পদ্মার দুই পাড়ে উচ্ছ্বাস
পদ্মা সেতু হয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে রেলপথের উদ্বোধন ঘিরে পদ্মাপারের মানুষের মধ্যে বইছে উচ্ছ্বাস-আনন্দ। মঙ্গলবার সকাল থেকে শরীয়তপুরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ জাজিরার নাওডোবায় রেললাইনের পাশে ও পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের ওপর জড়ো হন।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়া প্রান্ত থেকে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে শ্রীনগর ও পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তেও ভিড় জমান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। সেতুর দুই প্রান্তে রেললাইন ঘিরে চলে আনন্দমিছিল।
শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের নলমুরি এলাকা থেকে শাহাদাত হোসেন নাওডোবায় এসেছিলেন পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধনী দেখতে। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু কখনো হবে, আমরা ভাবতে পারিনি। ১৬ মাস ধরে পদ্মা সেতু পারাপার হচ্ছি। আজ থেকে ট্রেনে সেতু পার হওয়ার সুযোগ তৈরি হলো। এমন আনন্দময় সময় উদ্যাপন করতে ৭০ কিলোমিটার দূর থেকে রেললাইনের কাছে এসেছি।’
মঙ্গলবার সকাল থেকেই মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর এলাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে উৎসুক মানুষের জটলা দেখা যায়। এ সড়ক ধরে মাওয়ার অনুষ্ঠানস্থলের দিকে এগোতে আরও বেশি মানুষের জটলা লক্ষ করা যায়।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মো. শাকিল মিয়া। তিনি বলেন, ‘গত বছর আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হয়েছে। এবার চালু হতে যাচ্ছে ট্রেন। এখন থেকে খুব সহজে, নির্বিঘ্নে বাড়িতে যাতায়াত করতে পারব। যখন খুশি তখন যাব। ট্রেন চলাচলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সাক্ষী হতে মাওয়া এলাকায় এসেছি।’
ট্রেন চলাচল দেখতে এসেছেন লৌহজং উপজেলার যশলদিয়া এলাকার ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আজকে ট্রেন চালু হবে। এটা স্বচক্ষে দেখার জন্য এখানে এসেছি। ট্রেন চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের পাশাপাশি আমারাও উপকৃত হব। খুব সহজেই মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকা এবং দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলায় যেতে পারব।’
সরেজমিনে দেখা যায়, ট্রেনে চড়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ্মা সেতু ও রেলপথ পাড়ি দেওয়ার দৃশ্য দেখতে জাজিরার নাওডোবা এলাকায় হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছেন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও অভিবাদন জানিয়ে নানান স্লোগান দিচ্ছিলেন। অনেকে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আনন্দমিছিল করতে করতে নাওডোবায় আসছেন।
নাওডোবার জমাদ্দার পরিবারের অন্তত ৪০০ বিঘা জমি পদ্মা সেতু প্রকল্প ও রেল প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ওই পরিবারের সদস্য বাদল জমাদ্দার বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করবেন, এতে আমরা খুশি। আমাদের দেওয়া জমির ওপর দিয়ে সমৃদ্ধির যাত্রাপথ নির্মাণ করা হয়েছে। সেই যাত্রাপথ ধরে প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণের পথে এগিয়ে যাবেন, এমন দৃশ্য দেখতে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছেন।’
পদ্মা সেতুর রেল লিংক প্রকল্প সূত্র জানায়, মাওয়া স্টেশন থেকে ভাঙ্গার দূরত্ব ৪২ কিলোমিটার। এর মধ্য পদ্মা সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। মাওয়া প্রান্তে মাওয়া স্টেশন থেকে সেতু পর্যন্ত ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ) ৩ দশমিক ১৫ কিলোমিটার আর শরীয়তপুর প্রান্তে সেতু থেকে শিবচরের পদ্মা স্টেশন পর্যন্ত ভায়াডাক্ট ৪ কিলোমিটার। মাওয়া স্টেশন থেকে পদ্মা স্টেশন পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৩ কিলোমিটার অংশ (ভায়াডাক্ট ও পদ্মা সেতুর অংশ) পাথরবিহীন রেলপথ।
শরীয়তপুর প্রান্তে পদ্মা সেতুর পর চার কিলোমিটার দূরত্বে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় এ প্রান্তের প্রথম স্টেশন। এর পাঁচ কিলোমিটার পর শিবচরের পাচ্চর এলাকায় শিবচর স্টেশন। এরপর ভাঙ্গা জংশন ও ভাঙ্গা পুরোনো স্টেশন।
নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের বিজয়ের ও গর্বের স্থাপনা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু করা আমাদের পরম প্রাপ্তি। আমরা হাজারো জাজিরাবাসী রেললাইনের পাশে জড়ো হয়েছি প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানানোর জন্য। এ অঞ্চলের মানুষ আপ্লুত, উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত।’
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর মানুষ যেমন এর সুফল পেয়ে ভাগ্য বদলের চেষ্টা করছেন। তেমনি রেল যোগাযোগও এ অঞ্চলের অর্থনীতেতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
(ঢাকাটাইমস/১০অক্টোবর/আরআর/কেএম)