ভাতা বৃদ্ধিসহ ১১ দা‌বি‌: কী বল‌ছেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা

নিজস্ব প্রতি‌বেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৪ জুন ২০২৩, ১৩:৪০| আপডেট : ০৪ জুন ২০২৩, ১৩:৪৮
অ- অ+

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মা‌সিক ভাতা ৮৫০ টাকা থে‌কে বা‌ড়ি‌য়ে ৫ হাজার টাকা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভাতা ২ হাজার টাকা করা এবং যোগ্যতা অনুসারে চাকরিসহ ১১ দফা দাবি জা‌নি‌য়ে‌ছে সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজ। এসব দাবি আদায়ে র‌বিবার রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘোরাওয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তবে শাহবাগেই তাদের আটকে দিয়েছে পুলিশ।

দাবির বিষয়ে কী বল‌ছে প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজ

২০২৩-২৪ জাতীয় বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা ন্যূনতম মাসিক ৫০০০ টাকা এবং শিক্ষা উপবৃত্তি মাসিক ২০০০ টাকা চান প্রতিবন্ধীরা। এ বিষয়ে তারা বলেছেন, আমাদেরকে কথা দেওয়া হয়েছিল ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা ৩০০০ টাকা করা হবে। দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করা, দারিদ্র্য সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে ওই টাকায় ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে পারি না আমরা।

তারা আরও বলেন, ‘শিক্ষা উপবৃত্তি দেওয়া হলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা মেলে না। অথচ উপবৃত্তি দরকার শিক্ষা সামগ্রীর ন্যূনতম খরচ মেটানোর জন্য। তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা মাসিক ৫০০০ টাকা এবং শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে মাসিক ভাতা ৫০০০ টাকা ও শিক্ষা উপবৃত্তি ২০০০ টাকা দাবি করছেন তারা।

আরও পড়ুন>>যোগ্যতা অনুসারে চাকরিসহ ১১ দফা দাবিতে সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজের অবস্থান কর্মসূচি প্রতিবন্ধী মানুষের সরকারি চাকরিতে নিয়োগে বিশেষ নীতিমালা (কোটা) চান প্রতিবন্ধীরা। বলেন, আমরা নিজ নিজ যোগ্যতার ভিত্তিতে সমাজে সম্পৃক্ত হতে এবং মাথা তুলে দাঁড়াতে চাই। অথচ চাকরির ক্ষেত্রে দৃষ্টি, শ্রবণ ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নানারকম বঞ্চনার শিকার করা হচ্ছে।

তারা বলেন, ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কোটা তুলে দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। এজন্য অনতিবিলম্বে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ন্যূনতম ৫ শতাংশ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে ন্যূনতম ১০ শতাংশ কোটা নিশ্চিত করা হোক। নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকারি কোন গ্রেডে বা শ্রেণিতে প্রতিবছর কতজন প্রতিবন্ধী নারীপুরুষ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তার তালিকা ৩ ডিসেম্বর প্রতিবন্ধী ব্যক্তি দিবসে ঘোষণা চান প্রতিবন্ধীরা।

চলতি বাজেটেই বাংলাদেশ ব্যাংকে ১০০০ কোটি টাকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উদ্যোক্তা তহবিল গঠন করা জানিয়ে তারা বলেন, আমরা ভিক্ষা চাই না, কর্ম চাই। প্রতিবন্ধিতার অজুহাতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে নানারকম হয়রানি করে। অনেক সময় ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খুলতে দেওয়া হয় না। ঋণ পাওয়া তো আরো দুরূহ।

নারী উদ্যোক্তাদের মতো নিজ নিজ এলাকার ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ চান প্রতিবন্ধীরা।

অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদফতরকে কার্যকর করার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদফতরকে ঠুটো জগন্নাথ বানিয়ে রাখা হয়েছে। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিদফতরের সক্রিয় কার্যক্রমে সিআরপিডি ৩৩ ধারা বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। এই অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে দেশব্যাপী জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন পর্যায়ে আমাদের সুসংগঠিত করে দক্ষতা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী এবং সমাজে মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর পথ করে দেওয়া হচ্ছে। যেমন আমাদের দেশের মহিলা বিষয়ক অধিদফতর কিশোরী ও নারীদের স্বাবলম্বী করতে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রতিবন্ধীদের দাবি, বাংলা ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট প্রণয়ন এবং বিদ্যালয়, আদালতসহ সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে বাংলা ইশারা ভাষার দোভাষী সেবা নিশ্চিত করা। তারা বলেন, বাংলাদেশের শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষের সব থেকে বড় বাধা হল অন্যান্য মানুষের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা। তাদের এই বাধা দূরীকরণে বাংলা ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপন জরুরি। এই ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে দোভাষী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে হাসপাতাল, টেলিভিশনসহ সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে বাংলা ইশারা ভাষার দোভাষী নিয়োগ করে শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করা এবং তাদের বিভিন্ন তথ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হোক।

শিক্ষা ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় অভিন্ন জাতীয় শ্রুতিলেখক নীতিমালা চান প্রতিবন্ধীরা। তাদের ক্ষেত্রে শ্রুতিলেখকের বিকল্প নেই বলে মনে করেন তারা। বলেন, শ্রুতিলেখক নিয়োগে হয়রানির কারণে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং চাকরির ক্ষেত্রে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যাদের নানারকম শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কারণে হাত ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা রয়েছে পরীক্ষায় মারাত্মক জটিলতা তৈরি হচ্ছে। তাই অবিলম্বে এ সংক্রান্ত অভিন্ন জাতীয় শ্রুতিলেখক নীতিমালা প্রণয়ন ও কার্যকর করতে হবে।

নিরন্ন, শ্রমজীবী মেহনতি প্রতিবন্ধী মানুষদের একটি বাড়ি একটি খামার ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করার দাবি জানিয়েছেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা।

দরিদ্র, নিরন্ন অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রিকশা চালিয়ে, ভিক্ষা বৃত্তির মাধ্যমে জীবন ধারণ করছেন। এখন উন্নয়নের নামে তাদের অনেককে রাজপথ থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। দ্রুত তাদেরকে একটি বাড়ি একটি খামার ও আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ সরকারের যেসব কর্মসূচি আছে তাতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তারা। বলেন, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তাদের পূর্বতন জীবিকা নির্বাহ করতে দেওয়া হোক।

গুরুতর প্রতিবন্ধী মানুষের স্বাস্থ্য ও কেয়ারগিভার ভাতা চালু করার দাবি জানিয়েছেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা। বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতার কারণে অনেককেই নিয়মিত ব্যয়বহুল স্বাস্থ্যসেবা নিতে হয় জানিয়ে তারা বলেন, ‘গুরুতর মাত্রার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অনেকেরই ব্যক্তিগত সহকারীও প্রয়োজন হয়। এজন্য স্বাস্থ্য ও কেয়ার গিভার ভাতা চালু করা প্রয়োজন, আমরা চলতি বাজেটেই এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

প্রবেশগম্য অবকাঠামো এবং গণপরিবহন নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, সিআরপিডির ২১ অনুচ্ছেদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাধীন জীবনযাপনের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। আমাদের দেশে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য প্রবেশগম্যতার অভাব একটি বড় বাধা। গণপরিবহনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় প্রবেশগম্যতার অভাবে প্রতিবন্ধী মানুষেরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান বিনোদনসহ অন্যান্য সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই সর্বত্র সব স্থাপনায় এবং গণপরিবহনগুলোতে প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে আলাদা বরাদ্দের জোর দাবি জানাচ্ছি।

ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জাতীয় সংসদ, স্থানীয় থেকে জাতীয়- সবপর্যায়ে প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতিনিধিত্ব চান প্রতিবন্ধীরা। এ বিষয়ে তারা বলেন, আমাদের ছাড়া আমাদের উন্নয়ন, নীতি নির্ধারণ এবং সমাজের নানা স্তরে কার্যকর অংশগ্রহণ সম্ভব নয়। একীভূত এবং বহুত্ববাদী সমাজ গঠনে সর্বস্তরে আমাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের সর্বস্তরের কমিটিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অথবা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনগুলোর ২-৩ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।

প্রতিবন্ধীরা মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংবেদনশীল বাজেট চান। প্রায় ২ দশক ধরে দাবি করার পরেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বান্ধব গত কয়েক বছর ধরে শিশু ও নারী সংবেদনশীল বাজেট তৈরি হচ্ছে। অথচ বাজেট হচ্ছে না। যার ফলে প্রতিবন্ধী মানুষের প্রকৃত অর্থে কোনো উন্নয়ন সাধন হচ্ছে না। তাই মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংবেদনশীল বাজেটের জোর দাবি জানাই।

তারা আরও বলেন, আমরা জোর গলায় বলতে চাই, ভিক্ষা নয়, এগুলো আমাদের প্রাপ্য অধিকার। আমাদের সংবিধান এবং প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সনদ, যেগুলোতে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে, সেগুলো আমাদের এই অধিকার দিয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৪জুন/কেআর/এফএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন তামিম ইকবাল 
কুয়াকাটা সৈকতে গোসলে নেমে পর্যটকের মৃত্যু
ঘাটাইলে সাপের কামড়ে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
সিগারেট অত্যন্ত সস্তা-সহজলভ্য, করারোপ ও মূল্যবৃদ্ধি জরুরি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা