রোহিঙ্গারা পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর, বিনা মূল্যে ৩০ কেজি চালের কার্ড!

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২০ জুলাই ২০২৩, ১৭:৩৯

সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারের টেকনাফেও মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ৫২৩ জন ভূমিহীন লোকজন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘর পেয়েছে। অনেকে স্বপ্নেও ভাবেননি একদিন তারা পাকা ঘরে বসবাস করবেন। তৃপ্তিসহকারে দুচোখ ভরে পাকা ঘরে ঘুমাবেন! যারাই উপহারের পাকা ঘর পেয়েছে তারা এখন আরামে সেই স্বপ্নের ঘরে তৃপ্তিতে ঘুমাচ্ছেন।

তবে টেকনাফে এখনো অনেক ভূমিহীন মানুষ আছেন,যারা মেম্বার,চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও একটু মাথাগোঁজার ঠাঁই পায়নি।

বাংলাদেশি নাগরিক হয়েও স্থানীয় হতভাগা অনেক ভূমিহীন অসহায় মানুষের ভাগ্যে জোটেনি প্রধানমন্ত্রীর উপহার।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশি নাগরিক মুজিববর্ষের ঘর থেকে বঞ্চিত হলেও রোহিঙ্গারা মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর থেকে বঞ্চিত হয়নি।

টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে এমনিই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নে মৌলভীবাজারে বসবাসরত দুইজন রোহিঙ্গা সুকৌশলে উপহারের ঘর নিয়েছে। যেখানে স্থানীয়রা উপহারের ঘর নিতে কষ্টের সীমা ছিল না,সেখানে কীভাবেই রোহিঙ্গারা উপহারের ঘর নিয়েছে -এমনি প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল।

ভূমি অফিসের তালিকা সূত্রে জানা গেছে, উলা মিয়ার পুত্র সৈয়দ আলম ও নুর মোহাম্মদের পুত্র ছিদ্দিক আহমদ নামে দুইজন রোহিঙ্গাকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব রোহিঙ্গা উপহারের ঘরে বর্তমানে দিব্যি খুশিতে বসবাসও করছেন। এই রোহিঙ্গারা গোপনে বাংলাদেশি এনআইডি কার্ড তৈরি করে ভূমি অফিসে জমা দিয়েছে। নিজের নামে উপহারের ঘরও হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। গেল দুই বছর আগেই এই দুই রোহিঙ্গার নামে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। শুধু উপহারের ঘর পেয়েছে তা নয়, বিডব্লিউবি আওতায়ভুক্ত বিনা মূল্যে ৩০ কেজি চালের তালিকায়ও তাদের নাম রয়েছে। প্রতিমাসে তারা ৩০ কেজি করে সরকারি চালও ভোগ করছেন বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে রোহিঙ্গা ছিদ্দিক আহমদ বলেন, তার নানার বাড়ি মিয়ানমারে ছিল। তারা মিয়ানমার-বাংলাদেশে আসা যাওয়া করতো। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে একেবারে চলে এসেছে ১৭ থেকে ১৮ বছর হবে বলেও দাবি করেছেন এই রোহিঙ্গা। তবে তিনি টেকনাফে নয়, চকরিয়ার ঠিকানা ব্যবহার করেই বাংলাদেশি এনআইডি কার্ড করেছেন বলেও মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

অপর রোহিঙ্গা ছৈয়দ আলম প্রকাশ লালাইক্কার কাছে জানতে চাইলে, তারা অনেক আগেই মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে চলে এসেছে বলে দাবি করেন।

সম্প্রতি রোহিঙ্গা ছৈয়দ আলমের দুই নাতির জন্মসনদ করার জন্য হ্নীলা ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) বেলাল উদ্দিনের কাছে স্বাক্ষর নিতে যাওয়ায় ‘রোহিঙ্গা’ হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। তখন ছৈয়দ আলমের পরিবার যে রোহিঙ্গা নাগরিক, সেটা মেম্বারের নিকট স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। এতে রোহিঙ্গা বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে যায়।

পরে ইউপি সদস্য বেলাল উদ্দিন এই রোহিঙ্গা পরিবারের জন্মসনদ বাতিল করার জন্য হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেছেন।

স্থানীয় মেম্বার বেলাল উদ্দিন বলেন, তারা রোহিঙ্গা সেটা নিজেরাও স্বীকার করেছে। তাদের জন্মসনদ বাতিল করার জন্য চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছেন বলেও জানান মেম্বার বেলাল উদ্দিন।

হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, ‘কিভাবে রোহিঙ্গারা মুজিববর্ষের ঘর পেয়েছে তা আমার জানা নেই’।

টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান বলেন, এটা তার আগের ঘটনা, তদন্তপূর্বক সত্যটা পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখবে বলেও জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২০জুলাই/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :