রাশিয়া থেকে অত্যাধুনিক এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনছে ইরান
রাশিয়ার আধুনিক যুদ্ধবিমান এসইউ-৩৫ তথা সুখোই-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি চূড়ান্ত করেছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা ও নিপীড়নমূলক ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে তেহরান ও মস্কো নিজেদের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা শক্তিশালী করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার অংশ হিসেবে অত্যাধুনিক এই বিমান পেতে যাচ্ছে ইরান। পৃথিবীতে যত ধরনের জঙ্গি বিমান আছে— সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক ও শক্তিশালী মনে করা হয় রাশিয়ার চতুর্থ প্রজন্মের এসইউ-৩৫ ও আমেরিকার পঞ্চম প্রজন্মের এফ-৩৫ জঙ্গি বিমানকে।
জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন রুশ বার্তা সংস্থা স্পুৎনিককে যুদ্ধবিমান কেনার তথ্য জানিয়েছে।
মিশন বলেছে, ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইরান বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের কাছে যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তাব দেয়। সে সময় কেবল রাশিয়া ইরানকে যুদ্ধবিমান সরবরাহ করতে নিজের প্রস্তুতির কথা জানায়।
জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী মিশন আরও বলেছে, ইরানের সমরাস্ত্র কেনার ওপর তখন জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তেহরানের পক্ষে রুশ যুদ্ধবিমান কেনা সম্ভব হয়নি। তবে ২০১৫ সালে পাশ্চাত্যের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতার ভিত্তিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী ২০২০ সালের অক্টোবরে ইরানের ওপর থেকে প্রচলিত সমরাস্ত্র কেনার নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। এরপর ব্যাপকভিত্তিক আলোচনা ও দেনদরবার শেষে রাশিয়ার কাছ থেকে সুখোই যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি চূড়ান্ত করল ইরান।
তবে কবে কখন এ সংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে কিংবা ঠিক কবে নাগাদ রাশিয়া ইরানকে যুদ্ধবিমান সরবরাহ শুরু করবে সেকথা ইরানের স্থায়ী মিশন জানায়নি। এছাড়া, চুক্তির বিষয়বস্তু গোপনীয় হওয়ায় এ সংক্রান্ত অন্য কোনো তথ্যও জানানো হয়নি।
ইরান ও রাশিয়া উভয় দেশ মার্কিন নেতৃত্বাধীন দেশগুলোর কঠোর নিষেধাজ্ঞার শিকার। তবে এসব নিষেধাজ্ঞা পশ্চিমা দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করতে পারেনি।
ইরান ১৯৯০ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান কিনেছিল। এরপর আর কোনো আধুনিক যুদ্ধবিমান কিনতে পারেনি।
এসইউ-৩৫ বনাম এফ-৩৫ এসইউ-৩৫ এর ন্যাটোর কোড নাম ‘ফ্ল্যাঙ্কার-ই’। এগুলো একক আসন ও জোড়া ইঞ্জিনের সুপারম্যানিউভেরেবল বিমান। সুখোই ডিজাইন ব্যুরো এটি ডিজাইন করেছে এবং কমসোমলস্ক-অন-আমুর এয়ারক্রাফট প্ল্যান্ট দ্বারা এটি নির্মিত হয়েছে।
এটি খুব শক্তিশালী চতুর্থ প্রজন্মের জঙ্গি বিমান। কেউ কেউ একে জেনারেশন-৪.৫ বলেও উল্লেখ করেন। শুধু স্টেলথ (শত্রুর চোখে অদৃশ্য থেকে তাদের গতিবিধি নজরে রাখা) প্রযুক্তির ঘাটতির কারণে এটি পঞ্চম প্রজন্মের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি। এসইউ-৩৫-এর গতি দ্রুততর ও চলাচল সক্ষমতা তুলনামূলক ভালো। কিন্তু, এফ-৩৫-এর বিধ্বংসী মিসাইল ও তুলনামূলক ভালো রাডার সিস্টেম থাকায় শত্রু ধ্বংসের সুযোগ বেশি।
এই মুহূর্তে এই ২ ধরনের জঙ্গি বিমানের মধ্যে লড়াই হলে এসইউ-৩৫ হয়তো জিতবে। তবে ভবিষ্যতে লড়াই হলে এর আপগ্রেডেড শিডিউলের জন্য এফ-৩৫-এর জেতার সম্ভাবনা বেশি। পৃথিবীতে হাতে গোণা কয়েকটি দেশ রাশিয়ার অত্যাধুনিক এসইউ-৩৫ বিমান পেয়েছে। এর মধ্যে চীন ২৪টি, মিশরীয় বিমান বাহিনী ২৪টি, ইন্দোশিয়ার বিমান বাহিনী ১১টি এসইউ-৩৫ ব্যবহার করছে। রাশিয়ার সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান এসইউ-৫৭। এটি স্টিলথ ক্যাটাগরির অর্থাৎ রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম। এই বিমান কোনো দেশকে দেয়নি রাশিয়া।
(ঢাকাটাইমস/১২মার্চ/এসএটি/ইএস)