‘খাটায় আজকে, টাকা দেয় কালকে’

রাজধানীর রামপুরার বাসিন্দা আয়নাল হোসেন, বয়স প্রায় ৪৫ বছর। মাথায় গামছা, কাঁধে কোদাল নিয়ে বসে আছেন রামপুরা কাঁচাবাজার সংলগ্ন মফিজুলের ফলের দোকানে সামনে। সঙ্গে আরও ২০-২৫ জন। সময় তখন সকাল ৮টা। তার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা টাইমসের।
আয়নাল হোসেন বলেন, ‘আমরা তো প্রতিদিনই এখানে আসি সকালে। আমাদের নিয়ে মানুষ তাদের নানা কাজে খাটায়। যাদের কাজে নিয়মিত যাই তারা খাটায় আজকে টাকা দেয় কালকে। আবার কেউ কেউ টাকা দিতে ঘুরায়।’
আয়নাল তার সংকটের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘টাকা নিয়মিত না পেলে ঝামেলা হয়ে যায়। পোলাপানের পড়ালেখার টাকা। বাপ-মায়ের ওষুধ কেনার টাকা। ঘর ভাড়ার টাকা। বাজার সদাই করতে হয়। তখন কার দুয়ারে যামু বলেন! কে আমায় টাকা দেবে।’
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজারের সামনে সরেজমিন ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
তাদেরই আরেকজন পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী খোকা হালদার। তার সঙ্গে বসে আছেন তার আরও ছোট দুই ভাই রহিম হালদার ও আইয়ুব হালদার। খোকা হালদার বলেন, ‘আমরা দিনমজুরের কাজ করি। আমার লগে জোগান দিতে আছে আমার আরও দুই ভাই। অনেকের বাড়িতে কামের লাইগা বেশি লোক লাগে। তখন আমি আমার দুই ভাই লইয়া কামে যাই।’
খোকা হালদার বলেন, ‘আমরা সবাই একলগে ঢাকায় থাকি। কিন্তু আমাগো পরিবারের বেগগুনে থাহে গেরামো। আমরা কাম কইরা শান্তি পাই আবার পাই না। অনেকে আছে কাম কইরা লগে লগে টেকা দিয়া দেয়। আবার অনেক কাইস্টা আছে টেকার দাড় ধারেনা। অগো কামে একবার গেলে আর আমরা যাই না।’
শ্রম দিবসের (১ মে) কথা জানতে চাইলে আইয়ুব হালদার বলে উঠেন, ‘শ্রম দিবস দিয়া কী করুম। কাম কইরাও মজুরি ভালা পাই না । আমাগো লাইগা কেউই ভাবে না। ভাবলে তো আর আমাগো এই দশা হইত না। এই হিটস্ট্রোকের গরমে মানুষ মইরা যাইতেছেগা। কিন্তু আমাগো লাইগা কি এমন করছে যে শ্রম দিবস পালন করুম।’
এসব শ্রমজীবীর কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তাদের অনেকেই কাজে চলে গেছেন। বসে আছেন আম্বিয়া খাতুন। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ছেলে-মেয়ে ও বৃদ্ধ বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে পূর্ব রামপুরার মোল্লা বাড়ির বাজারের কাছে কলোনির টিনশেডের একটি বাড়িতে দুই রুম নিয়ে ভাড়ায় থাকি। ভোর বেলা থাইকা আইছি। আমি অনেক কামই পারি। বাসা-বাড়ির কাম, কোদাল দিয়া মাটি কাটন থেকে শুরু করে অনেক পুরুষ মানুষের লগে জোরা দিয়া কাম করি।
আম্বিয়া খাতুন বলেন, আমার একদিন কাম বন্ধ থাকলে আমার বাচ্চারা, বুড়া বাপ-মা না খাইয়া মরবো। তাই আমি কামে যাওনের লাইগা এখানে আইছি। বইসা রইছি, কাম না মিল হইলে যেখানে ভাড়া থাকি সেইখানে বাড়ির মালিকের বাসাতে কাম করুম।’
এসব শ্রমজীবীর প্রতিদিন সকাল শুরু হয় আহার যোগানোর চিন্তায়। কোন দিন কোন কাজ দিয়ে সেদিনের আহারের ব্যবস্থা হবে তা নিজেরাও জানেন না। শরীরের ঘাম শুকানোর আগে কাজের সঠিক মূল্যায়নে ‘ন্যায্য পারিশ্রমিক’ পেলেই সন্তুষ্ট তারা।
শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে ঐতিহাসিক ‘মহান মে দিবস’ (১ মে) রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি নিয়েছে। ‘শ্রমিক মালিক গড়বো দেশ; স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বুধবার সারা দেশে মহান মে দিবস উদযাপিত হবে।
(ঢাকাটাইমস/৩০এপ্রিল/এমএইচ/কেএম)

মন্তব্য করুন