অভিনেতা ফারুকের শৈশব কেটেছে অপমান, ভয় আর লজ্জায়!

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৭ | প্রকাশিত : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৫৯

ছোটপর্দার অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন অভিনেতা ফারুক আহমেদ। প্রয়াত কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের অন্যতম সেরা আবিষ্কার তিনি। তার বহু নাটকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করেছেন ফারুক আহমদ। অভিনয়ের সঙ্গে রয়েছেন এখনো। সেই ফারুক আহমেদ জানালেন, তার শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে অপমান, ভয় আর লজ্জার মধ্যে!

নিজের ফেসবুক পেজে ছবিসহ একটি পোস্ট দিয়ে এই কথা জানিয়েছিলেন অভিনেতা। সঙ্গে ফারুক আহমেদ এও লিখেছিলেন, তিনি কখনো ভাবেননি অভিনেতা হবেন। কীভাবে তার ভেতর অভিনয়ের নেশা চাপল, তাও নাকি তিনি জানেন না।

অভিনেতার ভাষায়, ‘জীবনে ভাবিনি আমি অভিনেতা হবো। ছোটবেলায় আমি ছিলাম খুব লাজুক প্রকৃতির। নিজের খালারা যখন আমাদের বাসায় বেড়াতে আসতো আমি তখন দৌড়ে দরজার চিপায় অথবা খাটের নিচে গিয়ে লুকিয়ে থাকতাম। খালারা আমার মাকে জিজ্ঞাসা করতেন, ফারুক কই? মা তখন উত্তর দিতেন, কোথায় আবার? দেখ কোন দরজার চিপা চাপায় নয়তো খাটের তলায় লুকিয়ে আছে।’

‘আমার খালাতো ভাইয়েরা সাথে সাথে অভিযানে নেমে পড়তো। এঘর ওঘর খুঁজতে খুঁজতে একসময় আমাকে কোনো এক দরজার চিপা বা খাটের তলা থেকে বের করে নিয়ে আসতো। আমি তখন মাথা হেঁট করে খালাদের সামনে এসে এমন ভঙ্গিতে দাঁড়াতাম যেন আমি বিরাট এক অপরাধী। কী এক অজানা লজ্জায় তখন আমার মরে যেতে ইচ্ছা করতো।’

‘খালারা আমাকে দেখামাত্র নানা রকম বিব্রতকর প্রশ্ন করা শুরু করতো। ‘কিরে তোর এই অবস্থা কেন? তুইতো আগের চেয়ে আরও বেশি কালো হয়ে গেছিস। খাওয়া দাওয়া করিস না? তোকে তো খবিশের মত লাগছে’। আমি কোনো কথা বলতাম না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতাম। সকল অপমানকর প্রশ্ন করা শেষ হলে তারা আমাকে তাদের সামনে থেকে চলে যেতে বলতেন। আমি ধীরে ধীরে তাদের সামনে থেকে চলে যেতাম। সমবয়সি খালাতো ভাইয়েরা আমাকে সান্ত্বনা দিত, থাক কিছু হবে না। বড়রা তো তোর ভালোর জন্যই বলে। চল মাঠে গিয়ে বল খেলি। আমি তখন তাদের সাথে মাঠে খেলতে চলে যেতাম।’

এভাবেই নানান ভয়, লজ্জা আর অপমানে আমার শৈশব, কৈশোর কেটেছে। লজ্জা, ভয় কাটিয়ে কখন যে আমি সাহসী হয় উঠলাম নিজেরও মনে নেই। কেন আমার ভেতর অভিনয়ের নেশা চাপল তাও বলতে পারব না। আমি জানি না আমার পথের শেষ কোথায়? শুধু এইটুকু জানি আমি এখন অভিনেতা। আমাকে মানুষ অভিনেতা হিসাবেই জানে।’

মানিকগঞ্জের ছেলে ফারুক আহমেদের অভিনয় জীবন শুরু ১৯৮৩ সালে। সে সময় তিনি ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন। সেখানে হুমায়ূন ফরীদি, আফজাল হোসেন, সুবর্ণা মুস্তাফা, শিমুল ইউসুফ, রাইসুল ইসলাম আসাদ, আহমেদ রুবেল ও লিটু আনামের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেন। দীর্ঘ ২৪ বছর থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

ইমদাদুল হক মিলনের টিভি নাটক ‘বড় রকমের মানুষ’-এ রসিকলাল চরিত্রে অভিনয় করে প্রথম নজর কাড়েন ফারুক আহমেদ। এর কিছুদিন পরই হুমায়ূন আহমেদের নজরে আসেন তিনি। অভিনয় করেন তার পরিচালিত ‘অচিন বৃক্ষ’ নাটকে। সেই যে শুরু, এরপর হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার বেশির ভাগ নাটকেরই প্রিয় মুখ ছিলেন ফারুক আহমেদ।

নাটকের পাশাপাশি ১৫টির মতো চলচ্চিত্রেও সুনামের সঙ্গে অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা। পাশাপাশি করেন লেখালেখি। ‘কাল সাপের দংশন’, ‘উচ্চ বংশ পাত্র চাই’, ‘ডিগবাজি’, ‘দুই বাসিন্দা’ ও ‘পানি পড়া’সহ বেশ কিছু নাটকের চিত্রনাট্য লিখেছেন এই অভিনেতা। এছাড়া ‘বদরাগী বদরুল’ ও ‘হাউ মাউ খাও’ নামে দুটি নাটক তিনি পরিচালনাও করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/০৭সেপ্টেম্বর/এজে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :