বিশ্ববাজারে কমেছে জ্বালানি তেলের দাম, দেশে কমার কোনো তোড়জোড় নেই

মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২২, ১১:২১ | প্রকাশিত : ২৩ নভেম্বর ২০২২, ০৯:৫৩

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। টানা কয়েকদিন ধরেই দরপতন হচ্ছিল। সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই অপরিশোধিত তেল ৭৯ ডলার ১১ সেন্টে বিক্রি হয়েছে। আর ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেল বিক্রি হয়েছে ৮৭ ডলার ১১ সেন্টে। এই দর গত দুমাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে বাংলাদেশে এখনই তেলের দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বলছে, আরও কয়েকদিন বাজার দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আপাতত কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, দাম কমিয়ে সমন্বয় করা হলেও এর প্রভাব অর্থনীতিতে বা ভোক্তা পর্যায়ে কোনো কাজে আসে না। এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলারের কাছাকাছি যখন উঠানামা করছিল তখন বাংলাদেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। গত ৫ আগস্ট সরকার, ডিজেল ও কেরোসিনের প্রতি লিটারের দাম ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা আর অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করে। এর প্রভাবে দেশের যানবাহনে ভাড়া বৃদ্ধি পায়। এমনকি ট্রাক ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়া দেশের সব পণ্যের মূল্য বেড়ে যায়। সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি এক লাফে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠে।

সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশেও জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে। বিশ্ববাজারে দাম কিছুটা কমলে গত ৩০ আগস্ট দেশের বাজারে লিটারে মাত্র পাঁচ টাকা কমানো হয় । তখন দুই ধরনের তেলের দামই ছিল ৯০ ডলারের উপরে।

মূলত বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় জ্বালানি তেলের দাম নিম্নমুখী হয়েছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় বড় দেশ ঋণের সুদের হার বাড়িয়েই চলেছে। তবে বিশ্ববাজারে দাম কমার ধারা কতদিন অব্যাহত থাকবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন। তারা বলছেন, দাম কমতে থাকলে ওপেক তেল উত্তোলন হ্রাস করলে দাম খুব একটা না-ও কমতে পারে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ বেশিরভাগ পরিশোধিত তেল আমদানি করে। দেশে বেশি দরকার পড়ে ডিজেল। পেট্রল আমদানি করতে হয় না, কেরোসিনও দেশেই উৎপাদন হয়। আর অকটেন কিছুটা আমদানি করতে হয়। দেশে চাহিদা অনুযায়ী পরিশোধন করার সক্ষমতা নেই বলে বেশিরভাগ পরিশোধিত ডিজেল আমদানি করতে হয়।

দেশের বাজারে তেলের দাম কমানো হবে কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন্স) মোহাম্মদ জাহিদ হোসাইন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যে তেলের দাম কমেছে সেটা ক্রুড অয়েল। পরিশোধিত না। আমরা অধিকাংশ পরিশোধিত তেল আমদানি করি।’

পরিশোধিত তেলের দামও কিছুটা কমেছে, তাহলে কি দেশের বাজারে দাম কমবে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দু-এক দিনের মার্কেট দর হিসেব করে তো সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। এই প্রাইজটা যদি স্থবির থাকে বা আরও কমে তাহলে সরকার দেশের বাজারেও তেলের দাম কমাবে। তবে এখনো সরকার জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দিচ্ছে।’

বিপিসি’র এই উপ-মহাব্যবস্থাপক বলেন, আমরা মাস-দুমাসের দর পর্যবেক্ষণ করবো। তবে এখনই দাম কমানোর বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। সরকার এদিকে সজাগ আছে। অবশ্যই বিশ্ব বাজারের সাথে সমন্বয় করা হবে। তিনি আরও বলেন, আজকে যদি কোনো বন্দরে জাহাজে তেল লোড করা হয় সেক্ষেত্রে আজকে এবং আগে পরের ৫ দিনের মার্কেট দর হিসেব করে কেনা হয়। সেটা ২০ দিন পরে বাংলাদেশে আসলেও ওই প্রাইজই থাকে। সে হিসেবে আমরা কম দরে তেল কিনলেও সেটা কয়েকদিন পরে দেশের বাজারে আসবে। আর দর যদি কম থাকে তবে সরকার কমানোর সিদ্ধান্ত নেবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বাংলাদেশে দাম কমিয়ে সমন্বয়ের দৃষ্টান্ত আছে। কিন্তু সমন্বয় হলেও এর প্রভাব অর্থনীতিতে বা ভোক্তা পর্যায়ে কোনো কাজে আসে না।’

তিনি বলেন, ‘এখন সরকার সমন্বয় করে যদি ভোক্তা পর্যায়ে প্রভাব ফেলতে পারে তবে সেটা ঠিক আছে। এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলে সেটা ঠিক আছে।’

তেলের দাম বাড়ার কারণে যেসব জায়গায় প্রভাব পড়েছে সেসব জায়গা ঠিক করার আহবান জানান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণ করছি। গত দুই মাস ধরে বাজার উঠানামা করছে। গত কয়েক দিনে অবশ্য বেশ খানিকটা কমেছে। আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। যদি ৭৫ ডলারের নিচে নেমে আসে, তাহলে হয়তো সরকার চিন্তাভাবনা করবে।’

২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিকে দুই ধরনের তেলের দামই ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।

এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে একপর্যায়ে প্রতি ব্যারেল তেল ১৩৯ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। এরপর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগে ওঠানামার মধ্যেই তেলের দর ১১০ থেকে ১১৫ ডলারের মধ্যে ছিল। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলারে ওঠে। সে সময়ই দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ানো হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৩নভেম্বর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :