একতরফা নির্বাচন জনগণ সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করবে: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:৫০ | প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:২৭

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জনগণ রাজপথে নেমেছে অধিকার আদায়ের দুর্বার আন্দোলনে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিলে সরকারের পতন হবে। আপনারা যে তফসিল ঘোষণা করেছেন তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করুন। নির্বাচন স্থগিত করে আগে পদত্যাগ করুন। অন্যথায় এই ফরমায়েশি তফসিলে বাংলাদেশে একতরফা কোনো নির্বাচন হবে না, জনগণ সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করবে।

শনিবার বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।

সারা দেশে ইতিহাসের জঘন্যতম ভয়াবহ মামলাবাজি আর আটক-বাণিজ্য চলছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, দেশের প্রায় প্রতিটি থানা-উপজেলার দৃশ্যপট অভিন্ন। এই গায়েবি মামলা গ্রেপ্তার নিয়ে বিশ্বের গণতন্ত্রকামী দেশ, জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালেও নিশিরাতের সরকার নিজেকে রক্ষা করতে এই অপকর্মে বেপরোয়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার-বাণিজ্যের তাণ্ডবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়া গ্রামগঞ্জ, মফস্বল জনপদে কেউ বাড়িঘরে থাকতে পারছে না। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য, কাজকর্ম করতে পারছে না। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় অসংখ্য পরিবারকে খেয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। পুলিশের এখন পৌষ মাস, আর জাতির সর্বনাশ।

রিজভী বলেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের আটক করে কারো কাছ থেকে এক লাখ, কারো কাছ থেকে ৫০ হাজার, ৩০ হাজার টাকা করে নিচ্ছে। টাকা দিতে না পারলে মিথ্যা মামলায় জেলখানায় নিক্ষেপ করা হচ্ছে। দেশের জেলখানাগুলোতে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বিরোধী দলের নেতাকর্মীতে উপচে পড়ছে। মহাবিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। অনেককে আটকে রেখে মুক্তিপণ নিচ্ছে পুলিশ। নেতাকর্মীদের না পেয়ে তার আত্মীয়স্বজনকে আটক করে মারধর করছে পুলিশ। তাদেরকে গ্রেপ্তার-বাণিজ্যের লাইসেন্স দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ইতিপূর্বে নিশিরাতের সরকারের সঙ্গী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীসহ বহু আওয়ামী লীগ নেতা সাক্ষ্য দিয়েছেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। রাতের অন্ধকারে নৌকায় সীল মেরে বাক্স ভরা হয়েছিল। ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে দেশের মানুষের'। ঢাকাস্থ জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকিসহ বিদেশিরাও বলেছেন, পৃথিবীতে একমাত্র বাংলাদেশেই রাতের ভোট হয়। এবার নিজের মুখে রাতে ভোট করার মহাসত্যটি স্বীকার করে নিলেন শেখ হাসিনা।

রিজভী বলেন, সুতরাং তাদের এই স্বীকারোক্তির পর এই মুহূর্তে ভোটারদের কাছে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে। তার আর ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। শেখ হাসিনা আবারও গায়ের জোরে তার উচ্ছিষ্টভোগী সঙ্গীদের নিয়ে একতরফা ভোটহীন আরো একটি পাতানো নির্বাচনের তামাশা করছেন। ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে জনগণের ভোট ডাকাতি করে রাতের গর্ভে সরকারের জন্ম দেওয়া হয়েছিল। ২০১৪ সালে দলহীন নির্বাচনে অভিনব কায়দায় দিনে ভোট ডাকাতি করে ১৫৪ জনকে অটোপাস এমপি বানানো হয়েছিল। ভোট কেন্দ্রে কোনো ভোটার দেখা যায়নি।

আর এবার চোর-ডাকাত দিয়ে ভিন্ন কোন পন্থায় ভোটের নামে আরেকটি ভাঁওতাবাজির প্রহসন করতে মরিয়া, বেপরোয়া ও ভয়ংকর মারমুখী হয়ে উঠেছে আওয়ামী সরকার। ভোটারবিহীন নির্বাচন করার জন্য বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতে পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করে ঘৃণ্য-দূষিত বাতাবরণ তৈরি করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন কেমন হবে তা তো দেশবাসী জানে-বাঘ তার ডোরা কাটা দাগ ফেলে আসতে পারে না, বলেন রিজভী।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনা আবারো ক্ষমতায় থাকার সীলমোহর নিতে হাজার হাজার বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা প্রহরায় একটি রণক্ষেত্রের দৃশ্যপট রচনা করে তার মাঝে বসে একদলীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করিয়েছে আজ্ঞাবহ কাজী হাবিবুল আউয়ালকে দিয়ে।

রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের ফরমায়েশি তফসিল দেশের ১২ কোটি ভোটার ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। গত ১৫ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত মানুষ রাজপথে নেমেছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং একনায়ক শেখ হাসিনার পদত্যাগের ন্যায্য দাবিতে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা তার ভোট ডাকাতির পথ কন্টকমুক্ত এবং জাতীয়তাবাদী শক্তিসহ বিরোধী দল-মত ও পথে বিশ্বাসীদের নিশ্চিহ্ন করতে এক চতুর নীলনকশা অনুযায়ী বিচার-আচার-পুলিশ-প্রশাসনসহ সকল রাষ্ট্রযন্ত্রকে তালুবন্দি করে স্বৈরতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সারা দেশে এক মহা ক্র্যাকডাউন চালাচ্ছে।

রিজভী অভিযোগ করে আরও বলেন, পুলিশকে নেকড়ের মতো জনগণের ওপর লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের বিস্ময়কর অপতৎপরতায় প্রমাণিত হচ্ছে-শেখ হাসিনার সরকার একতরফা নির্বাচন ঘিরে এক সর্বনাশা নিষ্প্রাণ, নিস্তেজ পরিস্থিতি তৈরি করতে হিংস্র হয়ে উঠেছে। অতীতের মতোই সারা দেশের জনগণকে বন্দি করে, গৃহছাড়া করে ভোট ডাকাতির উৎসব সফল করতে চায়। বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা, হামলা নির্যাতন এবং পাইকারী গ্রেপ্তারের চিরুনি অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে আওয়ামী দলবাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

রিজভী বলেন, কার্যত দেশে আইনের শাসনের মূলোৎপাটন করা হয়েছে। গায়েবি মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপি নেতাকর্মীদের এখন দুঃসহ জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হচ্ছে। তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে দেওয়া হচ্ছে না, ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে তাদেরকে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। তবে এতসব করে এবার আর পার পাওয়া যাবে না।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, অবৈধ আওয়ামী সরকারের পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ হাজার-হাজার নেতাকর্মীর মুক্তিসহ চলমান আন্দোলনের একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক একতরফা নির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিলের প্রতিবাদে রবিবার (১৯ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) ভোর ৬টা পর্যন্ত মোট ৪৮ ঘণ্টা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৮নভেম্বর/জেবি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :