মহেশপুরে কালোমুখো হনুমান রক্ষায় প্রয়োজন অভয়ারণ্য

আলমগীর হোসেন, মহেশপুর (ঝিনাইদহ)
 | প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:৩১

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী শ্যামকুড় ইউনিয়নের ভবনগর গ্রাম। এই গ্রামের বনাঞ্চলে প্রায় ২০০টি কালোমুখো বিরল প্রজাতির হনুমান বসবাস করেন। এই গ্রামের মানুষের সঙ্গে এদের রয়েছে দারুণ সখ্যতা। কবে থেকে হনুমানগুলো এখানে বসবাস করে তা সঠিকভাবে কেউই জানেন না।

তবে এলাকার প্রবীণরা মনে করেন বিট্রিশ আমল থেকেই এরা এই গ্রামে দলবদ্ধভাবে বসবাস করে আসছে। এদের মধ্যে বয়োবৃদ্ধ, শিশু ও মধ্যবয়সী হনুমান রয়েছে। যদিও এর আগে হনুমানের সংখ্যা কম ছিলো। দিন বাড়ার সাথে সাথে হনুমানের সংখ্যাও বেড়েছে।

এরা দিনের বেলায় একই সাথে কিংবা একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে শামকুড় মাঠপাড়া, স্বরুপপুর ও শ্রীনাথপুর গ্রামের মাঠে ঘাটে খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ালেও রাত হলে আবারও ফিরে আসে ভবনগর গ্রামে। তবে খাবারের সন্ধানে ফসলের ক্ষতিও করেন এসব হনুমান। কেউ কেউ বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখেন আবার কেউ কেউ ফসল নষ্ট করায় হনুমান মেরে পিটিয়ে আহত করেন।

যদিও ২০২০ সাল থেকে বন অধিদপ্তরের সিসিএফ আমির হোসেন চৌধুরীর প্রচেষ্টায় সরকারিভাবে প্রতিদিন এসব হনুমানদের খাবারের জন্য ১৬ কেজি কলা, দুই কেজি বাদাম, দুই কেজি পাউরুটি (৫০পিচ) ও সবজি দুই কেজি বরাদ্দ করা হয়েছে। আর এসব খাবার হনুমানদের খুঁজে খুঁজে খাইয়ে বেড়ান ভবনগর গ্রামের নাজমুল হাসান। নাজমুলের ডাক চিৎিকার শুনতেই হনুমানগুলো লাঁফাতে লাঁফাতে ছুঁটে আসে তার কাছে। নামজুলের হাত থেকে খাবারও খায় নির্ভয়ে।

তবে বন অধিপ্তরের পক্ষ থেকে যে সামান্য পরিমাণ খাবার দেওয়া হয় তা দিয়ে ক্ষুধা মেটে না। ক্ষুধায় কাতর এসব বন্য প্রাণী। তাছাড়া আগের তুলনায় হনুমান বেড়ে যাওয়া খাদ্য সংকট আরো দেখা দিয়েছে। এলাকার সচেতন ও মানবিক মানুষরা মনে করেন বিরল প্রজাতির এসব কালোমুখো হনুমান দেশের প্রাণিসম্পদ। যেকারণে এদের রক্ষায় ও অভয়ারণ্য তৈরির ব্যাপারে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

হনুমান দেখভালকারী নাজমুল হাসান বলেন, বন অধিদপ্তর থেকে যে পরিমাণ খাবার দেওয়া হয়, তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। যে কারণে খাবারের সন্ধানে এরা এদিক-সেদিক ছোঁটা-ছুটি করে মানুষের ফসল নষ্ট করছে। এছাড়াও এলাকার বনজঙ্গল কমে যাওয়ায় এরা লোকালয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এদের নিরাপদ থাকার জায়গা ও পরিমাণ মত খাবার দরকার।

ভবনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মিকাইল হোসেন বলেন, দিন দিন এলাকায় গাছ গাছালি কমে বসতভিটা বাড়ায় হনুমানদের অবাধ বিচরণে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। পরিমানের তুলনায় সামান্য খাবার দেওয়ায় এরা ফসলের ক্ষতি করছে। যেকারণে এলাকার মানুষ ফসল বাঁচাতে এখন বেশিভাগ সময় এদের তাড়াহুড়ো করে। এজন্য সরকারের তরফ থেকে যদি এদের পরিমান মত খাবার ও নির্ভয়ে থাকার ব্যবস্থা করা যেত তাহলে দেশের প্রাণিসম্পদ রক্ষার পাশাপাশি হনুমানগুলো নির্ভয়ে এখানে বসবাস করতে পারতো। স্থানীয় মেম্বার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এখানকার হনুমানগুলো রক্ষা করার জন্য গাছপালা বা বন সৃষ্টি করা একান্ত জরুরি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আতিবুর রহমান বলেন, হনুমান পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এদের মারা ও নিধন করা দন্ডনীয় অপরাপ। এই প্রাণীটি মানুষের সাথে মিলে মিশে থাকতে পছন্দ করে। অন্যপ্রাণী থেকে এদের রোগবালায়ও কম হয়। এদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।

বন বিভাগের কর্মকর্তা শফিকুল রহমান বলেন, এসব হনুমানের উপর প্রতিবেদন করে খাবার বরাদ্ধ করা হয়েছিলো। এরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। কিছু সময় সংখ্যায় বেশি হয় ও কিছু সময় কম। তবে যদি এসব হনুমানের রক্ষণাবেক্ষণে অভয়ারণ্যের তৈরি করা যায় তাহলে সব থেকে ভালো হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার রাজবংশী বলেন, ভবনগর গ্রামে কালোমুখো হনুমান রয়েছে। তাদের জন্য সরকারিভাবে কিছু খাবার দেওয়া হলেও বর্তমানে সংখ্যা বেড়ে যাওয়া যে খাবার দেওয়া হচ্ছে তা যথেষ্ট নয়।

তিনি আরও বলেন, ওই এলাকায় যে সকল সরকারি খাস জমি আছে তা চিহিৃত করে গাছপালা লাগানো হবে।

(ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :