প্রধানমন্ত্রীর সফরের অর্জনে বিএনপির গাত্রদাহ আর ফখরুলের মিথ্যাচারের রেকর্ড: তথ্যমন্ত্রী
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর জাপান, আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য সফরের অর্জনে বিএনপি নেতাদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। তাদের হতাশা এবং গাত্রদাহ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মিথ্যাচারের অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন।
শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের মাল্টিপারপাস ভবনের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক নসরুল্লাহ ইরফানসহ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, 'বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তো দেশের জন্য সফরে গিয়েছেন। জাপান আমাদেরকে ৩০ বিলিয়ন ইয়েন বিভিন্ন প্রকল্পে সহায়তার চুক্তি করেছে। যে বিশ্ব ব্যাংক আমাদের পদ্মা সেতু থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, সেই বিশ্বব্যাংক তাদের ভুল উপলব্ধি করে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ওয়াশিংটনে নিয়ে গেছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তারা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে এবং ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।'
'সে অর্জনগুলো নিয়ে বিএনপি মানুষের কাছে বিকৃতভাবে কেন মিথ্যাচার করছে সেটিই আমার প্রশ্ন' উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, 'মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেবদের অনুরোধ জানাব, দেশের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সাহায্য সহযোগিতা এবং সম্মান বয়ে এনেছেন সেজন্য তারাও সম্মানিত বোধ করতে পারেন।'
তিনি বলেন, 'আইএমএফ প্রধান আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্ব প্রয়োজন। তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এগুলো দেখে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের গাত্রদাহ হচ্ছে, সেজন্য তিনি মিথ্যাচার করছেন। একই সাথে তিনি তার মিথ্যাচারের ইতিপূর্বের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন।'
সম্প্রতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আফগানিস্তানের নিচে দেখানো ফ্রান্সভিত্তিক সংস্থা রিপোর্টার্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স- এর রিপোর্ট সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'এই রিপোর্টটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং গাঁজাখোরি গল্প ছাড়া অন্য কিছু নয়। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আজকে পৃথিবীতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদাহরণ। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অনেক উন্নত দেশের চেয়েও বেশি।'
মন্ত্রী আরও বলেন, 'আফগানিস্তানে যেখানে মেয়েরা স্কুল এবং ইউনিভার্সিটিতে যেতে পারে না, যে আফগানিস্তানে কেউ কথাই বলতে পাওে না, সেটার নিচে বাংলাদেশকে দেখিয়েছে তারা। এতেই তো প্রমাণিত হয় এই রিপোর্টটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভুয়া এবং গাঁজাখোরি গল্প ছাড়া অন্য কিছু নয়।'
'এই সংগঠন জননেত্রী শেখ হাসিনার ছবি বিকৃত করে তাদের অনলাইনে প্রচ্ছদ ছাপিয়েছিল এবং আপত্তিকর ক্যাপশন দিয়েছিল এবং সেটার প্রেক্ষিতে ফ্রান্সের আদালতে মামলা হয়েছে' উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রকে ঐতিহাসিক বর্ণনা করে বলেন, বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হবার পূর্ব মুহূর্তে তার স্বাধীনতার ঘোষণা যেটি ওয়ারলেসের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়েছিল, সেটি এই চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রে পাঠ করে প্রথম শুনিয়েছিলেন তৎকালীন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ মার্চ সারাদিন এটি প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতারা যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন একজন সেনাবাহিনীর অফিসার দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি পাঠ করা প্রয়োজন। তখন প্রথমে ইপিআরে'র মেজর রফিক বীর উত্তমের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেছিলেন আমি এমবুশ নিয়ে আছি, সরে গেলে মুক্তিযুদ্ধের ক্ষতি হতে পারে। তিনিই জিয়াউর রহমানের খোঁজ দিয়েছিলেন।
ড. হাছান বলেন, 'মেজর রফিকের ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ বইয়ে সবিস্তারে বর্ণিত আছে। মেজর রফিক লিখেছেন- ২৫ মার্চ রাতে জিয়াউর রহমান সোয়াত জাহাজ থেকে পাকিস্তানিদের অস্ত্র খালাস করতে যাচ্ছিলেন। পথে বাধা পেয়ে তিনি ফেরত আসেন, পরে ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেন।'
মন্ত্রী বলেন, 'অনেক ইতিহাস বিকৃতি ঘটানো হয়েছে, যা চিরদিনের জন্য বন্ধ করার লক্ষ্যে আমরা সমগ্র পৃথিবীর আর্কাইভ থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি। পৃথিবীর বিভিন্ন আর্কাইভে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, আমাদের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ, সেগুলোর নানা দলিল সংরক্ষিত আছে। পৃথিবীর অন্যতম সেরা আর্কাইভ ব্রিটিশ পাথে থেকে এরকম ১৫৬ টি ডকুমেন্ট সংগ্রহ করার জন্য আমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। যারা ইতিহাস বিকৃতি ঘটিয়েছে, তারা জানে না সারা পৃথিবীতে সত্য ইতিহাস সংরক্ষিত আছে। সেটা তো বিকৃত করা সম্ভবপর হয়নি। আমরা সেটিই সংগ্রহ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, চিরদিনের জন্য এই বিতর্ক কেউ যেন আর উপস্থাপন করতে না পারে।'
(ঢাকাটাইমস/০৫মে/ইএস)