তালগাছে বিষ প্রয়োগ

এরা নরকের কীট, পশুও এমন কাজ করে না: হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২২:২৩
অ- অ+

রাজশাহীর বাগমারায় সড়কের পাশে থাকা ৫০টি তালগাছে অভিনব কায়দায় কীটনাশক প্রয়োগের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, এরা মানুষ না, এরা নরকের কীট। কোনো পশুও এমন কাজ করে না। বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার এ মন্তব্য করেন।

এ ঘটনায় কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ২৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে হাজির হয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে যে পত্রিকায় এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, সেই প্রতিবেদককে তার সব রেকর্ডপত্র নিয়ে ওই দিন আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পত্রিকায় নাম আসা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার আলী প্রামাণিককেও ওই দিন হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গত ৩১ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘৫০ তালগাছে কীটনাশক, দোষীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ কেন নয়’ শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়। এটি দেখে ১ ফেব্রুয়ারি ভাষার মাসের প্রথম দিনে বাংলায় দেয়া আদেশে আদালত বলেন, ‘খবরের উল্লেখিত ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। সবুজ বনায়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর বৃক্ষরোপণের অঙ্গীকারকে বিবেচনায় নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল দিচ্ছি।’ এ সময় পত্রিকায় নাম আসা শাহরিয়ার আলী প্রামাণিককে তলব করে আদেশ দেন হাইকোর্টের বেঞ্চ।

এরই ধারাবাহিকতায় শাহরিয়ার শনিবার হাইকোর্টে হাজির হয়ে তালগাছের বিষয়ে তার ব্যখ্যা দাখিল করেন। সেখানে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন। আদালত সকালে শুনানির শুরু থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কোর্ট চলাকালীন শাহরিয়ারকে দাঁড় করিয়ে রাখেন। এ সময় বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকও হাজির হয়ে তার সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন ছবিসহ দাখিল করেন।

কীটনাশক দেয়ার ফলে তালগাছগুলোর বর্তমান অবস্থার বর্ণনা শুনে এবং গাছগুলোর ছবি দেখে হাইকোর্ট চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘আপনারা হয়তো মনে করবেন যে তালগাছের মতো ছোট্ট একটা বিষয়ও হাইকোর্ট দেখে? হ্যাঁ, আমাদের দেখতে হয়। কারণ সুপ্রিম কোর্টকে বলা হয় জাগ্রত বিবেক। আমরা তালগাছগুলোতে বিষ দেয়ার সংবাদ দেখে আহত হয়েছি।’

আদালত বলেন, ‘এতগুলো তালগাছ মেরে ফেলার চেষ্টা কী ভয়ংকর! একটা তালগাছ বড় হতে ১২ বছর সময় লাগে। এই ১২ বছর কী ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব? আর সেই গাছগুলোকে বিষ দিয়ে হত্যা করতে চাইছে। একটা পশুরও তো মায়া থাকে! বিষ দেয়া তালগাছগুলোর ছবি দেখে আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। এটাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। সেই লোককে হাজার সালাম জানাচ্ছি, যিনি এই গাছগুলো লাগিয়েছেন।’

বিচারক বলেন, ‘আমাদের সমাজে কি এসব পশু বাস করে? এসব পশুকে চিহ্নিত করাই হচ্ছে আসল কাজ। তা না হলে মানবসমাজের মধ্যে এই পশুরা আতঙ্কের কারণ হয়ে থাকবে। এমন নির্মম ছবি আমরা দেখিনি। এভাবে সুন্দর গাছগুলো মেরে ফেলার চেষ্টা তারাই করতে পারে, যারা তাদের বাবা-মা, স্কুল-কলেজ থেকে ভালো কোনো শিক্ষা পায়নি।’

এ সময় আদালত বলেন, ‘আইন-আদালত দিয়ে দেশের কোটি কোটি মানুষকে ভালো করা সম্ভব না, যদি না আমরা নিজেরাই মানবিক ও সচেতন হই। যারা এভাবে গাছ মেরে ফেলতে চায়, পুকুরে বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলে, প্রাণী হত্যা করে এরা নরকের কীট।’

তালগাছগুলোকে বাঁচাতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় ধন্যবাদ দিয়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘শুধু অফিসে বসে থাকবেন না। বের হয়ে এলাকায় ঘুরে এসব দেখবেন, খোঁজখবর নেবেন।’

আদালতে শাহরিয়ার আলীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. জাহিদুল হক জাহিদ। সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্রের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী।

(ঢাকাটাইমস/১২ ফেব্রুয়ারি/আরকেএইচ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ব্রহ্মপুত্র নদে ভেসে উঠল নিখোঁজ ২ ভাইয়ের মরদেহ
তাপপ্রবাহ থেকে সুরক্ষিত থাকতে যেসব নির্দেশনা দিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
ঢাকাসহ ৫৬ জেলার ওপর দিয়ে বইছে তাপপ্রবাহ, আট জেলায় তীব্র
দাবা খেলা নিষিদ্ধ করলো আফগানিস্তান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা