লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাত থেকে বেঁচে ফেরা মাদারীপুরের ৩০০ যুবকের কর্মসংস্থান

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৭ মে ২০২৩, ২১:২৮
অ- অ+

অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় লিবিয়ার বন্দিশালায় মাফিয়াদের হাতে আটক প্রায় ৩০০ যুবককে দেশে ফিরিয়ে এনেছে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসন। এদেরকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সহায়তা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ফলে বদলে যাচ্ছে তাদের জীবনযাত্রার মান। আর অবৈধভাবে বিদেশযাত্রা রোধে সভা, সমাবেশ ও র‌্যালিসহ নানা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার কুমড়াখালী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ চৌকিদারের ছেলে আরিফুল ইসলাম। দালালের মাধ্যমে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাবার সময় আটক হয় লিবিয়ায়। ২১ দিন জেলে থাকার পর জেলা প্রশাসনের সহায়তায় দেশে ফেরেন তিনি। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চরমুগরিয়া এলাকায় কম্পিউটারের দোকান দিয়ে আয় করে এখন সংসার চালাচ্ছেন।

আরেক ভুক্তভোগী সদর উপজেলার মধ্য খাগদী এলাকার আব্দুর বর বেপারীর ছেলে রকিব হোসেন। লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে ৭ মাস অমানবিক নির্যাতনের পর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে দেশে ফেরেন। পরে ফ্রিল্যান্সিং কোর্সের প্রশিক্ষণ নেন। এখান থেকেই আয়ের স্বপ্ন বুনেছেন। আরিফ আর রকিবের এই করুণ কাহিনী শুনে হতবাক অন্য বেকার যুবক-যুবতীরাও।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, গত ৩ বছরে অবৈধপথে বিদেশ পাড়ি দিয়েছে জেলার ৩ হাজার ১৪৮ জন, লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে আটক হয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কয়েকশ’। আর জেলখানায় বন্দি হয় ১২৭ যুবক। সাগরে ডুবে মারা গেছে ২৫ জন। তবে বেসরকারি হিসেবে এর সংখ্যা দুই থেকে তিনগুণেরও বেশি।

ভুক্তভোগী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘দালালদের লাখ লাখ দিয়েও বিদেশে যেতে পারিনি। লিবিয়ায় আটকের পর জেলাখানায় বন্দি ছিলাম। পরে সরকারের মাধ্যমে দেশে ফেরত এসে সরকারিভাবে কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। এখন দোকান দিয়ে ব্যবসা করছি, বেশ ভালই আছি। তবে, সবাইকে বলবো, কেউ অবৈধভাবে দালালদের মাধ্যমে বিদেশ যাবেন না। তাহলে আর্থিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’

আরেক ভুক্তভোগী রকিব হোসেন বলেন, ‘আমি লিবিয়ার জেলখানায় ৭ মাস বন্দি ছিলাম। পরে জেলা প্রশাসন ও সদর উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় দেশে ফেরত আসি। এরপরে ভর্তি হই ফ্রিলান্সিং কোর্সে। এখান থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে সংসার চালাবো। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ ব্যাপারে সব ধরণের সহযোগিতা করছেন।’

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন বলেন, ‘মানবপাচার ও অবৈধপথে বিদেশযাত্রা রোধে যুবক-যুবতীদের কম্পিউটার, ফ্রিল্যান্সিং, মার্কেটিংসহ নানা প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এতে বেকাররা সৃষ্টি করতে পারছে কর্মসংস্থান। পাশাপাশি অবৈধভাবে বিদেশযাত্রাও রোধ হচ্ছে।’

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘প্রশাসন থেকে সবসময় বৈধভাবে বিদেশে যেতে বলা হয়। যারা অবৈধভাবে বিদেশ যেতে চায়, তাদের অধিকাংশ দালালদের মাধ্যমে নিঃস্ব হয়ে যায়। তাই, সঠিক পরামর্শ নিয়ে, কেউ বৈধভাবে বিদেশে গেলে কোনো অসুবিধা বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।’

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, ‘মানবপাচাররোধে বিভিন্নস্থানে সভা, সমাবেশ ও র‌্যালিসহ নানা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বেশি সচেতন হলে অবৈধভাবে বিদেশযাত্রা অনেকাংশেই কমে আসবে। আর জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা দালালচক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/৭মে/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
টয়োটার ব্যবসা হারাচ্ছে নাভানা?
সারজিস বনাম নওশাদ: ভোটে কার পাল্লা ভারি?
মনোহরদীতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ছাত্রদল নেতা গণধোলাইয়ের শিকার
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদও জয় করব: নাহিদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা