বঙ্গবাজার ট্রাজেডি: দুশ্চিন্তা ও শঙ্কা নিয়ে টিকে থাকার চেষ্টায় দোকানিরা

অভিজিত রায় কৌশিক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ মে ২০২৩, ১৩:১৬ | প্রকাশিত : ১৮ মে ২০২৩, ১৩:১২

ভয়াবহ আগুনে প্রায় সব হারিয়ে ঢাকার বঙ্গবাজারের দোকান মালিকরা চৌকি বিছিয়ে নতুন করে ব্যবসার চেষ্টা করছে। রোদ-বৃষ্টি ঠেকাতে দোকানের ওপরে ঢাকা হয়েছে ত্রিপল আর পলিথিন দিয়ে। তবে ক্রেতাদের তেমন সাড়া নেই বলেই ভাষ্য দোকানিদের।

এদিকে সিটি করপোরেশন থেকে বঙ্গ মার্কেটের স্থানে ব্যাবসায়িদের জন্য বহুতল ভবন তৈরির কথা রয়েছে। তবে সেখানে দোকান বরাদ্দ নিয়ে ব্যাবসায়ীদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। সেই সঙ্গে সাহায্য তহবিলের পাওনা টাকা নিয়েও তাদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে।

তবে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিগগির পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যাবসায়ীদের কথা বিবেচনায় রেখে বঙ্গবাজারে বহুতল ভবনের (মার্কেট) কাজ শুরু হবে। সেইসঙ্গে খরচ ও ব্যাবসায়ীদের চাহিদার বিষয়ে সঙ্গতি রেখে ভবন নির্মান করতে হবে।

বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি ইউনিটে তথা বঙ্গবাজার, গুলিস্তান, মহানগরী ও আদর্শ মার্কেটে মোট দোকান ছিল ২ হাজার ৯৬১টি। এখন এই দোকানগুলোর চিহ্ন নেই।

বুধবার সরেজমিনে দেখা গে‌ছে, বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈ‌রি অস্থা‌য়ী দোকান সাজিয়ে বসে আছে দোকানিরা। ক্রেতার আনাগোনা নেই বললেই চলে। বঙ্গবাজার মার্কেটের পেছনের দিকে অর্থাৎ পু‌লিশ সদর দপ্তরের দিকে এখনও বাস-কাঠ দিয়ে দোকান তৈ‌রির কাজ চলছে।

অন্যদিকে ফ্লাইওভারের নিচে প্রধান সড়কের ওপর এক পাশে এখন চৌ‌কি পেতে বেচা বি‌ক্রি করছেন কিছু ব্যবসায়ী। তাদের ভাষ্য, দোকান তৈরি না হওয়ায় আপাতত সেখানে বসেছেন। দোকান দেওয়ার নির্ধা‌রিত জায়গা প্রস্তুত হ‌লেই তারা স্থান ত‌্যাগ কর‌বেন।

কী বলছেন ব্যবসায়ীরা

বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাবসায়ী মো. রাব্বি হোসেন জানান, আগুনে তার বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। কোনো ভাবে টিকে থাকতে নতুন করে নিজের খরচে চকি বসিয়ে ব্যাবসার চেষ্টা করছেন তিনি। তবে ক্রেতা নেই বললেই চলে।

ঢাকা টাইমসকে রাব্বি হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা সিটি করপোরেশন বা সরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। তবে ব্যবসায়িরা যে সাহায্য সহযোগিতা করেছে আমরা সেগুলো পেয়েছি। যে সাহায্য সহযোগিতা আদায় হয়েছে, শুনেছি সব ব্যাবসায়ি ফান্ডে আছে। আমরা কবে পাবো তা বলতে পারছি না।’

‘আগে দিনে ৩০-৪০ হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হতো। এখন এমন অবস্থা কোনো কোনো দিন এক টাকাও বিক্রি হয় না। এভাবে চলতে থাকলে ভিক্ষা করে খেতে হবে।’

বঙ্গবাজার মার্কেটে নাফিজ ফ্যাশন নামে দোকান ছিল ব্যাবসায়ি বিল্লাল হোসেনের। আগুনে সব শেষ হয়ে গেছে। এখন অন্যের দোকানে কর্মচারি হিসেবে কাজ করছেন।

বিল্লাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমার দোকান পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। এখন অন্যের দোকানে চাকরি করি। তবে এখন আর ক্রেতাও আসে না। বিক্রি না থাকায় মালিক বেতনও দিতে পারে না। এখন আমাদের টিকে থাকায় বড় দায়। সাহায্যের টাকা পেলে আবার নিজের একটা দোকান করার আশায় আছি।’

আরেক ব্যবসায়ী জামাল শেখ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এত বড় ক্ষতির পর এখন তাও একটা বসার জায়গা আছে। মার্কেটের কাজ শুরু করলে তো আমাদের এখান থেকে চলে যেতে হবে। তখন আমরা কোথায় যাবো? কি করবো? কিভাবে চলবে আমাদের পরিবার?’

যা বললেন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা

বঙ্গবাজারে বহুতল ভবন (মার্কেটের) নির্মাণের বিষয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান। বলেন, এ বিষয়ে প্ল্যান করে শিগগির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ব্যবসায়ীরা আস্থায়ী ভাবে কতদিন ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট ভাবে এটা বলতে পারছি না। আমাদের কাজ শুরু হয়ে গেলে তখন তাদের সরে যেতে হবে। তবে আমরা এমন কিছু করবো না যেটা করলে তাদের ওপর চাপ পড়বে।’

কত তলা ভবন নির্মাণ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও কিছু ঠিক করা হয়নি। কারণ, কস্ট মিনিমাইজ (খরচ কমানো) এবং ব্যবসায়ীদের চাহিদা এই দুই বিষয়ে সংগতি রেখে ভবন নির্মাণ করতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৭মে/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :