বিচার বিভাগকে আওয়ামী লীগের অঙ্গ বানানোর চেষ্টা চলছে: জিএম কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ জুন ২০২৩, ১৯:৪৫

দেশের বিচার বিভাগকেও আওয়ামী লীগ নিজেদের অঙ্গ বানানোর চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের)। বলেন, ‘সবাই যেনো এখন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন। সবাই এখন আওয়ামী লীগের ভাষায় কথা বলে। পার্লামেন্টও এখন আওয়ামী লীগের অঙ্গ হয়েছে। বিচার বিভাগকেও আওয়ামী লীগের অঙ্গ বানানোর চেষ্টা চলছে।’

সোমবার ঢাকার নবাবগঞ্জে ঢাকা জেলা জাপার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জিএম কাদের এসব বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি।

জিএম কাদের বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছেন, এক প্রধান বিচারপতিকে নামিয়ে দিয়েছি। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।’

সম্মেলনে ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হিসেবে পুনরায় অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপির নাম ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে ঢাকা-০১ আসনে (দোহার-নবাবগঞ্জ) জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপির নাম ঘোষণা করেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

জিএম কাদের বলেন, ‘রাজনীতির মাঠে কথা আছে আওয়ামী লীগ জামায়াতকে বিভিন্ন নামে কিছু সিট দেবে। আমাদেরও কিছু সিট দিবে। আমাদের বলা হয়, আপনারা আরো সংগঠিত হন, আপনাদের আরো বেশি সিট দিবে। কে দেবে? আওয়ামী লীগ দেবে? জনগণ ভোট দেবে না? আওয়ামী লীগ নেতারা যদি সিট দিতে পারেন তাহলে নির্বাচনের দরকার কী? ঘোষণা দিয়ে দেন কে কে পাশ করেছে। সাংবাদিকরাও প্রশ্ন করছে আওয়ামী লীগ কোন কোন সিট দেবে আপনাদের।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচনের অর্থ হচ্ছে জনগণ ঠিক করবে কে হবেন তাদের প্রতিনিধি। যদি আওয়ামী লীগই জনপ্রতিনিধি ঠিক করে দেন তাহলে নির্বাচনের প্রয়োজন কেন? আওয়ামী লীগ প্লাস ধংস না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ প্লাস ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত দেশের মানুষের মুক্তি সম্ভব নয়। আইনগতভাবে বাকশাল করা হয়েছিলো। এখন আইনগতভাবে না করলেও বাকশালের আদলে “আওয়ামী লীগ প্লাস” তৈরী করা হয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য আর তাদের সৌভাগ্য হলে আগামী নির্বাচনের পর বাকশালের নাম হবে ”আওয়ামী লীগ প্লাস”।’

জিএম কাদের বলেন, সারাদেশ গরমে পুড়ছে, সরকারের খবর নেই। সরকার ভাবছে দেশের মানুষ মরণের পরে সবাই দোজখে যাবে। তাই দেশের মানুষকে এই গরমে প্রাকটিস করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। দেশের মানুষতো বেহেস্তে যাবে তাদের দোজখের প্রাকটিস করাচ্ছে কেন? যারা আমাদের দোজখের প্রাকটিস করাচ্ছেন তারা ভাবছেন তারাই বেহেস্তে যাবেন। আসলে কী তারা বেহেস্তে যাবেন? সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুত দেয়ার কথা বলে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করে রেখেছে। তারপরও দেশের মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না কেন?

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসলে তারা আমাদের বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করেননি। তারা লুটপাটের জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করেছেন। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন। আমাদের দরকার ১৪ হাজার মেগাওয়াট, আর তৈরি করা হচ্ছে ২৪ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু আমরা পাচ্ছি ১০ হাজার মেগাওয়াটেরও কম বিদ্যুৎ।’

জাপা প্রধান বলেন, সরকার এখন গ্যাস কিনতে পারছে না, কয়লা কিনতে পারছে না, তেল কিনতে পারছে না টাকার অভাবে। এদেশের গরিব মানুষও বিদ্যুতের বিল বকেয়া রাখেনি তাহলে সরকার কয়লা কিনতে পারবে না কেন? হাসি হাসি মুখে তারা বলেন, কয়লা কিনতে আরো দেড় মাস লাগবে। তাহলে আপনারাও আমাদের সাথে আসুন, আপনারাও থাকুন আমাদের সাথে দোজখের আগুনে। সরকার বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতি করেছে। টেন্ডার ছাড়াই কাজ দেয়া হয়েছে বিদ্যুত খাতে। রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের নামে ঋণ করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ১ হাজার কোটি টাকার স্টিমেটের প্লান্টের জন্য খরচ হয়েছে মাত্র ৩ শো কোটি টাকা। প্রকল্পে ৭ থেকে ৮ শো কোটি টাকা ঋণ করে বাকি টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লক্ষ-লক্ষ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। তাই এক শ্রেণীর মানুষ দেশে টাকা রাখার জায়গা পাচ্ছে না। দেশের মানুষ যেনো নরকে বাস করছে।

‘রূপপুর পাওয়ার প্লান্ট রাশিয়া থেকে কেনা হয়েছে। এটি আনবিক শক্তির ২৪শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। একই ধরনের কোম্পানি থেকে ভারতেও এমন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কিনেছে মাত্র ৩৪ হাজার কোটি টাকায়। আর, আমাদের দেশে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার চুক্তি করা হয়েছে। এর মাত্র ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আবার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে।’ বলেন জিএম কাদের।

তিনি বলেন, ‘কোনো রকম ভুল ত্রুটি হলে এটম বোমের মতো বিষ্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। যে দেশে দারোয়নদের অবহেলায় শত শত গার্মেন্টস কর্মীরা আগুনে পুড়ে মারা যায়, সেদেশে এমন ঝুকিপূর্ণ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। এখন উৎপাদনের সক্ষমতা আছে চাহিদার চেয়েও বেশি, তাহলে কেন অর্থনৈতিক অবস্থার ক্ষতি করে এমন প্রকল্প নেয়া হলো। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সত্য কথা বললে তার নিস্তার নেই।’

‘অনেকে আমাকে বলেন, আপনার সৌভাগ্য এখনো আপনি গায়েব হননি। পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক গল্প বলা হচ্ছে। ওর্য়াল্ড ব্যাংকের টাকা নেওয়া হয়নি, নিজস্ব টাকায় পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। আসলে বাজেটের টাকায় দেওয়া হয়েছে পদ্মা সেতু নির্মাণে। আমাদের বাজেট তৈরি হয় ঘাটতি বাজেট। বাজেটের পরিচালন ব্যয় করতে হয় দেশি বা বিদেশি ঋণ দিয়ে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি, অথচ ওর্য়াল্ড ব্যাংকের সুদের হার ১০০ টাকায় এক বছরে মাত্র ৫০ পয়সা। এক ধরনের সুদ বিহীন ঋণ। পদ্মা সেতুতে খরচ হয়েছে বিদেশি ঋণের বাজেটের টাকা। ওর্য়াল্ড ব্যাংকের টাকা ফেরত দিয়েছেন কেন? দুর্নীতি যদি না হতো, তার প্রমাণ দিতেন। ফলে ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু শেষ হয়েছে ৩২ হাজার ৬ শো কোটি টাকায়।’ বলেন জিএম কাদের।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘পদ্মা সেতু আসলে ঋণের টাকায় তৈরি হয়েছে। তিনগুণ বেশি টাকা খরচ হয়েছে পদ্মা সেতুতে। নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু? কীসের বাহাদুরী? বিশ্বব্যাংকের স্বল্প সুদের ঋণ না নিয়ে হয়তো অনেক বেশি সুদের ঋণের টাকায় পদ্মা সেতু হয়েছে। জনগণের গলায় ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা কোনো গর্বের প্রকল্প হতে পারে না।’

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, সালমা ইসলাম এমপি নিজেদের টাকা খরচ করে গণমানুষের পাশে থাকেন। অপরদিকে, এই এলাকায় এক দরবেশ আছেন তিনি লাখ লাখ যুবকের জীবন ধংস করেছে, শেয়ারবাজার লুট করে। তিনি বলেন, করোনা টিকা বানিজ্যেও সেই দরবেশের নাম চলে এসেছে। তিনি বলেন, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্ট নামে ১২ বছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে সরকার। জনগণের সামনে একদিন জবাব দিতেই হবে।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেছেন, ১ বছর আগে জ্বালানী মন্ত্রী বলেছেন আমরা নেপালে বিদ্যুত রফতানী করবো আর এখন বলছেন নেপাল থেকে বিদ্যুত আমদানী করবো। জ্বালানী মন্ত্রী পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। দ্রব্যমূল্য উর্ধগতির কারণে দেশের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ব্যর্থ বানিজ্যমন্ত্রী এখন বলছেন প্রয়োজন হলে পেয়াজ আমদানী করবেন। সরকারের এই মন্ত্রীদের জনগণ ক্ষমা করবে না।

সভাপতির বক্তৃতায় অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেছেন, উপনিবেশিক ব্যবস্থা ভেঙে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ মানুষের কল্যাণে অনেক কাজ করেছেন। তাই দেশের মানুষ আবারো জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। তিনি বলেন নির্বাচন এলেই জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তাই সবাইকে সচেতন থাকতেও আহবান জানান তিনি।

এতে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা জাপার সদস্য সচিব সাবেক এমপি ইসরাফিল খান খোকন।

জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজুর সঞ্চালনায় এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, লেঃ জেঃ অব. মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আকতার এমপি, আলমগীর সিকদার লোটন, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল আলম রুবেল, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রওশন আরা মান্নান এমপি, শেরিফা কাদের এমপি, নূরুল ইসলাম তালুকদার এমপি, ভাইস-চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান খান, আহসান আদেলুর রহমান এমপি, সালমা হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব মোঃ বেলাল হোসেন, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য হুমায়ুন খান, মাখন সরকার, কাজী আবুল খায়ের, মাসুদুর রহমান মাসুম, এম এ রাজ্জাক খান, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক বাহাদুর ইমতিয়াজ, সুজন দে, মাহমুদ আলম, ডাঃ সেলিমা খান, শাহনাজ পারভীন, মীর সামসুল আলম লিপ্টন, কেন্দ্রীয় নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ, তাসলিমা আকবর রুনা, মোহাম্মদ আলী খান, রমজান আলী, জেসমিন নূর প্রিয়ংকা, আসমা আক্তার রুমী, সৈয়দা জাকিয়া আফরোজ হিয়া, মিথিলা রোয়াজা, রফিকুল আলম সেলিম, কাজী আব্দুল হামিদ, আবুল খায়ের আবরার শিশির, রেসমি হোসেন, আসাদুজ্জামান চৌধুরী, শাহদাত, শাকিল আহমেদ, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, আনিসুর রহমান বাবু, জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক আশরাফ খান, মটর শ্রমিক পার্টির সদস্য সচিব আব্দুর রহিম প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/০৫জুন/জেবি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :