিয়ে থাকেন। ওনারা বিশেষত ভীতু প্রকৃতির মানুষ। যদি লাইগা যায় ধরনের আর কী!

সরকার জানে তাদের অবস্থানটা কী। সরকার নির্বাচনের আগেই সুযোগ করে দিয়েছে জমে থাকা ময়লাগুলো যাতে বেরিয়ে যায়। কে আসল আর কে নকল সেটা চিনে নেয়ার একটি কৌশল। বিএনপি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে কালিমা লাগিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করেছে এবং সেই সুযোগে কিছু সামরিক-বেসামরিক আমলা সরকার থেকে সুযোগ সুবিধা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের জনগণ এবং বিশ্ববাসী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় দেখতে চেয়েছে। বিশ্ববাসীর একটি মাত্র চাওয়া- সাম্প্রদায়িকতাকে না বলা এবং সেটি কেবল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই নিশ্চিত করতে পারে বলে তারা বিশ্বাস করে। সুতরাং, এই নীতি থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কোনোভাবে সরে যায়নি। আবার আরব রাষ্ট্রগুলো ভালো করে জানে এখানে মুসলিম সমাজ যথেষ্ট ভালো আছে। সরকার যেভাবে ধর্মীয় কাজে জনগণের পাশে থাকে সেটা দেখে ভারত খুশি। তবে অনেকেরই ক্ষোভ থাকতে পারে সরকারি চাকরিতে থেকে যোগ্য পদটি পাননি। কিন্তু সরকার পদ না থাকলেও পদোন্নতি দিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদেরকে সম্মানিত করেছেন।

আঞ্চলিক অর্থ- রাজনীতিতে বাংলাদেশ যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। ভারতকে যেমন ব্যবসা করবার সুযোগ দিয়েছে তেমনি চীন, রাশিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র সুখের সঙ্গে বাণিজ্য করে যাচ্ছে। সুতরাং, কোথায় কী বললেন যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাদের বাণিজ্যিক সন্তুষ্টি। জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা থেকে প্রিয় রাজনীতিবিদ জো বাইডেনের কাছে আর কেউই হতে পারেননি। কমলা হ্যারিস জানেন ২০০১ সালে ক্ষমতা পেয়ে সেই সরকার কোন পথে হেটেছিল। গণতন্ত্র মানে এখন অসাম্প্রদায়িকতা। ৯/১১’র পর এটি নতুন উপলব্ধি পশ্চিমা বিশ্বর জনগণ ও রাজনীতিবিদদের, আর তা হলো অসাম্প্রদায়িকতা। সে জন্য তারা তাদের গণতন্ত্রের ঘোড়ায় একটি লাগাম ও একটি চটকদার শব্দ ইনক্লুসিভ (inclusive ) যুক্ত করে দিয়েছেন। তারা আগামী দিনের সমাজ নিয়ে গবেষণা করে এবং সেই ভাবে তাদের রাজনৈতিক কৌশল নির্মাণ করে। আপনারা মোবাইল ফোনের বিবর্তন যদি মনোযোগ দিয়ে দেখেন তাহলেই বুঝবেন তারা কিভাবে আমাদের টেস্ট বুঝে থাকেন। তারা জনগণকে ভালো করে বোঝে। তারা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করে এবং তাদের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে তাদের সাহায্য করে। গণতন্ত্র জনগণের কল্যাণের জন্য- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে গণতন্ত্র দিয়েছেন, যেভাবে কোভিড দুর্যোগ, অর্থনৈতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেছেন, তাতে তিনি ১০০-তে ১০০ পেয়েছেন। আর র‌্যাব নিয়ে যে রাজনীতি আপনারা করেছেন, যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বাজনা বাজিয়ে কাবু করতে চেয়েছেন, সেখানে আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। বাংলাদেশ আগামী এক বছর নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হয়েছে। এটি ওই সমুদ্র বিজয়ের মতো মহা বিজয়।

বাংলাদেশের জন্য জনগণ শেখ হাসিনাকে চায়। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ কল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। আজ যে পরিমাণ বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যে পরিমাণ হাসপাতাল আছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে, যেভাবে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান হয়েছে, যে পরিমাণ খাদ্য আমরা উৎপাদন করছি তা দেখে পাকিস্তানের জনগণ উসখুশ করেছে- তারা কেন পাকিস্তান ভাঙল সেটাও তারা এখন বুঝতে পারছে। তারা বাংলাদেশের বন্ধু হতে চায়। সুতরাং, কয়েকটি জনসভা আর জনসমাবেশ বাংলাদেশের রাজনীতির গতিধারাকে প্রভাবিত করবে না। যেভাবে রয়েছে পদ্মা মেঘনা যমুনা বহমান, সেই ভাবে থাকবেন অমর হয়ে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। তাই সালাম সালাম হাজার সালাম শেখ হাসিনার চরণে।

কেবল পায়রা বন্দর নির্মাণ করেননি নেত্রী, তিনি গণতন্ত্রের কোটি কোটি পায়রা আকাশে উড়তে দিয়েছেন বলেই আজ বড় বড় জনসভা করছেন। তবে হুমকি বা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিলে চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যাবেন। সুতরাং, ভাববেন গভীরভাবে। হাঁটবেন গণতন্ত্রের পথে। পেট্রল বোমা যেমন রুখে দিয়েছে জনগণ, তেমনি জঙ্গি ও সন্ত্রাসকেও রুখে দেবে বাংলাদেশ।

১৯৯১ সালে যেভাবে রাতের আঁধারে কিছু জেনারেল নির্বাচনী ফলাফল বদলে দিয়েছিল, যেভাবে ২০০১ সালে লতিফুর ঘুটা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছিল তারা আর নেই। সুতরাং, সময় গেলে সাধন হবে না। জনগণের বিপদে পাশে থাকাই রাজনীতি। এখন জনগণ কষ্টে আছে তাদের পাশে থাকবেন। সেই দায়ভার আমাদের সকলের ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সমস্যা। জনগণের কষ্টে তাদের পাশে থাকা আমাদের সকলের নাগরিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালন না করে জনসভা করলে কোনো ফল হবে না।

লেখক: অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :