মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল: জনবলের অভাবে বন্ধ ডায়ালাইসিস ও এমআরআই পরীক্ষা

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে কিডনি রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস ইউনিট ও আধুনিক রোগ নির্ণয়কারী এমআরআই যন্ত্র থাকার পরও সেগুলো চালু না হওয়ায় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। কোটি টাকার এসব যন্ত্র বছরের বেশি সময় ধরে পড়ে রয়েছে হাসপাতালে। কর্তৃপক্ষ বলছে নতুন ও দক্ষ জনবল না থাকার কারণে এই সেবাগুলো চালু করা সম্ভব হয়নি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি হাসপাতালের পুরানো ভবনের উত্তর পাশের নিচতলায় কিডনি রোগীদের চিকিৎসার জন্য ডায়ালাইসিস ইউনিটের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অপরদিকে, ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ওষুধ সংরক্ষণাগার (সিএমএসডি) থেকে এমআরআই যন্ত্রটি হাসপাতালকে দেওয়া হলে সেটি নতুন ভবনের নিচতলার পূর্বপাশে যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের নতুন ভবনের নিচতলার পশ্চিম ও পূর্বপাশে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগ। এ বিভাগের পূর্বপাশে সিটি স্ক্যান, ডিজিটাল এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম ইউনিট আর পশ্চিম পাশে এমআরআই ইউনিট। সেখানে সিটি স্ক্যান, ডিজিটাল এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রামের কার্যক্রম চালু থাকলেও শুরু থেকেই বন্ধ রয়েছে কয়েক কোটি টাকার এমআরআই যন্ত্রটি। অপরদিকে, কিডনি রোগীদের চিকিৎসা সেবায় ডায়ালাইসিস ইউনিটের দরজাও তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। উদ্বোধনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও শুধুমাত্র কয়েকজন চিকিৎসক, দক্ষ নার্স ও টেকনোলজিস্টের অভাবে বন্ধ থাকা এসব সেবা চালু করা যাচ্ছে না। অলস পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতিগুলো। সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার মানুষ। ফলে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে অন্যত্র এসব সেবা নিচ্ছেন রোগীরা।
শরিফুর রহমান নামের সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি কয়েকবছর ধরে ঘাড় ও পিঠ ব্যাথায় ভুগছি। চিকিৎসক আমাকে এমআরআই পরিক্ষার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমাদের এই হাসপাতালে এই যন্ত্রটি থাকলেও সেটি বন্ধ থাকায় ঢাকার ইবনে সিনা ডায়গনস্টিক এন্ড ইমেজিং সেন্টার থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা দিয়ে এমআরআই পরিক্ষাটি করাই। কিন্তু এই পরীক্ষাটি সরকারি হাসপাতালে অর্ধেক টাকায় করা যেতো।’
পূর্ব দাশড়ার মোহাম্মদ আলী জানান, ‘মানিকগঞ্জে প্রতিনিয়তই কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আমার মা দুই বছর যাবৎ কিডনি রোগে আক্রান্ত। তাকে প্রতি মাসেই ঢাকায় নিয়ে ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। সদর হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবাটি চালু হলে অর্থ ও ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতাম।’
হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নূরুল ওয়াহাবের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘এই হাসপাতালে রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং বিভাগে সিটি স্ক্যান, ডিজিটাল এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও এমআরআই পরিক্ষার মেশিন রয়েছে। কিন্তু জনবল না থাকায় এমআরআই মেশিনে পরিক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এই বিভাগের সকল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কমপক্ষে পাঁচজন টেকনোলজিস্ট ও চারজন রেডিওলজিস্ট প্রয়োজন। সেখানে আমাদের রয়েছে মাত্র দুইজন টেকনোলজিস্ট ও একজন রেডিওলজিস্ট। যত দ্রুত জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে তত দ্রুতই এমআরআই পরীক্ষার সুযোগ পাবে মানিকগঞ্জবাসী।’
হাসপাতালের আরএমও ডা. কাজী একেএম রাসেল জানান, ‘আমাদের এই হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল এখনো ১০০ শয্যারই রয়ে গেছে। এই হাসপাতালে নেফ্রোলজি বিভাগ ও দক্ষ জনবল না থাকায় চার বেডের ডায়ালাইসিস ইউনিটের সেবা চালু করা সম্ভব হয়নি।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ডায়ালাইসিস ইউনিট ও এমআরআই মেশিন থাকার পরও আমরা সেগুলো জনবলের অভাবে চালু করতে পারিনি। নতুন জনবলের জন্য ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কয়েকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। নতুন জনবল পেলেই আমরা এসব সুবিধা রোগীদের দিতে পারবো।’
(ঢাকাটাইমস/১৩ফেব্রুয়ারি/এআর)

মন্তব্য করুন