খিদিরপাড়া ইউনিয়ন আ.লীগের কাউন্সিল নিয়ে ‘লুকোচুরির’ অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ জুন ২০২৩, ২২:৩৩
খিদিরপাড়া ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সভা। ছবি: জুলাই ৩, ২০২২

মুন্সীগঞ্জ লৌহজং থানার উপজেলার খিদিরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন (কাউন্সিল) আগামীকাল শুক্রবার। কিন্তু সম্মেলনের একদিন আগেও এ বিষয়ে দলের কোনো নোটিশ বা চিঠি পাননি ইউনিয়নটির আওয়ামী লীগ নেতারা। এ ছাড়া কাউন্সিল ঘিরে পদপদবি চেয়ে ব্যানার পোস্টার কিছুই দেখা যায়নি ইউনিয়নটিতে। কাউন্সিলের কোনো আমেজই নেই সেখানে।

কাউন্সিলর কারা, প্রার্থী হওয়ার পদ্ধতি কী, নেতা নির্বাচন করা হবে কোন প্রক্রিয়ায়, ভোট নাকি সিলেকশন- কিছুই জানানো হয়নি কাউকে। কাউন্সিল আয়োজনকারী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছেও গিয়েও কোনো উত্তর পাচ্ছেন না ইউনিয়ন নেতাকর্মীরা। সব মিলিয়ে এ কাউন্সিল নিয়ে অন্ধকারে রয়েছেন ইউনিয়ন ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এ কেমন কাউন্সিল? কার স্বার্থে কেন এত লুকোচুরি? এসব প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের।

ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অন্তত ২০ জন নেতা কাউন্সিল নিয়ে লুকোচুরির অভিযোগ এনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা জেলা আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।

তাদের অভিযোগ, উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সিন্ডিকেট করে পাতানো কাউন্সিলের মাধ্যমে কোনো ভোট ও প্রতিদ্ব›ন্দ্বিতার সুযোগ না দিয়ে তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের পদ পাইয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। এটি পকেট কমিটি করার অপতৎপরতা।

দলের এ কাউন্সিল প্রক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এ কেমন কাউন্সিল? উপজেলা আওয়ামী লীগ তারিখ ঘোষণা করল। কিন্তু ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের কোনো নোটিশ বা চিঠি দেওয়া হলো না কাউন্সিলের দুদিন আগ পর্যন্তও। এটি কীসের আলামত? তাহলে কাদের পছন্দের লোকজনকে নেতা বানানোর পায়তারা চলছে? দলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের অন্ধকারে রেখে পকেট কমিটি করার অপচেষ্টা কারা করছে? কেন করছে? তা খুঁজে বের করে গঠনতন্ত্রের নিয়ম মেনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের সুযোগ জেলা কমিটি করে দেবে বলে আমারা দাবি জানাচ্ছি।’

দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কাউন্সিল অনুষ্ঠানের আগে অবশ্যই অধীন কমিটির নেতাকর্মীদের নোটিশ দিয়ে তা জানাতে হবে। কবে কোথায় কখন কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে, নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী হবে, কাউন্সিলর কারা, কীভাবে প্রার্থী হওয়া যাবে- এ সব প্রক্রিয়া জানিয়ে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে এ ইউনিয়নের কাউন্সিল ঘিরে তা মানা হয়নি বলে অভিযোগ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খিদিরপাড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মো. আবুল কালাম আজাদ গতকাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, তাকে উপজেলা বা জেলা আওয়ামী লীগ কাউন্সিল অনুষ্ঠানের বিষয়ে কোনো চিঠি বা দলীয় নোটিশ দেয়নি। তবে তিনি লোকমুখে শুনেছেন কাউন্সিলের কথা।

কখন কাউন্সিল শুরু হবে জানতে চাইলে বলেন, কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাউন্সিল হবে বলে শুনেছেন। সকাল ১০টা বা ১২টায় শুরু হতে পারে।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েও কাউন্সিল বিষয়ে কেন অন্ধকারে রাখা হচ্ছে, জানতে চাইলে আবুল কালাম বলেন, ‘হয়ত আমাকে মোবাইলে কখনো ফোন দিয়েছিল, আমার মোবাইল বন্ধও থাকতে পারে, তাই আমাকে কাউন্সিলের বার্তা উপজেলা আওয়ামী লীগ জানাতে পারেনি।’

তিনি এ বছর সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না জানিয়ে বলেন, ‘নতুনদের আসার সুযোগ করে দিচ্ছি।’

এ বিষয়ে লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ওসমান গণি তালুকদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী লিখিত নোটিশ দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। তবে আমরা মৌখিকভাবে জানিয়েছি।

কাউন্সিলরের তালিকা কেন চূড়ান্ত করা হয়নি বা প্রার্থী কীভাবে হওয়া যাবে তা কেন নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়নি- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তারিখ দিয়েছি সবাইকে নিয়ে বসব। কাউন্সিল ওই দিন সম্পন্ন হতেও পারে, আবার পরিস্থিতি সেরকম হলে স্থগিতও হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই সভায় যদি প্রার্থী নিয়ে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয় তাহলে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

তবে প্রতিটি ওয়ার্ডে ১৯ জন কাউন্সিলর হবেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরে উপজেলা কমিটির কাছে ওই কাউন্সিলর তালিকা জমা দেওয়ার কথা উপজেলা আওয়ামী লীগকে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগ জেলার নির্দেশ মতো সেগুলো না করলে তো দায়সারা গোছের কাজ হবে।’

তবে তার অধীন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কমিটি স্বচ্ছতার সঙ্গে গঠন হবে জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘ইউনিয়নটির কমিটি কয়েকবছর আগেই মেয়াদোাত্তীর্ণ। জেলার সব জায়গার কমিটি হয়ে গেছে। কিন্তু এই ইউনিয়নের কমিটি হয়নি। আমরা মৌখিকভাবে এ কমিটি দ্রুত গঠন করার নির্দেশ দিয়েছি। সে অনুযায়ী কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।’

সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম ঘটে থাকলে তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলেও জানান শেখ লুৎফর রহমান।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ শিকদারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন কেটে দেন।

প্রসঙ্গত, ৬ বছরের বেশি সময় ধরে খিদিরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়নি। নতুন কমিটি গঠন করতে ২৩ জুন কাউন্সিল আহ্বান করা হয়েছে। কলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এটি তৃতীয়তম কাউন্সিল। তিন বছরের জন্য নতুন কমিটি নির্বাচিত হবে এ কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে। তবে কাউন্সিল আহবানের প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন ইউনিয়নটির আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা গতকালও জানতে পারেননি কারা কারা কাউন্সিলর, কারা হচ্ছেন প্রার্থী। খিদিপাড়া ইউনিয়নে মোট ৯টি ওয়ার্ড। চার দশমিক ৮৫ বর্গমাইলের এই ইউনিয়নের জনসংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি।

ঢাকাটাইমস/২১জুন/আরকেএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :