ভারতের নতুন সংসদ ভবন কতটা রাজকীয় স্থাপত্যশৈলী

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৮ মে ২০২৩, ১২:২৩ | প্রকাশিত : ২৮ মে ২০২৩, ১১:০৭

দীর্ঘ অপেক্ষার অবসানের পর ভারতে নতুন সংসদ ভবনের পথ চলা শুরু হলো। নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। টাটা গোষ্ঠী এই ভবন নির্মাণের ভার পেয়েছিল।ভারতের সেন্ট্রাল ভিস্তা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের অংশ হিসাবে, নতুন দিল্লিতে নতুন সংসদ ভবন ত্রিভুজাকার আকৃতির ডিজাইনে নির্মিত হয়েছে। ত্রিভূজাকৃতি চারতলা এই নতুন সংসদ ভবনের মোট বিল্ট আপ এরিয়া ৬৪,৫০০ বর্গ মিটার৷ এই ভবনের তিনটি প্রবেশদ্বার রয়েছে- জ্ঞান দ্বার, শক্তি দ্বার এবং কর্ম দ্বার৷ নতুন সংসদ ভবন নির্মাণে খরচ হয়েছে ১২০০ কোটি রুপি। মোট নয় হাজার শ্রমিক নতুন সংসদ ভবন নির্মাণে জড়িত ছিলেন। নতুন সংসদ ভবনের আর্কিটেক্ট ডিজাইন করেন স্থপতি বিমল প্যাটেল। স্থাপত্য সংস্থা হলো এইচসিপি ডিজাইনের প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড এবং প্রধান ঠিকাদার টাটা প্রজেক্টস লিমিটেড।

ভারতের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্য নতুন এই ভবনে এই রাজকীয় কনস্টিটিউশন হল রয়েছে৷ এ ছাড়াও সংসদের সদস্যদের জন্য লাউন্জ, লাইব্রেরি, বিভিন্ন কমিটির ঘর, খাওয়া দাওয়ার জায়গা এবং সুবিস্তৃত পার্কিং স্পেস রয়েছে৷ সংসদ ভবনের অন্দরসজ্জায় ভারতের তিনটি জাতীয় প্রতীক পদ্ম, ময়ূর এবং বট গাছকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷

নতুন সংসদ ভবন নির্মাণে দেশজুড়ে বিভিন্ন রাজ্যের নামিদামি শিল্পকর্মের ব্যবহার করা হয়েছে। ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর ধারণাকে তুলে ধরতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

গণ্যমান্য ব্যক্তিদের প্রবেশের জন্য আলাদা দ্বার আছে এই ভবনে। ভবনটি নির্মাণের জন্য সারাদেশ থেকে উপাদান সংগ্রহ করা হয়েছে।

নাগপুর থেকে এসেছে সেগুন কাঠ, লাল এবং সাদা বেলেপাথর আনা হয়েছে রাজস্থান থেকে। এছাড়া মির্জাপুরের গালিচা, উদয়পুরের কেশরিয়া সবুজ মার্বেল পাথর, মুম্বাইয়ের আসবাবপত্র দিয়ে ঢেলে সাজানো হয়েছে ভবনের অন্দরমহল।

রাজস্থানের সরমথুরা থেকে লাল এবং সাদা বেলেপাথর এনে তৈরি হয়েছে সংসদ ভবনের একাংশ। লাল কেল্লা এবং হুমায়ুনের সমাধি তৈরিতে ব্যবহৃত বেলেপাথরও সরমথুরা থেকেই আনা।

ভবনটিতে ব্যবহৃত সেগুনকাঠ আনা হয়েছে মহারাষ্ট্রের নাগপুর থেকে। সংসদের গালিচাগুলো উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুর থেকে আনা।

নতুন সংসদ ভবন তৈরিতে ব্যবহৃত কেশরিয়া সবুজ মার্বেল পাথর উদয়পুর, লাল গ্রানাইট পাথর অজমেরের লাখা এবং সাদা মার্বেল পাথর রাজস্থানের আমবাজি থেকে আনা।

ভবনের ভিতরে থাকা সমস্ত আসবাবপত্র তৈরি হয়েছে বাণিজ্যনগরী মুম্বাইতে।

নতুন সংসদ ভবনের উচ্চ এবং নিম্নকক্ষ (রাজ্যসভা এবং লোকসভা)-এর ‘ফলস সিলিং’ তৈরিতে ব্যবহৃত ইস্পাতের কাঠামো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দমন এবং দিউ থেকে আনানো।

ভবনের পাথরের ‘জালি’র কাজগুলো রাজস্থানের রাজনগর এবং উত্তরপ্রদেশের নয়ডা থেকে আনা হয়েছিল।

নতুন সংসদ ভবনে থাকা অশোকস্তম্ভে ব্যবহৃত উপকরণগুলো মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদ এবং রাজস্থানের জয়পুর থেকে আমদানি করা।

লোকসভা, রাজ্যসভার বিশাল দেওয়াল এবং সংসদ ভবনের বাইরে থাকা অশোকচক্র মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে তৈরি করা।

ভবনের অন্দরে ব্যবহৃত পাথরের খোদাইয়ের কাজ করেছেন রাজস্থানের আবু রোড এবং উদয়পুরের ভাস্কররা। নতুন সংসদ ভবন তৈরিতে ব্যবহৃত অনেক পাথর রাজস্থানের কোতপুতালি থেকেও আনা হয়েছিল।

নতুন সংসদ ভবন নির্মাণের জন্য বালি (যা কালো বালি বা এম-বালি নামেও পরিচিত) আনা হয়েছে হরিয়ানার চরখি দাদরি থেকে। নির্মাণে ব্যবহৃত ইট হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে আনা হয়েছিল।

সংসদে ভবনের পিতলের কারুকার্যের জন্য ব্যবহৃত পিতল আনা হয়েছিল গুজরাতের আমদাবাদ থেকে।

নতুন সংসদ ভবনে স্বর্ণদণ্ড সেঙ্গল স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

ভারতের বর্তমান সংসদ ভবনটি ১৯২৭ সাল থেকে রাজ্যসভা এবং লোকসভা উভয়ের আসন হিসাবে কাজ করে এবং এটি সম্পূর্ণ হতে ছয় বছর সময় নেয়। যদিও পুরানো সংসদ ভবন ভারতীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শক্তি প্রকাশ করে, নতুন সংসদ ভবন একটি নতুন এবং স্বাধীন ভারতের আকাঙ্ক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। একটি চিত্তাকর্ষক ৬৫০০০ বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, এই দুর্দান্ত ভবনটি ভারতের একটি সত্যিকারের স্থাপত্যের বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নতুন সংসদ ভবনের স্থাপত্যশৈলী নাকি এককথায় অনবদ্য। সংসদের দুই কক্ষ অর্থাৎ লোকসভা এবং রাজ্যসভা মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৩৫০ জন সদস্যের বসার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। লোকসভায় সাড়ে ন’শো সাংসদ বসতে পারবেন। আর রাজ্যসভার কক্ষে চারশো সদস্যের বসার বন্দোবস্ত রয়েছে। মন্ত্রী তো বটেই প্রত্যেক সাংসদের জন্য থাকবে আলাদা বসার ঘর এবং দপ্তর। সেই সংসদ ভবনের শব্দ প্রক্ষেপণ ব্যবস্থা বা আকয়েস্টিক রয়েছে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ। নতুন বাড়িতে প্রাকৃতিক আলো হাওয়ার যথাযথ ব্যবহারের বিষয়ে নজর দেওয়া হয়েছৈ। নবনির্মিত প্রতিটি বাড়ির বাইরের চেহারা নর্থ ব্লক এবং সাউথ ব্লকের মতো প্রস্তর আচ্ছাদিত হলেও ভিতরে কিন্তু ইস্পাত এবং কাচের ব্যাপক ব্যবহার হয়েছে।

নতুন সংসদ ভবন কেন্দ্রীয় সরকারের কেন্দ্রীয় ভিস্তা প্রকল্পের অংশ। সেন্ট্রাল ভিস্তা মাস্টার প্ল্যানটি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে কল্পনা করা হয়েছিল। সেন্ট্রাল ভিস্তা উন্নয়ন বা পুনঃউন্নয়ন পরিকল্পনা হল একটি ছয় বছর-ব্যাপী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প যাতে একাধিক উদ্যোগ জড়িত।

সেন্ট্রাল ভিস্তা উন্নয়ন প্রকল্পটি শক্তিশালী জ্যামিতি, অতুলনীয় প্রতিসাম্য এবং নোড, অক্ষ, ফোকাল পয়েন্ট এবং সমাপ্তি সহ সুপরিকল্পিত রুট দিয়ে কল্পনা করা হয়েছিল।

আগামী বছরগুলোতে সংসদ সদস্যের সংখ্যা বাড়বে, নতুন ভবনটি রাজ্যসভা এবং লোকসভার জন্য একটি বড় আসনের ক্ষমতা নিশ্চিত করবে। ২০২৬ সালে সীমাবদ্ধতার উপর স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার পরে, এমপির সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

নতুন সংসদ ভবনের আয়ুষ্কাল আনুমানিক ১৫০ বছর হবে। একটি ভূমিকম্প-প্রতিরোধী ভবন, নতুন পার্লামেন্ট সমগ্র ভারত থেকে স্থাপত্য নকশা অন্তর্ভুক্ত করবে। এটি ভারতে প্রচলিত জনপ্রিয় স্থাপত্য শৈলীর সংস্কৃতি।

(ঢাকাটাইমস/২৮ মে /আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :